ই–ত্বক একটি নমনীয় ও পরিবাহী ঝিল্লি যা মস্তিষ্ক এবং পেশীতে সংবেদনশীল তথ্য প্রেরণ করতে পারে। কৃত্রিম ত্বক তৈরিতে এটি একটি সফল পদক্ষেপ।
গবেষকরা এমন একটি ইলেকট্রনিক ত্বক তৈরি করেছেন। হাত-পায়ের আঙুল, বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খোঁচা বা চুলকানি হলে যেমন নড়াচড়া করে, তেমন এ ত্বক সংবেদনশীল সাড়া দিতে পারবে। কৃত্রিম ত্বকের এ প্রযুক্তি পরিধানকারীদের স্পর্শের অনুভূতি দিতে সক্ষম হবে, ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত যে কেউ এ ই-ত্বক ব্যবহারের মাধ্যমে সংবেদনশীলতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির রাসায়নিক প্রকৌশলী ‘জেনান বাও’-এর গবেষণাগারে ‘ই-স্কিন’ তৈরি করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে এ গবেষক দলটি দীর্ঘদিন ধরে একটি কৃত্রিম ত্বক তৈরি করার চেষ্টা করছে। এ ইলেকট্রনিক ত্বক নরম ও নমনীয়; মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠাতে পারে এবং এ ত্বক পরিধানকারীকে চাপ, স্ট্রেন বা তাপমাত্রার পরিবর্তনগুলো ‘অনুভব’ করতে দিবে। সর্বশেষ এ কাজটি নরম ও নমনীয় সেন্সর যা একটি ইঁদুরের মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্সের অংশে একটি সংকেত প্রেরণ করতে পারে এবং এ ই-ত্বকটি চেপে ধরা হলে প্রাণীর পা মোচড় দেয়। বাও বলেন, ‘ই-ত্বকে সত্যিই এমন সমস্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আমরা ভাবছি এবং আমরা দীর্ঘদিন ধরে এটি সম্পর্কে কথা বলছি।’
সংবেদনশীল ত্বক :
সুস্থ জীবন্ত ত্বকে, যান্ত্রিক রিসেপ্টরগুলো তথ্য অনুধাবন করে এবং এটিকে বৈদ্যুতিক স্পন্দনে রূপান্তরিত করে; যা স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মস্তিষ্কে তথ্য প্রেরণ করে। সে পদ্ধতি অনুসরণ করে ইলেকট্রনিক ত্বক তৈরি করা হয়েছে। এ ত্বকে সেন্সর এবং সমন্বিত সার্কিট প্রয়োজন, যা সাধারণত শক্ত অর্ধপরিবাহী থেকে তৈরি হয়। নমনীয় ইলেকট্রনিক সিস্টেমের পরিধানযোগ্য ডিভাইসগুলো উচ্চ ভোল্টেজে অনিরাপদ হবে।
তাই বাও-এর গবেষক দল নরম ই-স্কিন তৈরি করতে আস্তরক হিসেবে ব্যবহারের জন্য একটি নমনীয় পলিমার তৈরি করেছে। এটি সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইসে একটি পাতলা স্তর যা ডিভাইসটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সংকেতের শক্তি এবং ভোল্টেজ নির্ধারণ করে।
বাও বলেন, আমরা সমস্ত অনমনীয় উপাদানকে নরম উপকরণে পরিণত করেছি যখন এখনও উচ্চ বৈদ্যুতিক কর্মক্ষমতা থাকতে সক্ষম হয়েছি।
এ সেন্সরটি শারীরিক পরিবর্তন, যেমন চাপ বা তাপমাত্রার পরিবর্তনকে বৈদ্যুতিক সংকেতে পরিণত করতে পারে। গবেষক দলটি এমন একটি ডিভাইসও তৈরি করেছে যা স্নায়ুতন্ত্রের সংযোগগুলোকে অনুকরণ করে স্নায়ু থেকে পেশীতে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ করতে পারে।
বাও-এর গবেষক দলটি ইঁদুরে এ প্রযুক্তিটির পরীক্ষা করেছে। এ ই-ত্বক তারের মাধ্যমে ইঁদুরের সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সের সাথে সংযুক্ত করে মস্তিষ্কের অংশ এবং যা ইঁদুরের শরীরে সংবেদনশীলতা সৃষ্টির প্রক্রিয়াকরণে কাজ করে। যখন ইলেকট্রনিক ত্বক স্পর্শ করে, তখন এটি মস্তিষ্কে একটি বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠায়, যা প্রাণীর পায়ের স্নায়ুতে প্রেরণ করা হয়, যার ফলে অঙ্গটি নড়াচড়া করে।
ভবিষ্যতে উন্নয়ন :
এই ধরনের ই-স্কিন এমন লোকেদের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে যারা বড় আঘাত পেয়েছেন, বা যাদেও সংবেদনশীল ব্যাধি রয়েছে। বাও বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ প্রযুক্তির আরো বিকাশ ঘটবে। যারা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের মস্তিষ্কে কোনো ডিভাইস ইমপ্লান্ট করতে হবে না। এ ই-ত্বক প্রযুক্তি পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রে ইমপ্লান্ট করতে পারব। বাও বলেন, ই-ত্বকে এখনও একটি বাহ্যিক শক্তির উৎেসর সঙ্গে সংযুক্ত করা আবশ্যক। তবে হাতের সমস্ত আঙ্গুল ঢেকে রেখে স্পর্শ, তাপমাত্রা এবং চাপে সাড়া দেয়; এমন ত্বকের জন্য আরও অনেক বেশি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আলেজান্দ্রো কার্নিসার-লম্বার্ট যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, বাও-এর গবেষক দলের তৈরি ডিভাইসটি অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। কিন্তু কৃত্রিম ত্বকের ক্ষেত্রে অনেক পৃথক উপাদান বাও-এর দল একটি সমন্বিত সিস্টেমে নিয়ে এসেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তি আরো উপযোগিতা সৃষ্টি করবে।
(মূল : ক্যাথেরিন স্যান্ডারসন, নেচার; অনুবাদ : ইমামুল ইসলাম)