শরীর জানে কখন মৃত্যু নিকটবর্তী, এটি আপনার নাক দিয়ে শুরু হয়। যারা উচ্চ ঘ্রাণশক্তিসম্পন্ন জীব তারা তার সঙ্গীর মুত্যুর সংকেত জানতে পারে।
মৃত্যু আমাদের কাছে রহস্যময় ও অমীমাংসিত বিষয়। সুদীর্ঘকাল ধরে, মানবজীবনের সমাপ্তি বুঝতে এবং অনুধাবন করার চেষ্টা করেছে মানুষ। আশ্চর্যজনকভাবে কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বলা হয়েছে- আমাদের ঘ্রাণের অনুভূতিই মৃত্যুর আগমনী বার্তার রহস্য উন্মোচনের পথ দেখাতে পারে। দেখা যাচ্ছে- আমাদের নাক মৃত্যু কখন ঘটতে পারে সে সম্পর্কে সংকেত দেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে। অন্য কারো মৃত্যু কাছাকাছি হলে নাক মৃত্যুর ঘ্রাণ পেতে সক্ষম হয়, পাশাপাশি আমাদের নাক যদি ঘ্রাণ অনুভূতি হারিয়ে ফেলে, তবে নিজের স্বাস্থ্যের ভবিষ্যদ্বাণী পাবে।
মৃত্যুর ঘ্রাণ ও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় :
আমাদের ঘ্রাণ অনুভূতির একটি আকর্ষণীয় দিক হল- অন্যদের মৃত্যুর আগমনী বার্তা সনাক্ত করার সম্ভাবনা রাখে। অনেক উপাখ্যানমূলক গল্প আছে, যেখানে কেউ কেউ দাবি করেছেন, তারা তার প্রিয়জনের মৃত্যুর আগে একটি নির্দিষ্ট গন্ধ/ঘ্রাণ অনুভব করেছিলেন। এই অভিজ্ঞতাগুলো রহস্যময় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়; যা বিশেষত আমাদের ঘ্রাণতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত।
বেশ কয়েকটি তত্ত্ব এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। একটি ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়- দেহে মৃত্যু কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে এটি বিশেষ রাসায়নিক বা ঘ্রাণ তৈরি করে, যা বেশিরভাগ লোকের কাছে অদৃশ্য, কিন্তু উচ্চতর ঘ্রাণশক্তিসম্পন্ন কিছু ব্যক্তি তা সনাক্ত করতে পারে।
আরেকটি তত্ত্ব দাবি করে- ঘ্রাণ অনুভূতি আমাদের মানসিক অবস্থার সূক্ষ্ম পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত, যা আমাদের প্রিয়জনের আসন্ন ক্ষতি বুঝতে সহায়তা করে। কিন্তু এটি এত বেশি নয় যে, আমরা বুঝতে পারি আমরা মৃত্যুর ঘ্রাণ পাচ্ছি। বরং আমাদের ঘ্রাণ গ্রন্থিগুলোর মাধ্যমে আমরা অনুভব করতে শুরু করি- মৃত্যু কাছাকাছি।
যদিও এক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সীমিত। কিছু আকর্ষণীয় গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে- কুকুর বা এমনকি বিড়ালের মতো প্রাণী চিকিৎসারত ব্যক্তিদের ক্যানসারসহ সুনির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন সনাক্ত করতে সক্ষম। একইভাবে, এটা উচ্চতর ঘ্রাণ অনুভূতিসম্পন্ন মানুষের পক্ষে আসন্ন মৃত্যু অনুভব করার ক্ষমতাও থাকতে পারে। এমন কি প্রাণীদের উদাহরণও রয়েছে যেগুলো হাসপাতালে দীর্ঘ সময় বাস করে, সেগুলো প্রায় সর্বদা সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করে, কখন একজন রোগী মারা যাবে।
ঘ্রাণ অনুভূতি হারানো ও ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য :
অন্যদের মৃত্যুর আগমনী বার্তা ঘ্রাণের মাধ্যমে পাওয়ার ক্ষমতার পাশাপাশি, নিজের মধ্যে ঘ্রাণের অনুভূতির অনুপস্থিতি ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যের ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে কাজ করতে পারে। বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, ঘ্রাণশক্তির কার্যকারিতা হ্রাস কিছু স্বাস্থ্যগত অবস্থার সঙ্গে যুক্ত। পারকিনসন ও আলঝেইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ এর মধ্যে রয়েছে। এটি শ্বাসযন্ত্র ও কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার একটি সংকেতও হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে- এ রোগগুলোর অন্যান্য লক্ষণগুলো স্পষ্ট হওয়ার আগেই ঘ্রাণতন্ত্র প্রায়শই খারাপ হয়ে যায়। এটি জানান দেয়- ঘ্রাণ অনুভূতি হারানো একটি প্রাথমিক সতর্কতা সংকেত হিসেবে কাজ করতে পারে। সম্ভাব্য স্বাস্থ্যসমস্যা সনাক্ত করতে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিরোধ করতে পেশাদার স্বাস্থ্যসেবাকারীদের এটি সহায়তা করে।
বিদেশি পত্রিকা অবলম্বনে অনুবাদ : ইমামুল ইসলাম