মাতৃত্বকে সামাজিক গৌরবের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করার মাধ্যমে নারী জন্মগত এবং সহজাতভাবে সেবাধাত্রী এমন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণাকে আরো বেশি প্রকট করে তুলে ধরা হয়েছে। মাতৃত্ব নারীর পছন্দ-অপছন্দের বিষয় না হয়ে নারীর সবচেয়ে কাক্সিক্ষত জীবনের লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। মাতৃত্বের ওপর দেবত্বের আবরণ দিয়ে ত্যাগের প্রতীক হিসেবে আরো মহিমান্বিত করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক প্রতীক, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মাতৃত্বের মহিমান্বিত রূপকে আরো বেশি শক্তিশালী করা হয়েছে।
মাতৃত্বের মহিমান্বিত রূপকে ভারতমাতা ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সঙ্গে সমার্থক হিসেবে বিবেচনা করে তুলে ধরেছে বলিউড। ‘মম’ চলচ্চিত্রে শ্রীদেবীকে একজন সুপার মা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এ চলচ্চিত্রে শ্রীদেবী তার মেয়ের ধর্ষকদের হত্যা করে প্রতিশোধ নেন।
যা-ই হোক, মাতৃত্বকে শুধুমাত্র ভিন্নধর্মী উচুবর্ণ এবং শ্রেণির পটভূমিতে মাপা হয়। যেমন ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ এবং ‘হাম আপকে হ্যায় কউনে’র মতো চলচ্চিত্রে গর্ভাধারণ একটি আড়ম্বরপূর্ণ পারিবারিক ব্যাপার হিসেবে বিবেচনা করা হয়- যা পরিবারকে একত্রিত করে, পরিবারকে আরও সমৃদ্ধ করে। ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’ চলচ্চিত্রে- প্রিয়া মালহোত্রার চরিত্রায়নের মাধ্যমে গর্ভাধারণের মহিমান্বিত দিকটিকে আরো গভীরভাবে তুলে ধরা হয়। যেখানে প্রিয়া একটি সন্তানের জন্য মধুবালাকে তার স্বামীর সঙ্গে যৌনমিলনে প্ররোচিত করেন; যখন প্রিয়া বুঝতে পারেন তিনি নিজে সন্তান ধারণে অক্ষম।
তবে অবিবাহিতা মায়েদের চিত্রায়ন এমন একটি বিষয় যা ব্যাপক বিশ্লেষণের অবকাশ রাখে। যখন গর্ভাধারণ প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিপরীতে ঘটে, তখন এটিকে কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা করা হয়? এখানে তিনটি চলচ্চিত্র ‘আরাধনা’ (১৯৬৯), ‘কেয়া কেহনা’ (২০০০), এবং ‘মিমি’ (২০২১)-এর মাধ্যমে অবিবাহিতা মায়েদের চিত্রায়ন করা হয়েছে। এই চলচ্চিত্রগুলোর প্রধান চরিত্র নারী; নারীর বহমান জটিল জীবন ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। নারীকেন্দ্রিক এ চরিত্রগুলো বিভিন্ন স্থান ও কালের। অবিবাহিতা মায়েদের গল্প চিত্রিত করে যে সব চলচ্চিত্র প্রগতিশীল তকমায় সমাদৃত, বলিউডের সে সব চলচ্চিত্রে মাতৃত্বের গল্পকে কীভাবে পরিবর্তিত রূপে চিত্রায়িত করা হয়েছে তা বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
‘আরাধনা’ চলচ্চিত্রে বন্দনা ত্রিপাঠী একজন শিক্ষিত, মুক্তমনা আধুনিক নারী। দার্জিলিংয়ে বেড়াতে গিয়ে বাস ভ্রমণের সময় সুদর্শন বিমানবাহিনীর পাইলট অরুণ ভার্মার প্রেমে পড়েন বন্দনা। এ প্রেমাসক্তি উভয়কেই আসক্ত করে। বন্দনার বাবা এবং অরুণের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বন্দনা-অরুণের প্রেম মেনে নেন। তবে আত্মীয়-স্বজন ছাড়াই মন্দিরে বন্দনা-অরুণের বিয়ে হয়। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে অরুণ একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যায়। ফলে বন্দনার জীবনকে দুর্ভাগ্য তাড়া করে। একাকী জীবনে বন্দনা আবিষ্কার করে তার গর্ভবতী সত্তার, অরুণের প্রেম-বিয়ের নিখুঁত বীজ বন্দনার গর্ভে। যা-ই হোক, অরুণের পরিবার বন্দনা-অরুণের বিয়েকে প্রহসন বলে অভিহিত করে এবং বন্দনাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। বন্দনা তার গর্ভাবস্থা নিয়ে একাকী পথ চলল, ছেলের জন্ম দিল, বিশ বছর ছেলের জীবনের জন্য বন্দনা নিজের সুখ বিসর্জন দিল। কীভাবে ভালো মা হওয়া যায় তা বন্দনার আত্মত্যাগে চিত্রায়িত করা হয়। আর এভাবে এ চলচ্চিত্রে আদর্শ মাতৃত্বের প্রতিচ্ছবি হিসেবে তুলে ধরা হয়।
‘কেয়া কেহনা’ চলচ্চিত্রটি প্রিয়াকে ঘিরে আবর্তিত, রাহুলের সংস্পর্শে গর্ভবতী হয় প্রিয়া। গর্ভবতী হলে প্রিয়াকে ফেলে চলে যায় রাহুল। বাবা-মায়ের সাথে ঝগড়া করে প্রিয়া গর্ভাবস্থা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। যা-ই হোক, মেয়ের প্রতি প্রবল ভালবাসার জন্য প্রিয়ার পরিবার তার সঙ্গে ঝগড়া মিটমাট করে ফেলে এবং তার গর্ভাবস্থাকে সমর্থন করে। প্রিয়া তার বাবা-মা এবং বন্ধু অজয়ের সহযোগিতায় পুনরায় কলেজে যোগদান করে। শেষ পর্যন্ত রাহুল প্রিয়ার কাছে ক্ষমা চায়, সন্তান প্রসবের পর প্রিয়াকে আবার একসঙ্গে থাকার প্রস্তাব দেয় রাহুল। যা-ই হোক, রাহুলের পরিবর্তে প্রিয়া অজয়কে বেছে নেয়- এভাবে চলচ্চিত্রটি শেষ হয়।
‘মিমি’ চলচ্চিত্রটি মিমি রাথোরের জীবনের গল্প নিয়ে যিনি বলিউডে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তিনি আমেরিকা থেকে এক দম্পতিকে গর্ভাশয় ভাড়া দেন। যা-ই হোক, আমেরিকার দম্পতি যখন জানতে পারে গর্ভবতী মিমি ডাউন সিনড্রোমে (এটি একটি জেনেটিক রোগ যেখানে ২১ নং ক্রোমোজোমে আরেকটি অতিরিক্ত ক্রোমোজম বিদ্যমান। এই রোগে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক তরুণের গড় আইকিউ ৫০ যা ৮-৯ বছরের সুস্থ শিশুর সমান। আক্রান্ত শিশুর পিতামাতা জেনেটিকভাবে স্বাভাবিক থাকে আক্রান্ত সন্তানের জন্ম দিতে পারে)। ডাক্তারের অভিমত শুনে এ দম্পতি তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মিমিকে ত্যাগ করেন। মিমি গর্ভপাশয়ের ভ্রূণ নষ্ট করতে দ্বিমত পোষণ করেন এবং গর্ভাশয়ের শিশুটিকে তার বাড়িতে ডেলিভারি দেন। মিমি এ ঘাষণা দেন শিশুটি তার এবং ভানুর। ভানু মূলত মার্কিন দম্পতিকে ভারতে নিয়ে আসেন। শিশুটির জন্মের পর মিমি নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে একজন ডেডিকেটেড মা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন। চলচ্চিত্রের শেষের দিকে শিশুটির বায়োলজিকাল পিতামাতা কাস্টডি দাবি করেন। কিন্তু মিমি ও শিশুটির একে অপরের প্রতি ভালবাসা দেখে আমেরিকার দম্পতি শিশুটিকে মিমিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর এভাবে চলচ্চিত্রটিতে সুখকর পরিসমাপ্তি ঘটে।
মাতৃত্বের কৃতিত্ব ও অপরিহার্যতা :
যে চলচ্চিত্র মূলত প্রগতিশীলতার তকমায় সমাদৃত, এ চলচ্চিত্রগুলোর অন্তর্নিহিত কাঠামোতে মাতৃত্বের পিতৃতান্ত্রিক দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। নারীর জীবনে মাতৃত্বই সব এমন পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তুলতে কার্পণ্য করা হয়নি। ‘মিমি’ চলচ্চিত্রে, যখন গর্ভবতী মিমিকে অকাল গর্ভপাতের বিকল্প দেওয়া হয়, তখন তিনি এটিকে একটি অপরাধ বলে গণ্য করে প্রত্যাখ্যান করেন। একই দৃশ্য দেখা যায় ‘আরাধনা’ ও ‘কেয়া কেহনা’ চলচ্চিত্রে। ‘কেয়া কেহনা’ চলচ্চিত্রে যখন কলেজের নাট্যদল গর্ভবতী প্রিয়াকে কটূক্তি করে, তখন প্রিয়া জানান দেন, তিনি ইতিমধ্যেই একজন মা, তিনি তার সন্তানকে হত্যা করবেন না।
এই ধারণাগুলো আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শেকড়ে গেঁথে আছে যা একজন নারীর জীবনে মাতৃত্বকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে প্রচার করে। এমন ধারণা সুসান ডগলাস এবং মেরেডিথ মাইকেলস বই ‘দ্য মমি মিথ : দ্য আইডিয়ালাইজেশন অফ মাদারহুড অ্যান্ড হাউ ইট হ্যাজ আন্ডারমাইনড অল’ (২০০৫)-এ খুব যৌক্তিকভাবে আলোচনা করেছেন। ‘মামি মিথ’-এ এমন একটি বদ্ধমূল দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে কোনো নারীই সত্যিকার অর্থে সম্পূর্ণ বা পরিপূর্ণ নয়, যদি তার কোনো সন্তান না থাকে।
যা-ই হোক, নারীর কৃতিত্ব পুরুষ আধিপত্যশীল সমাজ নির্ধারণ করে। একজন নারীকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কীভাবে গ্রহণ করতে চায় এমন দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের সমাজে প্রবল। একজন নারী শুধু তার নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য তার জীবনযাপন করছেন কিনা, বিশেষ করে একটি ছেলেসন্তানের জন্য জীবন অতিবাহিত করছেন কি না, এটা একজন নারীকে প্রমাণ করতে হবে এবং এটাকেই বিবেচ্য হিসেবে ধরা হয়। এটাও লক্ষ্যণীয় আলোচিত তিনটি চলচ্চিত্রে প্রত্যেক নারীই ছেলেসন্তানের জন্য কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রান্ত করেছে। এটি আবার পুরুষতন্ত্রের আধিপত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করে। অন্যদিকে, এসব চলচ্চিত্রের নারীদের (মূল চরিত্র নারী) তাদের আশে-পাশের পুরুষদের ওপর অনেক বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হতে হয়েছে, বিশেষ করে বাবা ও ভাইদের ওপর। অবশেষে তারা ছেলেসন্তান ভূমিষ্ঠের মাধ্যমে জীবনে একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছে। বলা যায়, মাতৃত্বের বলিউড উপস্থাপনা ‘মেরে পাস মা হ্যায়’ যুগে রয়েছে।
বলিউডের মা চরিত্রের মাধ্যমে একজন মা কেমন হওয়া উচিত তার আদর্শিক মানও তুলে ধরা হয়েছে। নারী যেভাবে পোশাক পরেন এবং কথা বলেন, তার সম্পর্ক, তার চরিত্র এবং তার মনোবল পিতৃতান্ত্রিক গল্প এবং বর্ণনার সাথে মানানসই নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে উপস্থাপন করা হয়েছে। একজন আধুনিক নারীকে এখনও খারাপ মা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। তাদের মধ্যে এমন ধারণার জন্ম হয়েছে নারীরা মাতৃত্বের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিল রেখে তারা শিক্ষিতা, মুক্তমনা ও আধুনিক হতে পারে।
এই চলচ্চিত্রগুলোতে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ প্রায়শই একটি নাটকীয় আবহ তৈরি করেছে, যেখানে অকাল গর্ভপাতকে হত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চরিত্রগুলোর নৈতিকতা প্রদর্শন করা হয়েছে মা হওয়ার মহিমান্বিত গুণাবলীর শব্দমালা দিয়ে।
অন্যদিকে, যে নারীরা গর্ভাবস্থার চেয়ে নিজের জীবনকে গুরুত্ব দেন, তখন তাদেরকে খারাপ নারী বলে গণ্য করা হয়। ‘আইত্রাজ’ (২০০৪) চলচ্চিত্রে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার চরিত্রটি খলনানিকা হিসেবে দেখানো হয়েছে। কারণ তিনি ভ্রূণ গর্ভপাত করার সিদ্ধান্ত নেন। ‘শাদি কারকে ফাস গয়া ইয়ার’ (২০০৬) চলচ্চিত্রে (শিরোনামটি যতটা বোকা মনে হয়), যখন আধুনিক অহনা (শিল্পা শেঠী) ভ্রূণ গর্ভপাত করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন অহনা আবিষ্কার করে সে নিজে গর্ভবতী। কিন্তু অহনার স্বামী আয়ানের (সালমান খান) সৌজন্যে মা হওয়ার বিশুদ্ধতা উপলব্ধি করেন এবং একজন অনুগত স্ত্রীতে অহনা নিজেকে রূপান্তরিত করেন।
মাতৃত্বেই নারীত্বের পরিচয় :
তিনটি চলচ্চিত্রেই নারীর চরিত্রগুলোকে স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার ভরপুর প্রাণবন্ত সত্তা হিসেবে প্রথমে চিত্রিত করা হয়েছে। কিন্তু যখন গর্ভাবস্থার বিষয়বস্তু ঘটনাপ্রবাহে আসে, তখন এসব চরিত্রগুলোর স্বতন্ত্র সত্তাগুলো মাতৃত্বের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মুছে ফেলা হয়। এসব চলচ্চিত্রে মাতৃত্বকে প্রচলিত নৈতিকতার কেন্দ্র তুলে ধরা হয়েছে; নারীর অন্যান্য সত্তার পরিচয়গুলোকে প্রচলিত নৈতিকতার প্রশ্নের মাধ্যমে মুছে ফেলে এক ধরনের ন্যায্যতা দান করা হয়েছে। গর্ভাবস্থার মাধ্যমে চলচ্চিত্র তিনটির ঘটনাপ্রবাহকে ঝাঁকুনি দেওয়ার পাশাপাশি মাতৃত্বের অভিজ্ঞতাকে উচুতে তুলে ধরে আরো মহিমান্বিত করা হয়েছে।
যখন বিয়েবহির্ভূত গর্ভাবস্থা এবং অযাচিত গর্ভধারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়, তখন এটি সামাজিক কলঙ্ক এবং আন্তঃব্যক্তিক জীবনসংগ্রামের বিষয় হিসেবে হাজির হয়। আন্তঃব্যক্তিক জীবনসংগ্রামে কিছুটা নাটকীয়তা থাকলেও সামাজিক কলঙ্কের প্রশ্নটি প্রায়শই উপেক্ষিত থেকে যায়। সামাজিক কলঙ্ক ও ব্যক্তিক দ্বন্দ্বের এমন পরিস্থিতিতে নারীর কেবল মাতৃত্ববোধ থাকবে এমন ধারণা খুবই হাস্যকর। চলচ্চিত্রগুলো চারপাশের সুগঠিত পিতৃতান্ত্রিক বাস্তবতাকে চ্যালেঞ্জ না করে মাতৃত্বের অনুভূতিকে গভীরভাবে সুপ্রতিষ্ঠত করেছে। ফলে অবিবাহিতা মায়েদের চারপাশের জীবনসংগ্রামের চ্যালেঞ্জগুলোর আখ্যান অক্ষত থাকে এবং তাদের চারপাশের আবর্তিত গল্পগুলো মাতৃত্বের গৌরব ও অপরিহার্যতাকে অক্ষুণ্ণ রেখে পুরুষতন্ত্রের পালে আরো হাওয়া দিয়েছে।
সুতরাং, পুরুষ সঙ্গীর অনুপস্থিতির অর্থ এই নয় নারীরা সহজাতভাবে নারীবাদী। চরম ব্যক্তিগত ত্যাগের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য জীবনযাপনের জন্য এ সব চলচ্চিত্রের নারী চরিত্রদের পিতৃতন্ত্রের নিয়ম মেনে চলতে হয়েছে। প্রগতিশীলতার দৃষ্টান্তের পুরো ছাড়পত্র পায়নি চলচ্চিত্রগুলো, সঙ্গী নির্ধারণের জন্য প্রিয়ার কর্তৃত্ব এবং মিমির নায়িকা হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক ব্যবস্থায় জোতসইভাবে বলি দেওয়া হয়। যা-ই হোক, অবিবাহিতা মায়েদের চারপাশের আখ্যান অক্ষত থাকে, কোনো পরিবর্তনের প্রত্যাশা ফুটে ওঠেনি। অবিবাহিতা মায়েদের চারপাশে বোনা গল্পগুলো মাতৃত্বের গৌরব এবং অপরিহার্যতাকে ঘিরে থাকে যে বলয় আমাদের সমাজব্যবস্থার পুরুষতান্ত্রিকতাকে অক্ষুণ্ণ রাখে। মোটকথা চলচ্চিত্রগুলো পুরুষতন্ত্রের প্রচলিত গাঁথুনিতে বড় ধরনের কানো ঝাঁকুনি দিতে পারেনি।
মূল : হাজেরা নাজিব, অনুবাদ : ইমামুল ইসলাম