মহান স্বাধীনতা দিবস কাল

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৯ মাস আগে

আগামীকাল ৫৪তম স্বাধীনতা দিবস। মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদসহ যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন তাঁদেরকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ সব নেতার স্মৃতির প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। সংহতি ও সহমর্মিতা জানাচ্ছি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের পরিবার-পরিজন এবং বর্বর নৃশংসতার শিকার মা-বোনদের প্রতি।

একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে নৃশংস গণহত্যার শিকার পূর্ব বাংলার জনগণ যে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং পরবর্তী নয় মাস ধরে প্রাণপণে যে যুদ্ধ চালিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় সম্পন্ন করে, তা ছিল প্রকৃত অর্থে মুক্তিকামী বাঙালির শৃঙ্খলমুক্তির জনযুদ্ধ। কেননা, সেই যুদ্ধে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান ও সাধ্য অনুযায়ী অবদান রেখেছেন। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাঁদের কেউ কেউ শহিদ হয়েছেন। ফলে তাঁদের পরিবার-পরিজন দীর্ঘ দুঃখ-বেদনার মুখোমুখি হয়েছে, অনেক পরিবার বৈষয়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার অস্ত্র হাতে লড়াই করেননি কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন, বাংলার মাটিকে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য বিপজ্জনক ও বৈরী করে তুলেছিলেন, এমন মানুষের সংখ্যাও প্রচুর। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মানুষের পাশে ছিল সমগ্র জাতি।

বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে ‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষবার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’ দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।

সেই জনযুদ্ধের পর ৫৩ বছর পেরিয়ে গেছে, আর দুই বছর পরই আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করেছি। স্বাধীনতা দিবসে আমাদের ফিরে দেখা ও আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ আসে। যে স্বপ্ন ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তার কতটা পূরণ হয়েছে। এতে কোনো ভুল নেই, এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, মানবসম্পদ উন্নয়নের অনেক সূচকে আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র, সামগ্রিক ন্যায় ও অসাম্প্রদায়িকতা। আমাদের স্বপ্ন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সবধরনের অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্য থেকে মানুষের মুক্তি ঘটবে। বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ ও সুখী একটি রাষ্ট্র, যা পরিচালিত হবে মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনায়।

#