চক্রান্ত মোকাবিলা করে বেরিয়ে আসি, এটা ধরে রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৭ মাস আগে
ছবি : ফোকাস বাংলা

আজ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে শক্তিশালী ও বড় সংগঠন। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য দল আওয়ামী লীগ। প্রতিবার চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। শুক্রবার (১৭ মে) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতারা শুভেচ্ছা জানাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন (১৯৮১ সালের ১৭ মে) ফিরে এসেছিলাম। এতবড় দল পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা ছিল না। ছাত্রলীগ করার সময় নেতা হওয়ার চেষ্টা করি নাই। দলের প্রয়োজনে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটাই পালন করেছি। কিন্তু যখন এ দায়িত্ব (আওয়ামী লীগ সভাপতি) পেলাম, এটা বড় দায়িত্ব। কী পেলাম না পেলাম সেই চিন্তা করিনি। ভবিষ্যৎ কী সেই চিন্তাও করি না। চিন্তা করি দেশের মানুষের ভবিষ্যতটা আরও সুন্দরভাবে গড়ে দিয়ে যাব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

দলীয় নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এটাই মনে রাখবেন, একটা দল করি শুধু নেতা হওয়া না, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কী দিয়ে গেলাম– এটাই রাজনীতিকের জীবনের বড় কথা। এই কথাটা মাথায় রাখতে পারলে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে।

সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আর যেন যুদ্ধাপরাধী-খুনিরা যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।

১৯৭৫ পরবর্তী যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী-এমপি-উপদেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন তারাই অপরাধী হয়ে গেলো; যারা বিরোধিতা করেছিল, গণহত্যা করেছিল তারাই ক্ষমতায়– ওই অবস্থায় দেশে ফিরেছিলাম। আমার তো কিছুই ছিল না। একটা বিশ্বাস ছিল দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীর ওপর। এরপর লড়াই-সংগ্রাম করে এইটুকু বলতে পারি পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসেছে।

আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যদি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা না থাকে, দেশপ্রেম না থাকে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় না থাকে, তাহলে সেটা এগুতো পারে না। পঁচাত্তরের যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছিল, দেশের কোনও উন্নতি করতে পারেনি। আজ আমরা বলতে পারি দেশটা বদলে যাওয়া, বদলাতে পেরেছি। সামনে আরও বদলাতে হবে। কারণ আমার বাবার একটাই স্বপ্ন ছিল দেশটাকে গড়ার। আমাদের পরিকল্পনা সেটাই আছে।

আওয়ামী লীগের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, কারফিউ, প্রতি রাতে মার্শাল ল, দেশের মানুষের কোনও আশা নেই, শুধু হতাশা। এই হতাশ জাতিকে টেনে তোলা যায় না। তাদের মাঝে আশার আলো জাগাতে হয়, ভবিষ্যৎ দেখাতে হয়, উন্নত জীবনের চিত্র তুলে ধরতে হয়। তবেই মানুষকে নিয়ে কাজ করা যায়। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে বিদেশে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আশা করেছিলাম আমরা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। কিন্তু সেই ফিরে আসা আর হয়নি। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি জানতাম না যে আমাকে এত বড় একটা দায়িত্ব দেওয়া হবে। আমি কখনও এটা ভাবতে পারেনি।

জিয়া বাড়ি-গাড়ি দিতে চেয়েছিল, কিছুই নেইনি :

১৯৮১ সালের ১৭ মে-এর ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেদিন সাধারণ মানুষ সেখানে গিয়েছিল। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বক্তব্য রাখলাম। সব থেকে বড় কথা হল আমি যখন যাই তখন কামাল, জামাল, রোজি, খুকি সবাই বিমানবন্দরে ছিল। আমি যখন ফিরে আসলাম হাজার হাজার মানুষ, কিন্তু আমি পেলাম বনানীতে সারি সারি কবর।

তিনি বলেন, ৩২ নম্বরে আমরা মিলাদ পড়তে চাইলাম, আমাকে ঢুকতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। উল্টো বলেছিল বাড়ি দেবে, গাড়ি দেবে, সব দেবে। বলেছিলাম তার কাছ থেকে কিছু নেব না। খুনির কাছ থেকে আমি কিছু নিতে পারি না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন দিল্লিতে ছিলাম সেখানে গিয়ে জিয়াউর রহমান আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল, তার স্ত্রীও দেখা করতে চেয়েছিল, আমি দেখা করি নাই। লন্ডনে যখন তখনও দেখা করতে চেয়েছিল, আমরা দেখা করিনি। আমি যখন আসলাম ৩২ নম্বরে ঢুকতে দেবে না, উল্টো বাড়ি-গাড়ি সাধবে, সেটা তো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না।

তিনি বলেন, আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেই। কিন্তু অত্যন্ত এইটুকু বলতে পারি, তার বাংলাদেশ, কিছুটা হলেও তিনি যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন কিছুটা হলেও সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।

#