আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ‘জয় করা’ সম্পর্কে বিশ্বাস করতে চায়। আপনি যখন প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে থাকেন তখন সত্যিই এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। প্রেম প্রকৃতপক্ষে সবকিছুকে জয় করতে পারে। কিন্তু প্রেমের মাথার উপরে একটি ছাদ প্রয়োজন। সম্ভবত রোমান্টিক যাত্রায় কেউ অর্থ নিয়ে বিশ্রী ভাবানুবাদ চায় না। অর্থ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর সঙ্গে আমাদের প্রত্যাশাগুলো জড়িত। কখনও কখনও আপনার ব্যক্তিগত চাওয়াগুলো সর্বোত্তম কিনা, অর্থ দ্বারা তা নিরূপণ হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই, অর্থের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করা জরুরি। আপনার আর্থিক সমস্যাগুলো আপনার রোমান্টিক মুহূর্তগুলোকে বাষ্পাকারে উড়িয়ে দিতে পারে।
আপনি যখন কারও সঙ্গে গুরুতর সম্পর্কে জড়ান, তখন আপনার বেশিরভাগ অর্থ ‘গ্রুপ মানি’ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এটা সবসময় ঘটে না। কিছু দম্পতি প্রায় সম্পূর্ণ আর্থিক স্বাধীনতা নিয়ে সম্পর্ক এবং এমনকি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আপনি যদি চান তবে এটি দুর্দান্ত হবে। কিন্তু অনেক দম্পতির সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থ যৌথ প্রচেষ্টা হয়ে ওঠে। আপনি যদি একসঙ্গে থাকেন তবে আপনাকে ভাড়া দিতে হবে, বিল দিতে হবে, একটি নতুন সোফা, রোমান্টিক খাট, রৌপ্যপাত্র ইত্যাদি কিনতে হবে- যা আপনার সম্পর্ককে আরো প্রেমময় করে তুলবে। কেন অর্থ আসলে একটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ :
এক. সম্পর্ক সমান সামান হওয়া উচিত :
এর মানে কী তা আপনাকে বুঝতে হবে। সম্পর্ক সবসময় সমান হওয়া উচিত। কিন্তু এর মানে বিভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্ন জিনিস। কিছু লোক মনে করেন ‘সমান’ মানে ফিফটি-ফিফটি। কিন্তু প্রায়শই এ ফিফটি-ফিফটি সম্পর্ক অনেক দম্পতির জন্য সবসময় বাস্তবসম্মত নয়। উভয়পক্ষ একই পরিমাণ অর্থ উপার্জন না করলে কী হবে? কেন তারা সমানভাবে বিভক্ত করে বাধ্যবাধকতার পথে হাঁটতে বাধ্য হবে, যদি এ সম্পর্ক তাদের জন্য অর্থপূর্ণ না হয়? যদি তারা অন্যভাবে হাঁটতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে? অর্থ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তখন, একপক্ষ যখন অন্যপক্ষের সঙ্গে আর্থিকভাবে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। একটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয় অংশীদারের অবদান কী হবে তা সঠিকভাবে জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাতে কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
দুই. সঙ্গী কত টাকা উপার্জন করে তা জানা উচিত নয় :
আপনার সঙ্গী কত টাকা উপার্জন করে বা তার কত টাকা আছে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এটা ঠিক- আপনি যদি কিছু সময়ের জন্য একসঙ্গে থাকেন এবং একসঙ্গে থাকার পরিকল্পনা করেন, তখন কঠিন সময়ে আপনার সঙ্গীকে সমর্থন করার মানসিকতা থাকা দরকার। আপনার সঙ্গী সবসময় একটি স্বস্তিদায়ক আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যে নাও থাকতে পারে। তাই উভয়ের মধ্যে আর্থিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
তিন. আপনার সঙ্গীকে সমর্থন করার মানসিকতা :
আপনাকে অপ্রত্যাশিতভাবে আপনার সঙ্গীকে সমর্থন করার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হতে পারে। এমন সময় আসতে পারে- আপনার সঙ্গী চাকরি হারাবে, বড় বিলগুলো হঠাৎ করে দিতে হবে আপনাকে। এই মুহূর্তে আপনি শিখবেন- আপনার সম্পর্ক একদিকে আর্থিক অংশীদারিত্বমূলক, অন্যদিকে রোমান্টিক ও আবেগপূর্ণ। আপনাকে বুঝতে হবে- দুজন একসঙ্গে সুসময় ও কঠিন সময় পার করার মানসিকতা থাকতে হবে।
চার. অনুরূপ আর্থিক অগ্রাধিকার থাকতে হবে :
একজন সম্ভাব্য সঙ্গী যাকে আপনি আর্থিক বিশ্বাস করতে পারেন, তাকে খুঁজে বের করার দিকে মনোনিবেশ করা জরুরি। তবে এমন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানো যাবে না, যে অন্যের ব্যয়ের উপর নজর রাখে। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে- উভয়ই যুক্তিসঙ্গত ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে দৈনন্দিন ব্যয়ের ক্ষেত্রে। ব্যয় ও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে আপনাদের একই লক্ষ্যগুলো যৌথভাবে ভাগ করে নিতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, যখন একজন ব্যএকটি নতুন ডাইনিংটেবিলের জন্য সঞ্চয় করতে চান কিন্তু আপনার সঙ্গী নিয়মিত বা আধা-নিয়মিত ভিত্তিতে বন্ধুদের সঙ্গে রাতে আউটে যেতে সঞ্চয় করতে চান। এ অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে সুন্দর একটি মৌলিক অমিল রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর ও টেকসই নয়। আপনি যখন একসঙ্গে থাকবেন, তখন আপনার ব্যয় করার অভ্যাস সর্বদা অন্য ব্যক্তিকে প্রভাবিত করবে। যদিও আপনি কাউকে আপনার অর্থ দিয়ে চালানোর দাবি করতে পারেন না, তবে আপনার বিশ্বাস করা উচিত- আপনার সঙ্গী আপনাদের দুজনের সম্পর্কে অর্থহীনতা খুঁজে পেতে চাবেন না। আপনাদের দুজন একই লক্ষ্য ভাগাভাগি করে এগোনো উচিত হবে।
পাঁচ. একসঙ্গে থাকতে/ বিয়ে করতে/সন্তান নিতে আর্থিক পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ :
একটি স্থিতিশীল সম্পর্কের মধ্যে প্রায়ই একটি ভবিষ্যতের পরিকল্পনা জড়িত থাকে। যেমন একসঙ্গে ভাড়া নেওয়া, একটি বাড়ি কেনা, গাড়ির মালিক হওয়া, বাচ্চা হওয়া, প্রচুর ছুটি নেওয়া ইত্যাদি। আপনার পথ দেখতে যাই হোক না কেন, অর্থ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি কোথায় অর্থ ব্যয় করেন তা নির্দেশ করে আপনি কীভাবে বসবাস করবেন এবং কীভাবে আপনি একসঙ্গে আপনার লক্ষ্য অর্জন কররেন।
ছয়. টাকা নিয়ে লড়াই করা খুব সহজ :
আপনার সম্পর্কের মধ্যে অর্থ কীভাবে কাজ করে, সেদিকে আপনি যদি যথাযথ মনোযোগ না দেন, তবে এটি ধ্বংসাত্মক হতে পারে। আপনি আপনার আর্থিক বিষয়ে যদি খোলামেলা আলোচনা না করেন, তাহলে আপনি খুব দ্রুত অন্যরা কীভাবে অর্থ ব্যয় করে তা নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়তে পারেন। আপনি প্রতিদিন টাকা ব্যয় করেন।সকালের নাস্তার জন্য আপনি যা খাবেন তাসহ সবকিছুকেই অর্থ প্রভাবিত করে। অবশ্যই এটি প্রভাবিত করবে আপনাদের দুজনকেই। জীবন ভাগ করে নিয়ে একে অপরের সঙ্গে বসবাস করেন। তাই প্রতিটি বিষয়সহ আর্থিক দিকেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি। আপনার আর্থিক বিষয়টি যথেষ্ট পরিষ্কার রাখা উচিত, ফলে সম্পর্কে অপ্রয়োজনীয় ঘর্ষণ সৃষ্টি হবে না।
সূত্র : বিদেশি ইংরেজি পত্রিকা থেকে, অনুবাদ : ইমামুল ইসলাম