একজন শেরে বাংলা। বাংলার মানুষের মুক্তির সাহসী বাঘ। অন্যজন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গজনার মানুষের বন্ধু। দুজনই বাঙালির কাছের মানুষ, অধিকার আদায়ের মানুষ। বাঙালি মুসলমানের কাছে অভাবিত জনপ্রিয় নেতা। দুজনের কর্মপরিধির মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল। কিন্তু যে কাজ ও কর্মপরিধির সূচনা করে গিয়েছিলেন শেরে বাংলা, সে কর্মপরিধির সমাপ্ত হয় বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৭ সালে কারাগারে বসে যে কথা লিখেছিলেন, তা আজ ইতিহাস বিনির্মাণে অকাট্য সত্য। ১৯৬৭ সালে ২৭ মার্চ জেলে বসে লিখেন, ‘আজ ২৭ শে এপ্রিল শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। পাঁচ বছর পূর্বে (১৯৬২) যখন তিনি মারা যান সেদিনও আমি জেলে ছিলাম।’ বঙ্গবন্ধু রাজনীতির গুরু হিসেবে মান্য করতেন অধিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। কিন্তু শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের হাত ধরেই বঙ্গবন্ধু প্রথম মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। শেরে বাংলা যে লাহোর প্রস্তাব ঘোষণা করেছিলেন, তার সূত্র ধরেই বারবার অগ্রসর হয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিব লিখেন, ‘হক সাহেব ছিলেন পূর্ববাংলার মাটির মানুষ এবং পূর্ববাংলার মনের মানুষ। মানুষ তাঁহাকে ভালোবাসত এবং ভালোবাসে। যত দিন বাংলার মাটি থাকবে বাঙালি তাকে ভালোবাসবে।’
বঙ্গবন্ধু তখন ১৮ বছরের তরুণ। মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থী। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের শেরে বাংলার বিপুল বিজয়ের খবর সারা বাংলার মুসলমানকে আনন্দিত করে। গোপালগঞ্জের তরুণ শেখ মুজিবও শেরে বাংলার জনপ্রিয়তায় মোহাচ্ছন্ন। কীভাবে তরুণ শেখ মুজিব প্রথম শেরে বাংলার সান্নিধ্য পান সে বর্ণনা তিনি তার আত্মজীবনীতে দিয়েছেন। ১৯৩৮ সালে বাংলার প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জ সফরে আসেন। সঙ্গে তার মন্ত্রিসভার শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহারাওয়ার্দী। উভয়ের সঙ্গে শেখ মুজিবের দেখা হয়। এ দুই নেতা তরুণ শেখ মুজিবের মনে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছিল। সে বছরই একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনার জের ধরে শেখ মুজিবের জেলজীবনের সূচনা হয়। এর পরের বছরই শেখ মুজিব টুঙ্গিপাড়া থেকে সেকালের রাজধানী কলকাতায় গিয়ে হাজির হন। তবে ১৯৪১ সালে মেট্রিক পাস করে শেখ মুজিব চূড়ান্তভাবে কলকাতায় যান। ইসলামীয়া কলেজে ভর্তি হন। ঠাই হয় মুসলমান ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ বেকার হোস্টেলে (স্যার অ্যাডওয়ার্ড ন্যারম্যান বেকার)। কলেজটি শেরে বাংলা যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তার একান্ত প্রচেষ্টায় সমৃদ্ধি লাভ করে। শেখ মুজিবের রাজনীতির হাতেখড়ি শুরু হয় এ কলেজ থেকেই।
শেরে বাংলা ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি অসাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠার পেছনে দুটি কৃতি বাঙালি অবদান অধিক। একজন এ শেরে বাংলা, অন্যজন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৪০ সাল থেকেই মুসলমানদের আলাদা আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন-দাবি পাকিস্তান আন্দোলন নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে শেরে বাংলার সঙ্গে মুসলিম লীগের সভাপতি মুহম্মদ আলী জিন্নাহর মতানৈক্য দেখা দেয়। এই জের ধরে শেরে বাংলাকে মুসলিম লীগ থেকে একপ্রকার বহিষ্কার করা হয়। তারপর তিনি রাজনীতি থেকে অনেকটা ছিটকে পড়েন। প্রচার করা হয় যে শেরে বাংলা পাকিস্তান চান না। পাকিস্তান দাবির জন্য বাঙালি মুসলমান ততদিনে মাতোয়ারা। শেখ মুজিবও বিভিন্ন স্থানে জনসভা করে পাকিস্তান দাবির পক্ষে জনমত তৈরি করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেন শেরে বাংলা পাকিস্তান চায় না- এর জন্য শেখ মুজিব জনসভার বক্তৃতায় সমালোচনা করেন, কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল মুসলিম সমাজে এবং তার পরিবারে- এর একটি নির্মোহ বর্ণনা করেন শেখ মুজিব নিজেই। তার আত্মকথায় শেখ মুজিব লিখেন। এই সময় একদিন শেখ মুজিব তার বাবা শেখ লুৎফর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি ও পাকিস্তান আন্দোলন নিয়ে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে শেরে বাংলার কথা উঠল। আকর্ষণীয় কথোপকথনটি এ রূপ ‘আব্বা আমার আলোচনা শুনে খুশি হলেন। শুধু বললেন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ না করতে। একদিন আমার মাও আমাকে বলছিলেন, ‘বাবা যাহাই কর, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছু বলিও না। শেরে বাংলা মিছামিছিই শেরে বাংলা হন নাই। বাংলার মাটি তাকে ভালোবেসে ফেলেছিল।’
পরের কথাটি আর উদ্দীপনাপূর্ণ। কীভাবে একজন নেতা তার পূর্বসূরিকে শ্রদ্ধাভরে মূল্যায়ন করেছেন, তার একটি উদাহরণ পাওয়া যায়। অথচ বিষয়টি এমন নয়, শেরে বাংলার রাজনৈতিক মতাদর্শে কিংবা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কখনো যুক্ত ছিলেন। তিনি লিখেন, “যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেছি, তখনই বাধা পেয়েছি। একদিন আমার মনে আছে একটা সভা করেছিলাম আমার ইউনিয়নে, হক সাহেব কেন লীগ ত্যাগ করলেন, কেন পাকিস্তান চান না এখন? কেন তিনি শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির সাথে মিলে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন? এসব আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ এক বৃদ্ধলোক যিনি আমার দাদার খুব ভক্ত, দাঁড়িয়ে বললেন, ‘যাহা কিছু বলার বলেন, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলবেন না। তিনি যদি পাকিস্তান না চান, আমরাও চাই না। জিন্নাহ কে? তার নামও তো শুনি নাই। আমাদের গরিবের বন্ধু হক সাহেব। এ কথার পর আমি অন্যভাবে বক্তৃতা দিতে শুরু করলাম। শুধু এই টুকুই না, যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কালো পতাকা দেখাতে গিয়েছি, তখনই জনসাধারণ আমাদের মারপিঠ করেছে। অনেক সময় ছাত্রদের নিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি, মার খেয়ে।”
উপরোক্ত মন্তব্য যেমন শেখ মুজিবের রাজনৈতিক উদারতার পরিচয় মেলে ধরে, পাশাপাশি গ্রামীণ প্রান্তিক জনগণের কাছে শেরে বাংলার জনপ্রিয়তা কতটুকু ছিল, তা উপলব্ধি করা যায়। বয়সের দিক দিয়ে একজন বাঙালি প্রবীণ নেতা (জন্ম ১৮৭৩) আর একজন নবীন (জন্ম ১৯২০)। একজন নানা, অন্যজন নাতিÑ এ বলেই দুজনের মধ্যে খুনসুটি হতো। শেরে বাংলা এ নাতির ওপর বাংলার রাজনীতির অপার সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন। মজা করে বলতেনও ‘আমি বুড়া, তুই গুঁড়া।’
শেরে বাংলার লাহোর প্রস্তাব বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছিল, যা তার পরবর্তী রাজনৈতিক পথচলা থেকে জানা যায়। মুসলিম লীগের রাজনীতি দিয়ে শেখ মুজিবের যাত্রা শুরু। মুসলিম লীগ বাংলার মুসলিম জনতার কাছে জনপ্রিয় এবং সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠে চল্লিশের দশকে, যখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাসিম এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে সময়টায় কলকাতার মুসলিম ছাত্রলীগের ছাত্র নেতা হয়ে রাজনীতিতে আবির্ভূত হন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান। এরই মধ্যে শেরে বাংলা মুসলিম লীগের শত্রু বলে প্রচার হতে থাকে। সোহরাওয়ার্দী সমর্থক ছাত্রনেতারাও তাকে এড়িয়ে চলেন। একদিন মুসলমান ছাত্র নেতাদের আমন্ত্রণ জানান শেরে বাংলা। শেখ মুজিবের উদ্যোগে শেরে বাংলার কলকাতার বাড়িতে তারা হাজির হন। বিষয়টি মুসলিম লীগের নেতারা কীভাবে নেবেন—এ নিয়ে ভয় ও সংশয়ে ছিলেন ছাত্র নেতারা, কিন্তু শেখ মুজিব ছিলেন যেমন দৃঢ়চেতা, তেমনি গণতান্ত্রিক। রাজনৈতিক সহনশীলতাও ছিল। তিনি লিখেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমি বললাম কেন যাব না, নিশ্চয়ই যাব। হক সাহেবকে অনুরোধ করব মুসলিম লীগে ফিরে আসতে। আমাদের আদর্শ যদি এত হালকা হয় যে তার কাছে গেলেই আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলে যাব, তাহলে সে পাকিস্তান আন্দোলন আমাদের না করাই উচিত।’ ছাত্রনেতারা শেরে বাংলার বাসায় গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি লীগ ত্যাগ করেননি। তাকে লীগ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। জিন্নাহ তার জনপ্রিয়তাকে সহ্য করতে পারেননি। তিনি আরো জানালেন, তিনিই লাহোর প্রস্তাব ঘোষণা করেছেন এবং জিন্নাহকে কে চিনত।’
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে পাকিস্তান স্বাধীন হয়, কিন্তু লাহোর প্রস্তাব আর বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘ ২৩ বছর বাঙালি লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশ স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র এবং পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবিতে সংগ্রাম করেছে। দেখা যায় ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের যুক্তফ্রন্ট জোট যে ২১ দফা দাবিসংবলিত ইশতেহার ঘোষণা করে, সেখানে ১৯ নং দফায় বলা হয় ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌম করা হইবে।’ একযুগ পর ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ছয়দফা ঘোষণা করেন। বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার প্রথম দফাই ছিল লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন।
১৯৫৪ সাালে ঘোষিত হলো প্রাদেশিক সাধারণ নির্বাচন। এবার এগিয়ে এলেন শেরে বাংলা। এরই মধ্যে ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগ ভেঙে সৃষ্টি হলো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্য গঠনে ব্যাপক তৎপরতা চালান শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৩ সালের কথা। প্রথমে শেখ মুজিব দেখা করেন শেরে বাংলার সঙ্গে। শেরে বাংলা পাকিস্তান স্বাধীনের পর আর কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করেননি। শেখ মুজিব অনুরোধ করেন তাকে আওয়ামী লীগে যোগদানের জন্য। তাকে চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আত্মজীবনীতে লিখেন, ‘জনসভায় তিনি ঘোষণা করেন, ‘যারা চুরি করবেন তারা মুসলিম লীগে থাকুন, আর যারা ভালো কাজ করবেন তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করুন।’ তারপর আমাকে ধরে জনসভায় বলেন, ‘মুজিব যা বলে তা আপনারা শুনুন। আমি বেশি বক্তৃতা করতে পারব না, বুড়া মানুষ।’ নানা কারণে তিনি আর আওয়ামী লীগে যোগদান করেননি। কেন করেননি সে কথা বঙ্গবন্ধুর বিবরণীতেই আছে। শেরে বাংলা তার আগের রাজনৈতিক দলটি নতুন নামে আবার গড়ে তোলেন। এবার নাম দেয়া হয় ‘কৃষক শ্রমিক পার্টি’। ব্রিটিশ পর্বের ‘প্রজা’ সংগত কারণেই আর থাকল না। এবার একত্রিত হলেন শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী আর জননেতা ভাসানী। গড়ে তোলেন মুসলিম লীগবিরোধী নির্বাচনী ঐক্যজোট। নাম দেয়া হলো যুক্তফ্রন্ট। চারটি দলের মিলিত যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলেও তা ‘হক সোহরাওয়ার্দী-ভাসানী জোট’ বলেই পরিচিতি লাভ করে। আবারোর ক্ষমতাসীন লীগের বিরুদ্ধে হক সাহেবের বিপুল জয়। ভরাডুবি হলো মুসলিম লীগের। যে দলটির নেতৃত্বে মাত্র সাত বছর আগে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা নিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল।
যুক্তফ্রন্ট সরকার অল্প দিন ক্ষমতায় ছিল। সকলের হক সাহেব ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তখন বৃদ্ধ, বয়স ৮১, আর শেখ মুজিব কনিষ্ঠ, বয়স ৩৪। যুক্তফ্রন্টের সময়ই শেখ মুজিব শেরে বাংলার অধিক সান্নিধ্যে আসেন। শেরে বাংলা শেখ মুজিবকে স্নেহ করতেন। বলতেন, ‘আমি বুড়া, তুই গুঁড়া। তাই আমি নানা, তুই নাতি।’ মন্ত্রী হওয়ার পর সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু লিখেন, তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। দরকার না হলেও ডেকে পাঠাতেন। তিনি খবরের কাগজের প্রতিনিধিদের বলেছেন, ‘আমি বুড়া আর মুজিব গুঁড়া, তাই ওর আমি নানা ও আমার নাতি। তিনি আমাকে যে কাজের কথাই বলতেন আমি তা করতাম। তার মনটা উদার ছিল, যে কারণে তাকে আমি ভক্তি করতে শুরু করলাম।’ যুক্তফ্রন্টের বিজয়কে শাসকগোষ্ঠী এবং অবাঙালি আমলারা গ্রহণ করতে পারেনি। এরা এ বিজয়কে বাঙালি জাতীয়াবাদের উত্থান বলে আতঙ্কবোধ করে।
শেরে বাংলা সর্বশেষ গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তার নেতৃত্বে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সংবিধান প্রণীত হয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া নতুন সংবিধানে। রাষ্ট্রভাষা দাবি পূরণ হয় ১৯৫৬ সালে। কিন্তু সাংবিধানিক সুখ পাকিস্তানের কপালে বেশি দিন সইল না। সামরিক, বেসামরিক আমলানির্ভর রাষ্ট্র গণতন্ত্র ও সংবিধান মানে না। দুই বছর পরই সারা পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি হয়। শেখ মুজিবসহ রাজনৈতিক নেতাদের জেলে পাঠানো হয়। মোহম্মদ আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে ১৯৬১ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ছাত্র-শিক্ষক এ মহান নেতাকে বিপুলভাবে সংবর্ধনা জানান। সেটাই ছিল হক সাহেবের সর্বশেষ কোনো সভায় যোগদান। ১৯৬২ সালের মার্চে বাংলার বাঘ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক মাস ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থেকে ২৭ এপ্রিল শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘ রাজনীতির জীবনে শেরে বাংলা বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে বীজ বপন করে যান, তা বাস্তবে রূপদান করেন তার ‘গুঁড়া নাতি’ বঙ্গবন্ধু।
লেখক : অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়