চাঁদের সবচেয়ে আপটেড ম্যাপ সংকলন করেছে চীন

: বিজ্ঞান ডেস্ক : নেচার অবলম্বনে
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (সিএএস) এখন পর্যন্ত চাঁদের সর্বোচ্চ রেজোলিউশনের ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র প্রকাশ করেছে। এক দশক ধরে একশো জনেরও বেশি গবেষক লুনার গ্লোবের জিওলজিক ম্যাপ সংকলন করেছে যাতে মোট ১০৩৪১টি গর্ত, ৮১টি অববাহিকা এবং ১৭ ধরনের শিলাসহ চন্দ্রপৃষ্ঠের অন্যান্য মৌলিক ভূতাত্ত্বিক তথ্যের সঙ্গে প্রকাশ করে৷

বেইজিংয়ের সিএএস ইনস্টিটিউট অফ জিওলজি অ্যান্ড জিওফিজিক্সের ভূ-পদার্থবিদ রস মিচেল বলেছেন, ভূতত্ত্বের প্রতিটি প্রশ্ন একটি ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে শুরু হয়। চাঁদের নতুন এ  মানচিত্র সত্যিই বিশ্বের জন্য একটি সম্পদ।

জিয়ানঝং লিউ ভূ-রসায়নবিদ এবং প্রকল্পের সহনেতা। তিনি বলেছেন,  বিদ্যমান চাঁদের মানচিত্র তা মূলত ষাট ও সত্তর দশকের। মার্কিন অ্যাপোলো মিশন থেকে পাওয়া উপাত্ত ব্যবহার করে চাঁদের অনেক ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে।  তিনি বলেছেন, এ উপাত্ত থেকে চাঁদ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু সেই মানচিত্রগুলো ভবিষ্যতের চন্দ্র গবেষণা ও অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে না।

চীন তার চাঁদ অভিযানের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করার জন্য মানচিত্রগুলো ব্যবহার করবে;  অন্যান্য দেশের জন্য এ মানচিত্রগুলো দরকারি হবে; এর কারণ তারা যাতে চাঁদে নিজস্ব অভিযান পরিচালনা করতে পারে। এ বছর চীন তিনটি মহাকাশযান চাঁদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে চীন চাঁদের দূরের দিক থেকে পাথর সংগ্রহ করতে আনতে পারে।

লিউ বলেছেন, আপডেট এ ম্যাপের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা চাঁদের ইতিহাস আরও ভালভাবে বুঝতে পারে, সম্ভাব্য চাঁদের সম্পদের মূল্যায়ন করতে পারে এবং তুলনামূলক ভূতাত্ত্বিক গবেষণা পরিচালনা করতে সক্ষম হন। এটি ভবিষ্যৎ মিশনের অবস্থানের পছন্দগুলো জানিয়ে দেবে এবং চাঁদকেন্দ্রিক গবেষণার কেন্দ্র কোথায় হবে তাও তৈরি করবে।

জার্মানির মুনস্টার ইউনিভার্সিটির প্ল্যানেটারি জিওলজিস্ট ক্যারোলিন ভ্যান ডার বোগার্ট জানান, চীনা সহকর্মীরা নতুন ম্যাপ সংকলন করার জন্য যে পরিমাণ কাজ করেছে, তাতে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা খুব বিস্তারিতভাবে মানচিত্রের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হওয়ার অপেক্ষায় আছি।

লিউ বলেছেন, এ ম্যাপ যা চীনা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় পাওয়া যায়। চীনের চাঁদ অভিযান  বিশেষ করে চাংই-১ মিশন থেকে ডেটা ব্যবহার করে একত্রিত করা, যা ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালে চন্দ্রপৃষ্ঠের জরিপের। চাংই-১ এর ক্যামেরা চাদের টপোগ্রাফি এবং ভূতাত্ত্বিক কাঠামোর পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করেছে। এ ক্যামেরার ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার বিভিন্ন শিলা প্রকার সনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

২০১৩ ও ২০১৯ সালে যথাক্রমে চ্যাংই-৩ ও চ্যাংই-৪ মিশনের পর্যবেক্ষণগুলো চ্যাংই-১ এর উপাত্তের যথার্থতা যাচাই করতে সাহায্য করেছে৷ এটলাস প্রণয়নের এ টিমটি নাসা ও ভারতের চন্দ্রাভিযানের তথ্যও নিয়েছে। এদের কিছু পর্যবেক্ষণ চ্যাংই মিশনের জন্য অত্যন্ত পরিপূরক।  উদাহরণস্বরূপ গ্র্যাভিটি রিকোভারি অ্যান্ড ইনটেরিয়র ল্যাবরেটরি (গ্রেইল)-এর ডেটা আমাদের চন্দ্রপৃষ্ঠের সমস্ত গভীর ফাটল সনাক্ত করতে সাহায্য করেছে।

চীনা গবেষকরা ২০১২ সালে মানচিত্রগুলো সংকলন করতে শুরু করেছিলেন। কারণ তারা চাঁদে অভিযানের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপগুলো অনুসন্ধান করছিলেন। রাশিয়া, ডজনখানেকেরও বেশি অন্যান্য দেশ ও সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে চীন আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণে নেতৃত্ব দিচ্ছে৷ যার উদ্দেশ্য হল ২০৩০ সালের মাঝামাঝিতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বৈজ্ঞানিক ও সম্পদ অনুসন্ধান।

মিচেল বলেছেন, চন্দ্র বিষয়ক বিজ্ঞানে অবদান আগামী দশকগুলোতে চীন একটি বৈজ্ঞানিক পাওয়ারহাউস হিসেবে তার সম্ভাব্য ভূমিকা জাহির করার একটা পথ তৈরি করবে।

লিউ জানান, তার দল ইতিমধ্যে মানচিত্রের রেজোলিউশন উন্নত করার জন্য কাজ শুরু করেছে; বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল প্রয়োজনের ভিত্তিতে উচ্চতর নির্ভুলভাবে আঞ্চলিক মানচিত্র তৈরি করবে। ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ এ ম্যাপ ডিজিটাল মুন নামে একটি ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে একত্র করা আছে। যা পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্প্রদায়ের কাছে সহজলভ্য করা হবে।

সূত্র : নেচার

অনুবাদ : ইমামুল ইসলাম

#