আন্তর্জাতিক মা দিবস : মা আমার অস্তিত্বে, মননে ও পলিকণায়

: সালমা ফাইয়াজ
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

সবচেয়ে মিষ্টি-মধুর ডাক মা। ছোট্ট এ শব্দের অতলে লুকানো থাকে গভীর স্নেহ, মমতা আর পৃথিবীর সবচেয়ে অকৃত্রিম ভালোবাসা। আনন্দ-বেদনা-ভয় কিংবা উদ্দীপনা প্রতিটি মানবিক অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকে মায়ের নাম। মানুষের সবশেষ আশ্রয়স্থল মা নামের ওই মমতাময়ী নারীর আঁচল। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী বিশেষ মর্যাদায় পালিত হয় বিশ্ব মা দিবস।

মা দিবসের সূচনা হয় ১৯০৮ সালে। গত শতাব্দীর শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়ের জন্য বিশেষ দিন পালনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করার কথা ভাবলেন। নিজের সেই মহৎ ভাবনা বাস্তবায়নের আগেই ১৯০৫ সালের ৯ মে মারা যান তিনি।
তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ১৯০৮ সালে তার মা ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মায়েদের জন্য উৎসর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন।
দুই.
বিশ্বের মহামানবদের জীবনাদর্শের সঙ্গে মায়ের অগাধ ভালোবাসা জড়ানো। তা তাদের মন্তব্য থেকে জানা যায়। জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন, আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হলেন আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শিক্ষার ফল। আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, যার মা আছে, সে কখনোই গরিব নয়, আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হলেন আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শিক্ষার ফল। ম্যারাডোনা বলেছেন, আমর মা মনে করেন আমিই সেরা আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি। ব্রিটিশ লেখিকা জে কে রাউলিং বলেছেন, মায়ের ভালোবাসা এতটাই শক্তিশালী, এটি সবসময় নিজের চিহ্ন রেখে যায়। এত বেশি গভীর আর শক্তিধর সেই ভালোবাসা, যা সারাজীবন সুরক্ষা কবজের মতো আমাদের ঘিরে থাকে। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব। হ‍ুমায়ূন আহমেদ বলেন, মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনাসুদে অকৃত্রিম ভালোবাসা।
তিন.
মায়ের ভালোবাসা জীবনবোধের প্রতিটি পদচারণায় প্রতিধ্বনি তোলে। ‘কইরে খোকা, কইরে খুকি’- এমন সুমধুর কণ্ঠ শৈশব-কৈশর- যৌবনে আমাদেরকে বেশি বেশি শুনতে হয়েছে।এমনকি বৃদ্ধ বয়সে এসেও এ ডাক বুকের মাঝে কোনো অজানা সুরে অহর্নিশ প্রতিধ্বনিত সবসময়।
আমার কাছে মা মানে শুধু আমার জন্মদায়িনী মা-ই নয়। এদেশটাও আমার মা, দু’লক্ষ মায়ের অজানা কথা আমার এদেশের প্রতিটি পলিকণায় ধারণ করে আছে। এ মায়ের মুখটা মলিন হলে, দু’লক্ষ মায়ের আত্মচিৎকার প্রতিটি পলিকণা থেকে উচ্চারিত হয়। আমিও তখন চেতনাবোধের স্রোতধারা রক্ষায় প্রতিবাদী হয়ে উঠি, বিপ্লবী হয়ে উঠি। মায়ের কষ্ট, মায়ের মলিন মুখ আমার জেদি সত্তাকে বেপরোয়া করে তোলে। মা সে আমার প্রাণ, মা সে আমার বাঁচার অনুপ্রেরণা, মা সে আমার দেশ, মা সে আমার পলিকণার আত্মকথা- অহর্নিশ সুর তোলে আমার অস্তিত্বে, মননে, শিরা-উপশিরায়। মা দিবসে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা।
লেখক : সমাজকর্মী ও বিশ্লেষক

#