ডলারের দর নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘ক্রলিং পেগ’ হচ্ছে দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামার অনুমতি দেওয়া হয়। এতদিন ডলার বিক্রির আনুষ্ঠানিক দর ছিল ১১০ টাকা। ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালুর ফলে এখন থেকে ডলারের মধ্যবর্তী দর হয়েছে ১১৭ টাকা। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক লাফে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। এতে পণ্যের আমদানি খরচ বাড়বে, ফলে বাড়বে পণ্যের দামও মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
অর্থনীতিবিদের মতে, ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর পর শুরুতে বড় উল্লম্ফন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। অন্য সবকিছু ঠিক থাকলে দীর্ঘমেয়াদে ডলারের বাজারে স্থিতাবস্থা আনতে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এটি নিশ্চিত করতে হলে হুন্ডি কারবারিদের নির্মূল করা জরুরি, পাশাপাশি ডলারের অবৈধ লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক সংকটের সময় কোনো কোনো দেশে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি অনুসরণ করা হলে সেটির ফল পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো দেশের রিজার্ভ দুর্বল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিনিময় হারে অস্থিরতা বাড়লে এবং একইসঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান থাকলে সেখানে এ নীতি কাজ করে না। বরং এটি বিনিময় হারের অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দেয় এবং হুন্ডি কারবারিরা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
আমরা অনেক দিন ধরেই লক্ষ করে আসছি, আমদানিকারকরা ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে চাহিদামতো ডলার কিনতে না পেরে কার্ব মার্কেট থেকে অতিউচ্চমূল্যে তা সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের একটি বড় অংশ হুন্ডির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। রপ্তানি আয়ের একটি অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলে না এসে আসছে হুন্ডির মাধ্যমে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও এখন হুন্ডি কারবারিদের প্রভাব বাড়ছে।
বৈধ বিদেশগামী বহু যাত্রীর লেনদেন হচ্ছে হুন্ডিতে। এ পরিস্থিতিতে নতুন পদ্ধতির সুফল মিলবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে এখন যে ধরনের সংকট বিরাজ করছে, তাতে ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুফল পেতে হলে ব্যাংক খাতসহ আর্থিক খাতের কার্যকর সংস্কার করে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স যাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ে, সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্যও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।