বেশ লম্বা সময় নিয়ে অসাধারণ একটি বই পড়লাম। লিখেছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। বইটি যখন প্রকাশিত হয় তখন তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। করোনা মহামারীর তীব্র প্রকোপের সময় তিনি জাতীয় পত্রিকার জন্য বিভিন্ন নিবন্ধ লিখেছিলেন। সেগুলো থেকে বাছাইকৃত কলাম নিয়ে এই বইটি। প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স।
বক্ষ্যমাণ এই বইটিতে সংকলিত হয়েছে ১৪টি নিবন্ধ। ১. আইনের শাসন ও বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, ২. উচ্চতর আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার : সমস্যা ও সমাধান, ৩. বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীগণ, অবিচল আস্থা ও আনুগত্যের বন্ধন, ৪. এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার, ৫. ব্রিগেডিয়ার ক্লের-এর চিঠি : এর জবাব ও একজন মুক্তিযোদ্ধার জবানবন্দী, ৬. স্মরণে শৈলজারঞ্জন মজুমদার ও হুমায়ুন আহমেদ, ৭. বঙ্গবন্ধু : বজ্রকণ্ঠের নম্র মানুষ, ৮. বাবাকে স্মরণ : ‘তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম’, ৯. অবশেষে স্যার চলেই গেলেন, ১০. বাংলাদেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের ১০ বছর, ১১. আমি ও আমার প্রিয় শহর ঢাকা, ১২. আইনের শাসন, যুদ্ধাপরাধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে শেখ হাসিনা, ১৩. মুক্তিযুদ্ধে নারী ও একজন যুদ্ধশিশুর অসমাপ্ত যুদ্ধ, এবং ১৪. স্বাধীনতার পটভূমি, বঙ্গবন্ধু ও একটি পত্রালাপ- শিরোনামগুলো পড়লেই অনুভব করা যায় যে লেখক সমকালের গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন, যার অধিকাংশের সাথে তাঁর অংশগ্রহণ এবং অভিজ্ঞতা যুক্ত। অর্থাৎ নিবন্ধগুলো তিনি সাজিয়েছেন তাঁর আহরিত জ্ঞান এবং ব্যক্তিগত/প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের আলোকে।
মূল আলোচনায় প্রবেশের আগে শ্রদ্ধেয় কয়েকজন বিচারপতির লেখালেখি নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই। বাংলাদেশের আলোকে গাজী শামছুর রহমান এবং বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান দুজন কৃতবিদ্য পণ্ডিতপ্রবর মানুষকে আমরা পেয়েছি যাঁরা বিচিত্র বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেছেন। শেষের জন ‘কোরানসূত্র’ এবং ‘যথাশব্দ’ নামে দুটো গুরুত্বপূর্ণ বই আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন, যা বহুকাল ধরে বাংলাদেশের পাঠক সমাজের কাছে বহুল চর্চিত। গাজী শামছুর রহমানের ‘নজরুলের বিচার’ এবং ‘আদালতের কৌতুক’ গ্রন্থদুটিও বেশ পাঠকপ্রিয়। টোকিও ট্রায়াল নিয়ে বিচারপতি রাধাবিনোদ পালের রায়টিও পড়ার মতো একটি বই। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আরো দুটো শ্রমলব্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র : একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’ শিরোনামে একটি, অন্যটি ‘বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ শিরোনামে। তার ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র পরিস্ফুটিত হয়েছে সেখানে। এই বইটি নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং মরহুম অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। অতীতে বিচারপতি আবু সাদাত মুহম্মদ সায়েম এবং বিচারপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরী নিজেদের আত্মকথা লিখেছেন, সেগুলো ব্যাপকভাবে পাঠকের চোখে না পড়লেও ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি এম আর কায়ানির লেখা ‘নট দ্য হোল ট্রুথ’ এই উপমহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা হিসেবে স্বীকৃত। প্রথম প্রকাশের পর বইটি বিপুল আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছিলো।
বইটিতে প্রথমেই যে রচনাটি স্থান পেয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর আইনের শাসন সম্পর্কে লিখতে গিয়ে তিনি ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টো থেকে বেশকিছু উদ্ধৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশ ডকুমেন্টস থেকে সংকলিত লেখকের নিজস্ব অনুবাদ। সেখানে এক জায়গায় পাই : ‘রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার, যেমন বাক-স্বাধীনতার অধিকার, অবাধ চলাফেরা, ধর্ম পালনের স্বাধীনতাসহ অন্যান্য সকল মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করবে। বিধি-বহির্ভূতভাবে কাউকেই আটকাদেশের আওতায় আনা যাবে না।’ এবং অন্যত্র : ‘নাগরিকের কোনো মৌলিক অধিকারই রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনের অজুহাতে বাতিল করা যাবে না।’
এ ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের উদ্বোধন লগ্নে জাতির পিতা যে অবিস্মরণীয় বক্তব্য রেখেছিলেন সেটিও স্মরণ করা যেতে পারে : ‘দেশে আইনের শাসন কায়েম হবে। কারণ, আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। এই জন্যে আমরা সংগ্রাম করেছি রক্ত দিয়েছি। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যেই আমরা তাড়াতাড়ি সংবিধান দিয়েছি। তা না-হলে আমরা আরো অনেকদিন ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। ক্ষমতার জন্য আমরা রাজনীতি করি নাই। রাজনীতি করেছি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে।’ আইনের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবিচল ভক্তির নিদর্শন এই বক্তব্য। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান মেদহীন গদ্যে নিকট ইতিহাস থেকে অনেক উপাদান সংগ্রহ করে প্রতিটি কলাম উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তাঁর এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই।
অন্যদিকে ইতিহাস, অর্থনীতি এবং পিতার দর্শন নিয়ে স্মৃতিকথামূলক একটি অনন্য রচনা ‘আমি ও আমার প্রিয় শহর ঢাকা’। লেখাটি শুরু হয়েছে বইয়ের ৮৮ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে। কিশোর মনের নানাবিধ কল্পনা। অনুভূতি, স্বপ্ন, সর্বোপরি তার খ্যাতনামা পিতার দর্শন- সব মিলিয়ে রচনাটি কালোত্তীর্ণ ও পরিশীলিত। কৈশোর থেকে তারুণ্যে পদার্পণ করে নটরডেম কলেজে অধ্যয়নের সময়টুকু দুর্দান্তভাবে বয়ান করেছেন তিনি। সেসময়ের ঢাকার একটা চিত্র (picturesque) বেশ নৈপুণ্যের সাথে এঁকেছেন তিনি। আজকের দুর্লভ দেশি কৈ মাছ, দেশি রুই মাছ, দেশি প্রাকৃতিক আইর মাছের ৭০ দশকের মূল্য দেখে অনেকেরই চোখ ছানাবড়া হতে বাধ্য। তবে পাশাপাশি এটিও সত্য তখন মূল্য কম থাকলেও সবাই এসব মাছ খেতে পারতো না। আজকে অনেক দাম দিয়ে হলেও মানুষ কিনতে পারছে। অর্থাৎ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা অনেক গুণ বেড়েছে। তিনি জানাচ্ছেন যে সেসময় ভালো কেক-পেস্ট্রি খাওয়ার ইচ্ছে হলে পূর্বাণী হোটেল ছাড়া অন্য কোথাও সহজলভ্য হতো না। আর আজ প্রতিটি অলি-গলিতে বাহারী সব প্যাটিসারির দোকান! ৭০ দশকের পর ঢাকার দ্রুত রূপবদলের (fast changing cityscapes) চিত্রটি এই নিবন্ধে এঁকেছেন তিনি।
একজন আইনবিদ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। ২০১২ সালের মার্চে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য হন এবং একই বছরের ডিসেম্বরে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত দক্ষতা এবং বিচক্ষণতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর লেখালেখিতে দীর্ঘ দায়িত্বপূর্ণ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা পালন করেছে বিস্তর ভূমিকা। বইটিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে একটি নিবন্ধ আছে, যা প্রত্যেকের পড়বার মতো। নিবন্ধটি শুরু হয়েছে বইয়ের ৮১ নম্বর পৃষ্ঠায়, শেষ হয়েছে ৮৭ পৃষ্ঠায়।
এতদ্বিষয়ে আলোচনার শুরুতে সংক্ষেপে এই আদালত সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করতে চাই। আমরা জানি যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার বিষয়ে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশে বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মাঝে ব্যাপক সচেতনতার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই গণদাবি অন্তর্ভুক্ত করে। ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয় লাভ করার পর পরই নির্বাচিত দল আওয়ামী লীগ কর্তৃক গঠিত সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরপর ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়।
বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীসহ সিনিয়র সংসদ সদস্যগণ প্রস্তাবটিকে সমর্থন জানালে স্পিকার তা অনুমোদন দেওয়া হবে কিনা এই প্রশ্ন ভোটে নেন। মৌখিক ভোটে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
সংসদে গৃহীত প্রস্তাবের বাস্তবায়নে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুযায়ী অভিযুক্তদের তদন্ত এবং বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত ঘোষণাটি আসে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ এবং শীর্ষ আইনজীবীদের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে সরকার ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার ২০০৯ সালের ২১ মে বিশেষজ্ঞদের মতামত চেয়ে ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টটি আইন কমিশনে পাঠায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইন কমিশন দেশের বিশেষজ্ঞ আইনজীবী, বিচারপতি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আরো কয়েকজন আইনজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালে প্রণীত উক্ত আইনে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে সংশোধন আনার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়। অতঃপর আইন কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা করে ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনকে যুগোপযোগী করার জন্য ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর কিছু সংশোধনী জাতীয় সংসদে মৌখিক ভোটে পাশ করা হয়।
সংশোধনীর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীকেও বিচারের আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা এবং ‘ট্রাইব্যুনাল স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করবে’ এই মর্মে সুস্পষ্ট আইনগত বিধান সন্নিবেশ করাসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়। অবশেষে স্বাধীনতা লাভের ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার এবং তাদের অপরাধের বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয় ট্রাইব্যুনাল। বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুরাতন হাইকোর্ট ভবনকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে স্বাধীনতার ৩৮ বছর কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রয়োজন পড়েছিলো? এটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর একটি ঢালাও অভিযোগ। ইতিহাস বলে যে নাজিবাদের সমর্থক ফরাসি পুলিশ কর্তা মরিস পাপন, জার্মান জন ডেমজানজুক, জার্মান হেনরিখ বোরে প্রমুখের বিচার অপরাধ সংঘটনের দীর্ঘ ৫০-৬০ বছর পরেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী মরিস পাপন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফরাসি সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। জিসকার দেস্তাঁ প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি বাজেট মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্যা গলের হাত থেকে সম্মানসূচক লিজিয়ঁ ডি অনার খেতাবও পেয়েছিলেন। অথচ এই দ্য গলকে হটিয়ে ফ্রান্সে হিটলার সমর্থক মার্শাল ফিলিপ পেতাঁ ক্ষমতা দখল করেছিলো। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মহানায়ক ফিলিপ পেতাঁ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভিলেনে পরিণত হন। মরিস পাপন ছিলেন তারই অনুসারী।
কিন্তু সব এলোমেলো করে দিল ফরাসি পত্রিকা Le Canard enchaîné। ওদের এক প্রতিবেদক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু ডকুমেন্ট প্রকাশ করলে মরিস পাপনের ইহুদি নিধনের নীল-নকশা ফাঁস হয়ে যায়। দীর্ঘ তদন্তের পর ৮৭ বছর বয়সী মরিস পাপনকে জেলে নেওয়া হয়। আর জার্মান যুদ্ধাপরাধী জন ডেমজানজুককে যখন রায় পড়ে শুনানো হয় তখন তার বয়স ৯১। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অনেক অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এই নিবন্ধটি লিখেছেন।
আগে এক লেখায় উল্লেখ করেছিলাম যে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে বাজারে অনেক অনেক বই পাওয়া যায়। অধিকাংশ লেখকই অজ্ঞাতকুলশীল। অনেক বই স্পর্শ করার মতো নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য সেসব লেখায় বঙ্গবন্ধুকে পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায়, তা চর্বিত চর্বণ। সুনির্দিষ্ট মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ কিছুই নেই। এক বই থেকে যেন শত বই লেখা হয়েছে। সাল, তারিখ, কর্মসূচি অভ্রান্ত নয়। অনেক বই পাঠে মনে হয়েছে, এগুলো বাতিল করা উচিত। কিন্তু এই বইটি ব্যতিক্রম। এটি পাঠককে ঋদ্ধ করবে, চিন্তাসূত্র ধরিয়ে দিবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে এবং বুঝতে সহায়তা করবে।
লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ দায়েরকারী