অটিজম বিষয়টি আমাদের সমাজের অনেকেরই গোচরিভূত। ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের কারণে এর কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বর্তমানে অনেক অভিভাবকই সচেতন। অটিজমের বৈশিষ্ট্য নিয়েই একটা শিশু মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়। অর্থা অটিজম একটা জন্মগত ব্যাপার। তাই শিশুর বয়স একটু একটু করে বাড়ার সাথে সাথে প্রকাশ পেতে থাকে এই লক্ষণগুলো। মা-বাবা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারেন অন্য শিশুদের সঙ্গে তার নিজের বাচ্চার আচরণগত সমস্যা। শিশুদের এক থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যেই অটিজমের লক্ষণগুলো ধরা যায় : এক. সমবয়সীদের সাথে না থাকা, দুই. পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ, তিন. চোখে চোখ রেখে কথা না বলা, চার. কথা বলায় জড়তা, পাঁচ. ধৈর্য কম থাকা ও ছয়. সামাজিকীকরণ অনুপস্থিত থাকবে।
বর্তমানে ভাষা সমস্যায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। অটিস্টিক অথবা অটিজম বৈকল্য শিশুরা তাদের মধ্যে অন্যতম। অটিজম হচ্ছে মস্তিষ্ক বিকাশের একটি অসম্পূর্ণ অবস্থা যেখানে একটি শিশুর মানসিক বিকাশের পাশাপাশি ভাষা বিকাশের এবং প্রকাশের অসম্পূর্ণতা লক্ষণীয়, যার দরুন অটিস্টিক শিশুরা যৌথ মনোযোগের মাধ্যমে সংজ্ঞাপন করে অনের মনোগত অবস্থাকে যেমন বুঝতে পারে না তেমনিভাবে নিজের মনোগত অবস্থাকে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে না অথবা বিলম্ব ঘটে। এর ফলে অটিষ্টিক শিশুদের মধ্যে কিছু অকার্যকর বা অনুপোযোগী আচরণ যেমনÑ বার বার পুনরাবৃত্তি, আত্মঘাতমূলক, আগ্রাসনমূলক এবং ধ্বংসাত্মক আচরণ পরিলক্ষিত হয়।
অটিজম শিশুর ভাষা বিকাশের পিতা-মাতাকে নিজের সন্তান সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। অটিস্টিক শিশু বিকাশের লক্ষ্যে পিতা-মাতা যদি নিম্নলিখিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে তাহলে ক্রমান্বয়ে শিশুর অবস্থার উন্নতি হবেÑ
এক. শিশুর সঙ্গে বেশি করে কথা বলা, দুই. শিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা, কথা বলার সময়ে তার সমান্তরালে থাকা এবং যেকোনো কিছুতেই যৌথ মনোযোগ দিন, তিন. কিছু ছোটো ও সহজ শব্দ শেখানো, চার. শেখানো শব্দ প্রতিদিন পুনরাবৃত্তি করুন ও তার সঙ্গে নতুন শব্দ শেখানোর চেষ্টা করুন ও পাঁচ. ছবি, বই, জিনিসপত্র ও শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখিয়ে জিনিস চেনানো ও কথা শেখানো।
অটিস্টিক শিশুদের পিতামাতারা অনেক ধৈর্যশীল হতে হবে। তাদের প্রতি সুন্দও, সহজ ও সরল ব্যবহার করতে হবে। কোনো কারণে অটিস্টিক শিশুরা কান্নাকাটি চেঁচামেচি করলে সাথে সাথে তাদের চাহিদা পূরণ করতে হবে। তাদের প্রতি সর্বদা হাসি, খুশি এবং চলাফেরা খেলাধুলার যেন বিঘ্ন না ঘটে তা সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে। তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। কোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এদের মধ্যে যে সুপ্তপ্রতিভা আছে সেই প্রতিভা খুঁজে বের করে বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। এজন্য বাবা, মা, অভিভাবককে অধিক যত্নশীল হতে হবে। স্কুলের শিক্ষকগণকেও একই পদ্ধতি অনুসরণ এবং অনুকরণ করতে হবে। হেলেন কেলার শিক্ষকের আদর যত্নে এবং প্রশিক্ষণে ভালো হয়ে বিশ্বকে জয় করেছিলেন। তার মতো এরাও দেশের নাগরিক। তারাও বিশ্বকে জয় করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। পারবে দেশ এবং সমাজ গঠন করতে এবং দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে। তাই, অটিস্টিক শিশুকে অবহেলা না করে তাদেরকে সেবাযত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে সক্ষম ও কর্মক্ষম করে তোলা সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিত।
লেখক : স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজিস্ট, আশার আলো, খুলনা