১. মায়াবী ঘাসফড়িং
আবারও ছুঁয়েছি তোমার সীমানা প্রাচীর
ভেদ করেছি কঠোর বাঁধা হিমালয়
আবারও ছুঁয়েছি সন্ধ্যামালতি
ঝিরিঝিরি বাতাসের সন্ধ্যারাগ।
সন্ধ্যার আকাশে সন্ধ্যাতারা হয়ে
তোমার আঙিনায় এসেছি
গভীর আবেগে চোখ মেলে দেখেছ
সুরভি ছড়ানো মায়াবী কোলে রেখেছ কতো যতনে!
ফেলে এসেছি দুর্বাঘাসের ঘাসফড়িং
অন্তরীক্ষে হাজারো রঙে রাঙানো ঘুড়ি
ফেলে এসেছি সজলডাঙার
শ্যামল সোনালি গোধূলি।
তোমার ভালোবাসা, আকুলতায় ভরা প্রেম
ভুলিয়েছে বিবাগী মনের অনুশাসন
ভুলিয়েছে আমায় অভিমানের বোঝা
শিখিয়েছে প্রণয়ের সুমধুর সুর।
তুমি এক ভীষণ কবি
আমি যাযাবর ছন্নমতি
তোমার চাহনি শুনিয়েছে আমায়
নব চেতনার নির্মোহ বাণী।
তাই গেঁথে যাই যত জপোমালা
বেঁধে নিই অনুরাগের বাণী
ভালোবাসার রঙে সাজিয়ে তুলি
আমার কবিতাখানি।
২. কবিতার খাতায় একখণ্ড হৃদয়ভূমি
অঝোরে কেঁদেই চলেছে শিশুটি;
কঙ্কণের রিনিঝিনি আওয়াজ
সেও শুনেছে শৈশবে
এক প্রভাতে কান্নার রোল বাড়ি জুড়ে
হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখে
জননী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন;
সিথানে আগরবাতির ধোঁয়া,
আতরের সুবাতাস বাড়িময় জুড়ে।
ধূপগন্ধীর সেই ধূসরতায়—
সেদিন থেকে ভরে উঠল তার চারপাশ;
কঠোর জীবনযাত্রার—
কতগুলো অমীমাংসিত সন্ধ্যা পেরিয়ে পেরিয়ে
যাত্রা শুরু এক অন্ধ রাতে;
অজানা স্টেশন থেকে—
ট্রেনের বিনাটিকেটের যাত্রী হয়ে
কোনো এক ভোরবেলার অস্পষ্ট আলোয়
অচেনা এক শহরে নামলো এসে।
দিন বদলের ইঙ্গিত পেয়ে —
সেও কাব্যরসের সুগন্ধি লাভ করেছিল;
বিমূঢ় প্রার্থনার মাঝে—
নবগ্রামের সুললিত কণ্ঠের আবৃত্তি শুনে
সেও গীত বেঁধেছিল—
বিশ্বাসের মহা কোন্দল উপেক্ষা করে।
আজকে সে আর্জি নিয়ে এসেছে—
বিচারের কাঠগোলাপের বাগিচায়;
ফিরে পেতে চেয়েছে
বিমূর্ত পৃথিবীর বুকে —
সেই হারিয়ে যাওয়া অক্লান্ত বিস্মিত হওয়ার মহামায়া।
সৌজন্য সাক্ষাতে আমি জিজ্ঞেস করলাম
কী খুঁজে ফিরেছ এই জনমানবের মহাসমুদ্রে?
সে তখন হেঁচকি তুলে কেঁদেই চলেছে;
বলল সে—
কোনো এক ভুলে যাওয়া পথের বাঁকে
হারিয়ে এসেছে তার কবিতার খাতা।
ভীষণ অবসন্নতা তখন আমারও দেহজুড়ে;
তবুও জানতে চাইলাম—
কী ছিল তোমার কবিতার খাতায়?
তুমি কি স্মরণে পার আনতে?
বলল সে কাঁদতে কাঁদতে—
না, সেকি আর পারবে মনে আনতে!
পারবে কি বলতে নিরুপমার রূপে সজ্জিত
সেই ব্যথা ভরা জীবনতরীর কথা!
সেই খাতাতে নাকি একটি সমুদ্র ছিল!
তাতে টলটলে নোনা জলে ডোবা একখণ্ড হৃদয় ভূমি!
অনন্তকালের ব্যথাভরা মাঠজুড়ে আঁকড়ে ছিল
ব্যর্থ অনুরাগের বিরহী অতীত।
ছিল, নিশীথে ফোটা অলকানন্দায় জড়ানো সুরভিত বেলকনি।
অন্তরাত্মা তাই হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে এখনো —
সেই কবিতার খাতাখানি।