সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আটকে গেছে বিভিন্ন ধরনের মামলায়। এর বেশির ভাগই অর্থ ঋণ ও সার্টিফিকেট মামলা। এ ছাড়া রিট করেও ঋণ পরিশোধ আটকে রাখা হয়েছে। এ মামলাগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি চলছে বছরের পর বছর। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেও এসব ঋণ আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ব্যাংকের টাকা আটকে থাকছে। এতে কমে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের সক্ষমতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ শেষে সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মামলাকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ২৫ হাজার ৮ কোটি, জনতা ব্যাংকের ২১ হাজার ৫৭৮ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১৩ হাজার ৫১২ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৮ হাজার ১১ কোটি, বিডিবিএলের ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ও বেসিক ব্যাংকের ১৪ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে এ ছয় ব্যাংকের আদালতের মামলায় আটকে থাকা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। মামলা কমিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণের অর্থ আদায়ের তাগিদ থাকলেও দেখা যাচ্ছে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মামলার সংখ্যা, বাড়ছে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ।
সূত্র জানান, আদালতের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের অর্থ আদায় প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলাপ-আলোচনা অর্থাৎ বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর)-এর মাধ্যমে খেলাপি আদায়ে জোর দিচ্ছে। গত ১২ মে বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় বলেছে, ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শুধু মামলা না করে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর)-এর মাধ্যমে ঋণ আদায় করতে হবে। বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ স্থিতির ন্যূনতম ১ শতাংশ নগদ আদায় এডিআরের মাধ্যমে করতে হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতেও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।