বিশ্বসভ্যতার উৎকর্ষ সাধন মানবজাতির বহুমাত্রিক চিন্তা চেতনার ফল। মানবগোষ্ঠী সৃষ্টির আদি থেকেই তাদের জ্ঞান-গরিমা, অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম, সীমাহীন কষ্টসহিষ্ণু ত্যাগ তিতিক্ষা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর আজকের এই অবস্থানে পৌঁছতে নারী-পুরুষের সম্মিলিত নেতৃত্ব ও দায়বদ্ধতা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
অধিকারের দিক বিবেচনা করলে এই পৃথিবীটা যতটা পুরুষের ততটাই নারীর। একটা শ্রেণিকে দ্বিতীয় স্তর কিংবা অধঃপাতে নামিয়ে অন্য শ্রেণিকে মর্যাদার শীর্ষে তুলে ধরা শুধু ক্ষমতা এবং পেশিশক্তির অপব্যবহারই নয় রীতিমতো সভ্যতার উৎকর্ষের দণ্ডে পরিমাপ করতে ন্যাক্কারজনক ঘটনা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিতও বটে। সবক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের যৌথ এবং যৌক্তিক কর্মস্পৃহা এবং সেইটার ফলপ্রসূ প্রভাব জগৎ সংসারকে কল্যাণমুখী বার্তা প্রেরণ করেছে।
কিন্তু আমরা বহুকাল ধরেই অবলোকন করে আসছি পেশিশক্তি বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ্যত্বের মূল্য নির্ধারণ করতে গিয়ে নারীকে সর্বদায় পেছনের কাতারে ফেলার একটা প্রবণতা; কারণ হিসেবে দৈহিক গঠন, সমাজ সংস্কৃতির দোহাই, সন্তান-সন্ততির দায়ভার, ধর্মীয় আচার বিশ্বাসকে সামনে তুলে ধরা হয়েছে। অমূলক কিছু শিষ্টাচারের বলি হতে হয়েছে আবহমান কাল থেকে শুধু নারীকেই।
বিশ্বসভ্যতার এক এক মানবগোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনবোধ- এর বিকাশের ধারা ভিন্ন ভিন্ন সময় এবং নানাবিধ প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে। তেমনি বাঙালির নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবন ব্যবস্থায় হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। সৃষ্টির আদি থেকে বাঙালি জাতির পারিবারিক কাঠামো গঠিত হয়েছে অত্যন্ত স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে। তখনকার সমাজে নারী-পুরুষের যৌথ জীবন যাপন জাতিকে অধিকতর শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে প্রেরণা যুগিয়েছে।
আবার অন্যদিকে যুগ যুগ ধরে নারীর প্রতি জোরজুলুম, নির্যাতন ও সহিংসতা আমাদের বাঙালি সভ্যতাকে বিভ্রান্তির দ্বার গোড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তাই বারবার মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে আমাদের পূর্ব পুরুষের কথা, ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা, শিল্প-সংস্কৃতির কথা, ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা ইত্যাদি। যেমন, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন ‘চর্যাপদ’-এ তৎকালীন বাঙালি নারীর জীবনচরিত লক্ষ করলে দেখা যায় যে, নারীরা সেই সময় স্বেচ্ছায় সঙ্গী নির্বাচন এবং পেশাগত স্বাধীনতা ভোগ করত। পারিবারিক ও বৈবাহিক জীবন, সন্তান লালন-পালন থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে তারা পরিপূর্ণ সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জীবন যাপন করত। নৌকা চালনা, নৌকার পানি সিঞ্চন, লোকজন পারাপার, ফসল উৎপাদন, পশুপালন ইত্যাদি পেশায় তারা স্বাধীনভাবে নিয়োজিত ছিল।
মধ্যযুগের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যে গাভির দুধ দোহন, বিক্রয় থেকে শুরু করে রাধাকে সখীদের সাথে বৃন্দাবনে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করি। এমনকি মধ্যযুগের ‘মঙ্গলকাব্য’-তে আমরা নারীর স্বতন্ত্র এবং সমাজের অধিপতি রূপেও দেখতে পাই।সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির নারী ঈশ্বরী পাটনি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং সন্তান প্রতিপালনে উদ্বিগ্ন জননীর মুখে বলতে শুনি ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’। আধুনিকতার সূত্রপাত এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধের উদ্ভবের কালেও আমরা নারীর স্বাধীন জীবনাদর্শ লক্ষ করি।
আবহমান কৃষিপ্রধান গ্রামবাংলায় কায়িক পরিশ্রমের বিনিময়েই খাদ্যের সংস্থান করতে হয়। সেখানে প্রত্যক্ষ করলে দেখা যায় নারীদের তুলনায় পুরুষদের পেশিশক্তির সাহায্যে মাঠে-ঘাটে গিয়ে কাজ করা সহজসাধ্য। তাছাড়া সামাজিক অবকাঠামোগত নিরাপত্তার অজুহাতে নারীকে ঘরের কাজে উৎসাহিত করা হয়েছে। যদিও নারীর হাত ধরেই কৃষির পথযাত্রা। অতএব, পরিবারে ছেলে সন্তানের প্রতি আজন্ম লালসা বাঙালির চিরন্তন। তাছাড়া বংশের মর্যাদা ও উত্তরাধিকার নির্ধারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ছেলে সন্তানের উপর নির্ভর করে। তাই কন্যাসন্তানের প্রতি পরিবার থেকেই এক ধরনের হীনমন্যতা কাজ করে। একই পরিবারে একাধিক কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়া কোনো পরিবারই তেমন আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করে না।
আমার ছোটবেলার একটা স্মৃতি মনে পড়ে, প্রথম কন্যাসন্তানের পরে আবারও কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ায় আতুর ঘরে ঢুকে মায়ের কোল থেকে শিশুকন্যাকে ছিনিয়ে নিয়ে এক পাষণ্ড পিতা নবজাতককে হত্যা করেছিল। অথচ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সেই পিতাকেই বাঁচাতে পরিবারের লোকজন বিষয়টি চেপে গিয়েছিল। এই রকম ঘটনা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটে এবং ঘটে চলেছে। অর্থাৎ, নারী তার সবচেয়ে আপন ঘরেও নিরাপদ না। নারীর প্রতি সহিংসতা নিজের জন্মভিটা থেকেই শুরু হয়। কন্যাশিশুর ভ্রুণ হত্যার মাধ্যমে নারী নির্যাতনের সূত্রপাত ঘটে। আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রীয় কাঠামো এখনো নারীর জন্য নিরাপদ আবাসস্থল কিংবা স্বাধীনভাবে চলাচলের ক্ষেত্র গড়ে তুলতে পারেনি।
একজন কন্যাসন্তান যখন কিশোরী হয়ে ওঠে তখন তার মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক নানা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। কিন্তু প্রকৃতি প্রদত্ত এই পরিবর্তনকে স্বাভাবিকভাবে না নিয়ে তাকে বন্দিশালায় আবদ্ধ হওয়ার আদেশ চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে। এই পরিস্থিতিতে মানসিক বিকাশের মাধ্যমে একজন মেয়ের নারী হয়ে ওঠার পথে চরম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এটাও কন্যা সন্তানের মানসিক নির্যাতনের মধ্যেই পড়ে।
আবার যখন কৈশোরের গণ্ডি পেরিয়ে যৌবনের দিকে ধাবিত হয় তখন একজন ছেলে সন্তানের থেকে মেয়েটির প্রতি সমাজের নষ্ট মানুষের নষ্ট চিন্তা জীবন বিষিয়ে তোলে। বারবার শোনায় ‘তুমি অন্তর্ণীল হও, তুমি আবৃত হয়ে থাক’। ধর্মীয় অনুশাসন এবং সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে বলতে থাকে, সমাজ ও পরিবেশ তোমার দ্বারাই নষ্ট হবে। এই অবমাননাকর মানসিকতা এবং নেতিবাচকতা সমাজকে নারীর প্রতি আঙুল তোলার সাহস বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। যে বা যারা এই স্রোতের বিপরীতে পা ফেলতে চায় সে বা তারা পদে পদে সমাজে হেনস্তার স্বীকার হয়। বেশিরভাগ নষ্ট চরিত্রের তকমা গায়ে নিয়ে এই সময়টাতেই নারীর প্রতি সহিংসতা বহুগুণ বেড়ে যায়।
নারী শিক্ষার প্রসার এবং পারিবারিক আবহে যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল তার কিছুটা পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে পথে ঘাটে মেয়েদের নিত্যনৈমিত্তিক যাতায়াত অব্যহত রয়েছে। ফলে বখাটেদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকের শিক্ষা জীবন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। আর গরীবের ঘরে সুশ্রী কন্যা হলে তো কথাই নেই; এই ক্ষেত্রে ঐ মেয়েটি আরও বেশি প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়; যখন বখাটেগুলো সুবিধা করতে না পারে তখন ঐ মেয়েটির চরিত্র নিয়ে নানা বাজে কথা রটিয়ে তার জীবন নরকে পরিণত করে তোলে।আর ডিজিটাল যুগে নব নব পদ্ধতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে রোধ করা হয়েছে। তারপরও অহরহ বাল্যবিয়ের শিকার হতে দেখি। এক্ষেত্রে পরিবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মেয়েকে পরিবার বোঝা মনে করে স্বামী নামক এক অপদেবতার ঘাড়ে চাপিয়ে মুক্ত হতে চায়। বিশেষ করে দারিদ্র্য এবং অশিক্ষিত বাবা-মা কন্যাসন্তানকে স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে দায়মুক্ত হতে চায়। এই সময়টাতেই নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অত্যাচার বহুগুণ বেড়ে যায়। যৌতুক প্রথা খাতা-কলমে বিলুপ্ত হলেও শ্বশুরবাড়ির লোভী মানুষগুলো অন্যের বাড়ির মেয়ের উপর জোরজুলুম চালাতে থাকে। এক্ষেত্রে নারী দ্বারাও নারী নির্যাতিত হয়। শাশুড়ি-ননদ নামক বরের মা-বোনও এই সহিংসতা সৃষ্টিতে অংশ নেই এবং বাবার বাড়ি থেকে উপঢৌকন আনতে অপারগতা প্রকাশ করলে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করে না, এক্ষেত্রে আত্মহত্যা করতেও বাধ্য করে তোলে। এই দৃশ্য শুধু অশিক্ষিত গ্রামীণ পরিবেশেই লক্ষ করি না; এই ধরনের ঘটনা শহরকেন্দ্রিক শিক্ষিত সমাজেও হরহামেশাই ঘটছে। অর্থলোভী মানুষের অসুস্থ ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে নারী নির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
মানুষের জীবনের সংবেদনশীলতা নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই প্রতীয়মান; আবেগ অনুভূতি প্রভাবিত করে উভয়কেই। অতএব, প্রেম-ভালোবাসা নামক অপরিণামদর্শী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া অমূলক কিছু নয়; কিন্তু আমাদের সমাজে এই সম্পর্ককে পুঁজি করে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। প্রেমিক নামক কুলাঙ্গারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দায় ওই প্রেমিকাকেই বহন করতে হয়। তাছাড়া মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে প্রেমিকের সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে নারীটিকে নির্যাতন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না।এক্ষেত্রে নারীর প্রাণহানি পর্যন্ত হয়। প্রতিনিয়তই এরূপ সহিংসতা নারীর প্রতি সমাজে ঘটে চলেছে।
প্রেম করতে অনিহা প্রকাশ কিংবা ক্ষমতাধরের মন্দ বা কুপ্রস্তাবে রাজি না হলেও নারীর প্রতি সহিংসতা এবং নির্যাতন লক্ষ করি। সেক্ষেত্রে আমরা তনু এবং মাদ্রাসায় নির্যাতিত ছাত্রীর অনুষঙ্গ নিয়ে আসতে পারি। যান্ত্রিক জীবনে নারী পুরুষ উভয়কেই জীবনের তাগিদে রাস্তায় বের হতে হয়। পাবলিক যানবাহনে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু নষ্ট চিন্তার নরপশু নারীকে ফাঁদে ফেলে কিংবা সুযোগ নিয়ে তার সম্ভ্রম নিতে বিন্দু পরিমাণ দ্বিধা করে না। এভাবেও আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন বেড়ে চলছে।
মাঝেমধ্যে গোচর হয় আমাদের এই সমাজ নারীর দেহটাকে যৌনাঙ্গ বলেই মনে করে। তা না হলে একজন শিশু কন্যা কীভাবে কিশোর-যুবক-আধাবয়সী-বৃদ্ধ লোক দ্বারা ধর্ষিত হয়! আমাদের আদালতে এরূপ জঘন্য ঘটনার আবার বিচার নামক প্রহসন চলতে থাকে; ধর্ষককে বাঁচানোর জন্য বাঘা-বাঘা উকিল মোক্তার লড়ে যায়। অল্প কিছুদিন আগেই কুমিল্লার ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, পুরুষ নামক নরপশু দ্বারা নয় বছরের শিশুকন্যাটিকে কীভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হলো!
নারী অকল্যাণকর; কন্যাসন্তান পরিবারের বোঝা; এখনো আমাদের সমাজে এই ধরনের হীন চিন্তা ও বিশ্বাসে আবদ্ধ আছে কিছু মানুষ; বিভিন্ন ধর্মবেত্তাগণ এবং তাদের অনুসারীরাও এমন ভাবনা দ্বারা তাড়িত। একসময় যুদ্ধবন্দি নারী-শিশুকে বিজেতা গোষ্ঠী গণিমতের মাল হিসেবে দাস দাসীরূপে নিজেদের মধ্যে ভাগ বণ্টন করে নিতে দ্বিধাবোধ করেনি। আধুনিক যুগে এসেও নারীর প্রতি অসহিষ্ণু দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমাজ পুরোপুরি বের হতে পারেনি। অর্থ এবং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এখনো নারীকে পণ্য করে ভোগ করার মানসিকতা উচ্চতর সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বিদ্যমান।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঙালি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বৈবাহিক সূত্রে নারীকে ভরণপোষণের দায় কাঁধে তুলে নেওয়ার নামে দাসীবৃত্তির বৈধ সংস্করণে রূপান্তর করা হয়েছে। যখনই নারী এরূপ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে গিয়ে স্বাবলম্বী হতে চেয়েছে তখনও একশ্রেণির মানুষ ঘরসংসার সামলানোর কথা বলে তাকে প্রতিহত করতে চেয়েছে যুগের পর যুগ। তাদের প্রতিহত করতে সমাজ এবং পরিবারের যত নেতিবাচক প্রভাব আছে তা পেশ করেছে। আবার যে নারী সমস্ত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে নিজের যোগ্যতায় অর্থ-উপার্জনকামী স্বাধীন পেশা গ্রহণ করেছে তখনও তাকে পরিবার-সংসার-সন্তানের দায়িত্ব নিতে হিমশিম খেতে হয়েছে এবং হচ্ছে। এসময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীকে একাই লড়াই করে যেতে দেখা যায়। আবার অনেক নারীর উপার্জিত সম্পত্তি কিংবা অর্থের ভাগ বণ্টনে পুরুষের আধিপত্য বিস্তার ঘটতে দেখা যায়। এই অবস্থায় কর্মজীবী নারীটি অর্থের হিসাব দিতে অস্বীকৃতি জানালে অকথ্য গালিগালাজ ও নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়।
যুগ যুগ ধরে অনেক মহীয়সী নারী আমাদের জগৎ সংসারকে আলোকিত করেছে তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে। একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শ্রেণির মানুষের সাথে নারী এবং শিশুর জীবনমান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ নারী তাঁর সম্ভ্রম হারিয়েছিলো স্বাধীনতা যুদ্ধে। কেউ কেউ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। সেই আত্মত্যাগের তুলনায় নারীকে যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে তেমন মূল্যায়ন করা হয়নি। এখনও আমাদের সমাজে যে কাজে পুরুষ পুরোদস্তুর বুক ফুলিয়ে অংশগ্রহণ করে বাহবা অর্জন করে নারীকে সেই কাজেই ভীষণভাবে হেয় প্রতিপণ্ন করা হয়। নারীর কর্মের মূল্য নির্ধারণে অধিকতর বৈষম্যের দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এক্ষেত্রেও শারীরিক দুর্বলতা এবং অনভিজ্ঞতার দোহাই দেওয়া হয়। কিছুদিন আগের ঘটনা, নারী কোচ দ্বারা পরিচালিত ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে কতক স্বনামধন্য ক্রিকেটার অস্বীকৃতি জানান।
পৃথিবী অনেক এগিয়েছে; সেই সাথে আমাদের দেশও সমানতালে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ সরকার ও সংসদ সদস্যবৃন্দ, সংসদীয় কমিটি নারীর পদচারণায় মুখরিত। কিন্তু এতসব আয়োজনে নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতনের মাত্রা তেমন কমেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তবুও নারীর জীবনমান উন্নয়নে এখনো বহির্বিশ্বের সঙ্গে পেরে উঠেনি। তবে এই চেষ্টা অব্যহত থাকলে অচিরেই নারীর প্রতি সহিংসতা এবং নির্যাতন অনেকাংশেই কমে আসবে বলে মনে করি।
লেখক : কবি ও বিশ্লেষক