পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। ঈদযাত্রার প্রায় শেষ পর্যায়ে সড়ক ও রেলপথে বাড়ছে যাত্রীর চাপ। সারা বছরের মন্দা কাটিয়ে লঞ্চও পাচ্ছে যাত্রীর দেখা। তবে যাত্রীর চাপ থাকলেও এবার মহাসড়কে নেই যানজট ও দুর্ভোগ। এবার ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় বেশ আন্দন বাড়ি ফেরা মানুষের চোখে মুখে। বন্দর-স্টেশন-টার্মিনালে তাই নেই যাত্রীর উপচেপড়া ভিড়। মোটের ওপর স্বস্তিতেই চলছে ঈদযাত্রা।
গতকাল রবিবার (৭ এপ্রিল) ঢাকার সড়কে যান ও মানুষের ভিড় কম থাকার চাপ ছিল স্পষ্ট। ঈদের আঘের দিন পর্যন্ত ঢাকা ছাড়ার শেষ ঢল নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গন্তব্য ভিন্ন ভিন্ন হলেও মানুষগুলোর উদ্দেশ্য একটাই— ঈদে প্রিয়জনের কাছে ফেরা। সাধারণত বরাবরই ঈদে বাড়ি ফিরতে যাত্রীদের কমবেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। এবার তেমন চিত্র এখনো দেখা যায়নি। গাড়ির চাপ বাড়লেও উত্তরবঙ্গে যাওয়ার প্রবেশদ্বার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোথাও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তেমন ধীরগতি বা যানজটের সৃষ্টি হয়নি।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে একতা পরিবহনের এক কাউন্টার মাস্টার জানালেন, ঈদের ছুটি বেশি। যাত্রীরা ভাগে ভাগে বাড়ি যাচ্ছেন। ফলে যাত্রীর চাপ নেই। তবে এবার ঈদ হিসেবে চাপ খুব কম।
ট্রেনে যাচ্ছে দিনে দুই লাখ মানুষ
প্রতিদিন ট্রেনে করে ঢাকা ছাড়ছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। গতকাল ঢাকা ও আশপাশের স্টেশন থেকে ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ৪৪টি আন্ত নগর ট্রেনের যাত্রীসংখ্যা ৩৩ হাজার ৫০০। এ ছাড়া রয়েছে লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন। ট্রেনের ঈদ যাত্রায় গতকাল পর্যন্ত স্বস্তি ছিল। সেই অর্থে যাত্রীদের বড় কোনো ধরনের ভোগান্তির খবর পাওয়া যায়নি। ট্রেন ছাড়ার সময়সূচিতে বড় ধরনের কোনো সমস্যার খবর নেই। তবে অনেক অভিজ্ঞ যাত্রীর আশঙ্কা, আজ ও ঈদের আগের দিন রেল কর্তৃপক্ষ হয়তো এই অবস্থা ধরে রাখতে পারবে না। ঈদের ঠিক আগে গার্মেন্টস ও অন্য বহু প্রতিষ্ঠানের ছুটির কারণে কমলাপুরে ভিড় বাড়বে।
এ বিষয়ে রেলওয়ের ঢাকার বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ্ আলম কিরণ বলেন, আগামী দুই দিন ট্রেনে যাত্রীর চাপ আরো বাড়তে পারে। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এখন পর্যন্ত যেভাবে যাত্রীরা টিকিট চেকের পর প্ল্যাটফরমে ঢুকছেন, আশা করি সামনের দুই দিনেও তা বহাল থাকবে।
ভিড় নেই পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে
ঈদের প্রায় আগ মুহূর্তেও যাত্রীবাহী যানবাহনের কোনো চাপ নেই মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া এবং আরিচার কাজিরহাট নৌরুট ফেরিঘাটে। এতে স্বস্তিতে ঘরে ফিরছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে ২০টি ফেরি চলাচল করছে।
মহাসড়কে যানজট নিরসনে ড্রোন
আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে মহাসড়কের যানজট ব্যবস্থাপনায়। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় মহাসড়কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি যানজট নিরসনে কাজ করবে কথা বলা ড্রোন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় যানজট কমাতে এবার আধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে পুলিশ বহরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত ড্রোন যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ এই ড্রোনটি একবার পূর্ণ চার্জে ৩০ মিনিট আকাশে উড়তে পারবে। এতে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসমপন্ন একাধিক ক্যামেরা ও তারবিহীন স্পিকার। মহাসড়কের কোথাও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে বা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে যানজট সৃষ্টির চেষ্টা করলে ড্রোন তা শনাক্ত করতে পারবে। ড্রোনে থাকা স্পিকারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট যানটিকে পুলিশ কন্ট্রোলরুম থেকে সতর্কবার্তা বা দিকনির্দেশনা দেওয়া যাবে। ড্রোনের সাহায্যে প্রয়োজনে বাহনের নম্বর ও চালকের ছবিও সংগ্রহ করা যাবে।
ঈদ উপলক্ষ্যে ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সেগুলো হলো-গ্যাস সিলিন্ডার অথবা গ্যাসের লাইন, পানির লাইন, সব রনের লাইট, ফ্যানের সুইচ, বৈদ্যুতিক প্লাগ বন্ধ করে বের হতে হবে। বাসাবাড়িতে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরে এসে দরজা-জানালা খুলে ঘরে জমে থাকা গ্যাস বের না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই গ্যাসের চুলা জ্বালানো কিংবা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করা যাবে না। বাসাবাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। আগে বসানো সিসি ক্যামেরা সচল আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালংকার ব্যাংক কিংবা নিকটাত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে হবে।