আকাশ দুর্ঘটনায় নিহত হন যেসব বিশ্বনেতা

: প্রদীপ সাহা
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

সম্প্রতি (১৯ মে ২০২৪) এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কিছু কর্মকর্তা নিহত হন। ধারণা করা হচ্ছে, বিরূপ আবহাওয়ায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাটি ঘটেছে  ভার্জাকন এবং জোলফা শহরের মধ্যে ডিজমার জঙ্গলে। তবে ইরানের প্রেসিডেন্টের এই রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে বিশ্লেষকরা নানা হিসাব-নিকাশ কষছেন। ইতিহাস ঘাটলে বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় এমন আরও অনেক রাষ্ট্রনায়ক নিহতের প্রমাণ পাওয়া যায়।

আরভিড লিন্ডম্যান : সুইডিস রিয়ার অ্যাডমিরাল ও দু’বারের প্রধানমন্ত্রী আরভিড লিন্ডম্যান ১৯৩৬ সালের ৯ ডিসেম্বর এক বিমান দুর্ঘটনায় যুক্তরাজ্যের ক্রয়ডন বিমানবন্দরে নিহত হন। উড্ডয়নের অল্প সময় পরই তাঁকে বহনকারী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘনার মূল কারণ ছিল ঘন কুয়াশা।

র‌্যামন ম্যাগসেসে : ফিলিপাইনের সপ্তম প্রেসিডেন্ট র‌্যামন ম্যাগসেসে ১৯৫৭ সালের ১৭ মার্চ এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। বিমানটি দেশটির শেবু শহরের মাউন্ট মানুংগালে বিধ্বস্ত হয়। ২৫ জন যাত্রীর মধ্যে একজন বাদে সবাই নিহত হন। র‌্যামন ম্যাগসেসে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।

ড্যাগ হ্যামারশোল্ড : জাতিসংঘের মহাসচিব ও সুইডিশ কূটনীতিক ড্যাগ হ্যামারশোল্ড ১৯৬১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। এতে ১৬ জন যাত্রী ছিলেন। বিমানটি তখন জাতিসংঘের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। জাম্বিয়ায় বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। হ্যামারশোল্ড তখন কঙ্গোর যুদ্ধ সম্পর্কে স্পর্শকাতর আলোচনা চালাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার ব্যাপারে তদন্তে বিমানটির কোনো যন্ত্রাংশের ত্রুটির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, খুব নিচু দিয়ে ওড়ার কারণে বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ে।

আবদুল সালাম আরিফ : ইরাকের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট আবদুল সালাম আরিফ ১৯৬৬ সালের ১৩ এপ্রিল বসরা শহরের অদূরে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। ১৯৫৮ সালে দেশটির রাজতন্ত্র উচ্ছেদের বিপ্লবে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

ক্যাস্তেলো ব্র্যাঙ্কো : ব্রাজিলের ২৬তম প্রেসিডেন্ট ক্যাস্তেলো ব্র্যাঙ্কো ১৯৬৭ সালের ১৮ জুলাই মধ্যআকাশে দুই বিমানের সংঘর্ষে নিহত হন। সাবেক এই সামরিক শাসকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এখনো রহস্য রয়েই গেছে।

লিওন এমবা  : আফ্রিকার দেশ গ্যাবনের প্রথম প্রেসিডেন্ট লিওন এমবা ১৯৬৭ সালের ২৮ নভেম্বর এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলে তাঁকে বহনকারী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

লিন বিয়াও : ১৯৭১ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লিন বিয়াও বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান এবং চীনে জাপানি ও জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় প্রখ্যাত কমান্ডার ছিলেন। লিন বিয়াও ১৯৭১ সালে নিখোঁজ হন। চীনা সরকার তখন বলেছিল যে, চেয়ারম্যান মাওকে হত্যার ব্যাপারে লিনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর মঙ্গোলিয়ায় এক বিমান দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। ফ্লাইটের সময় কী ঘটেছিল এবং কীভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, তা এখনো জানা যায়নি।

সঞ্জয় গান্ধী : ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে সঞ্জয় গান্ধী। ১৯৮০ সালের ২৩ জুন দিল্লির সাফদারজং বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর তাঁর বিমানটি নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলে। ফলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং সঞ্জয় গান্ধী নিহত হন।

ওমর তরিজোস : পানামার প্রেসিডেন্ট ওমর তরিজোস ১৯৮১ সালের ৩১ জুলাই পেনোনোমের কাছে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি পানামা এয়ারফোর্সের ডি হ্যাভিল্যান্ড কানাডার ডিএইচসি-৬ টুইন অটারে যাচ্ছিলেন। ওমর তরিজোস যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তির কাজ করছিলেন। পানামার একনায়ক ম্যানুয়েল নরিগার একজন অ্যাটর্নি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, তরিজোসকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু তার কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি।

সামোরা ম্যাচেল : আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের রাষ্ট্রপতি সামোরা ম্যাচেল ১৯৮৬ সালের ১৯ অক্টোবর বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেলেও ১০ জন বেঁচে যান। নিহতদের মধ্যে সরকারের সিনিয়র সদস্যরাও ছিলেন। তদন্তে দেখা গেছে, কম উচ্চতায় ওড়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা উপেক্ষা করেছিলেন বিমানের ক্রুরা। বিমানটি মোজাম্বিক থেকে জাম্বিয়ার দিকে যাওয়ার কথা থাকলেও এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় বিধ্বস্ত হয়েছিল।

রশিদ কারামি : লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রশিদ কারামি ১৯৮৭ সালের ১ জুন হেলিকপ্টারে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন। বৈরুতে যাওয়ার পথে তাঁর হেলিকপ্টারে এ বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে তিনিসহ অন্য আরোহীরা নিহত হন। লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় রশিদ কারামি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন।

জিয়াউল হক : পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক ১৯৮৮ সালের ১৭ আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত বিমানটি বাহাওয়ালপুরে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছাড়াও মার্কিন সামরিক মিশনের প্রধান এবং পাকিস্তানের সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাসহ ৩০ জন যাত্রী ছিলেন। আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। যান্ত্রিক কারণ বলা হলেও বিমান দুর্ঘটনার রহস্য এখনো সুরাহা হয়নি।

হাফিজ আল-আসাদ : সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদ দামেস্কের কাছে ২০০০ সালে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন। রহস্যজনক এক পরিস্থিতিতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। জানা যায়, তিনি নিজে বিমানটি চালনার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

জন গ্যারাং ডি মাবিওর : সুদানের নেতা জন গ্যারাং ডি মাবিওর ২০০৫ সালে এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি ভয়াবহ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সুদান পিপলস লিবারেশন আর্মির নেতৃত্ব দেন। তিনি উগান্ডার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে দক্ষিণ সুদানে ফিরছিলেন। ছয়জনের সঙ্গে উগান্ডার সাতজন ক্রুও তখন নিহত হন।

বিপিন রাওয়াত : ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন। এ হেলিকপ্টারে ছিলেন তাঁর স্ত্রী, সাতজন সেনাকর্মকর্তা এবং পাঁচজন ক্রু। উড্ডয়নের পর হঠাৎ বৈরি আবহাওয়া দেখা দেয়। তামিল নাড়ুর এক পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।

লেখক : কবি ও কলামিস্ট

#