তুরস্কে নূহ (আ.)-এর ‘আর্ক’ বা নৌকা ও মহাপ্লাবনের অবস্থানগত সাইটটি বাইবেল যুগের মানুষের কার্যকলাপের প্রমাণ দেয় বলে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিজ্ঞানীরা তুরস্কের পূর্ব পর্বতমালায় নূহের নৌকার সম্ভাব্য স্থানের আশেপাশের রহস্য উন্মোচনে অনুসন্ধান করে চলেছেন৷ প্রাচীনকালের এ পৌরাণিক কাহিনির রহস্য উন্মোচনে জটিল এ অনুসন্ধান এবং এর গুরুত্ব খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
কয়েক দশক ধরে স্কলার ও অভিযাত্রীরা নূহের নৌকার অস্তিত্ব সম্পর্কে অনুমান করেছেন। নূহের নৌকা এমন একটি পৌরাণিক জাহাজ যা মানুষ ও প্রাণিকূলকে একটি মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা করেছিল। খ্রিস্টান, ইহুদি ও ইসলাম ধর্মের পরম্পরা বেয়ে এই পৌরাণিক কাহিনিটি সংস্কৃতিতে চলে এসেছে। কিন্তু এর সত্যতা নিশ্চিত করা বিজ্ঞানীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২১ সালে তুর্কি ও আমেরিকান তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টার সমন্বয়ে নূহের নৌকার স্থান অনুসন্ধানে একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প শুরু হয়েছিল। এই মাল্টিডিসিপ্লিমিনারি প্রকল্পটি ছিল ’মাউন্ট আরারাত ও নোহাস আর্ক রিসার্স টিম’। এ প্রকল্পটি ২০২২ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে, যেখানে নূহের নৌকা আছে বলে বিশ্বাস করা হয়, সেখান তেকে এর কার্যক্রম শুরু করে। তুরস্কের অ্যাগ্রির দোগুবায়াজিদ জেলার যেখানে দুরুপিনার (নৌকাসদৃশ) তৈরি হত সে অঞ্চল আগ্রহের তালিকায় নেয়, যা মূলত ১৯৫৬ সালে আবিষ্কৃত হয়।
সর্বশেষ গবেষণাটি নূহের নৌকার সম্ভাব্য সেই স্থানের শিলা ও মাটির নমুনা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। আশ্চর্যজনকভাবে এ গবেষণায় দেখা গেছে, এই নমুনাগুলো সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার বছর আগের। এ নমুনাগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালের যা বাইবেলে বর্ণিত মহাপ্লাবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ড. ফারুক কায়া মিসরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভাইস রেক্টর। তিনি জোর দিয়ে জানান, এই ফলাফল ৫৫০০-৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে যা এই অঞ্চলে মানুষের কার্যকলাপের ইঙ্গিত বহন করে, যা চ্যালকোলিথিক সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তার মতে, এই ফলাফলগুলো চূড়ান্তভাবে নূহের নৌকার অস্তিত্ব প্রমাণ করে না, তবে এগুলো সন্দেহাতীতভাবে অনুমানকৃত সেই সময়ের মানুষের জীবনাচরণের দিক নির্দেশ করে। তার মতে, এ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত প্রথম ফলাফল অনুসারে মনে করা হয়, চ্যালকোলিথিক সময়কাল থেকে (৫৫০০-৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে) এই অঞ্চলে মানুষের জীবনাচরণ ছিল।
এ অঞ্চলটি ইরান-তুরস্ক সীমান্ত থেকে দুই মাইলেরও কম দূরে অবস্থিত যা গ্রেটার মাউন্ট আরারাত শৃঙ্গের কাছে, যা নূহের নৌকার ন্যারেটিভের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। জেনেসিসে বলা হয়েছে, মহাপ্লাবনের পরে জাহাজটি ‘আরারাতের পর্বতমালায়’ বিশ্রাম নিয়েছিল।
দুরুপিনার তৈরির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকগুলো হল এটি নৌকার মতো গঠন, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৩৮ ফুট। মজার বিষয় হল, এই দৈর্ঘ্য বাইবেলে বর্ণিত নৌকার সঙ্গে মিলে, যার দৈর্ঘ্য তিনশ হাত, প্রস্থ পঞ্চাশ হাত এবং উচ্চতা ত্রিশ হাত ছিল। এই অস্বাভাবিক মিল স্কলার ও গবেষকদের কৌতূহলকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
যদিও এই আবিষ্কার অবশ্যই বাধ্যতামূলক। তবে এটিও ঠিক, সতর্কতা ও সন্দেহের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হওয়া। ডক্টর অ্যান্ড্রু স্নেলিং একজন তরুণ আর্থ ক্রিয়েশনিস্ট। তিনি জানিয়েছেন, মাউন্ট আরারাত নূহের নৌকার অবস্থান হতে পারে না, কারণ বন্যার পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত পর্বত তৈরি হতে পারে না।
নূহের নৌকার আখ্যানের স্থায়ী আবেদন থাকা সত্ত্বেও এটি স্কলার ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে বিতর্কের বিষয়। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ গল্পটিকে আক্ষরিক অর্থে ব্যাখ্যা করেন না। বরং তারা গভীর প্রতীকী ও তাৎপর্যসহ ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
নূহের নৌকার সম্ভাব্য স্থান নিয়ে চলমান গবেষণা হল একটি চিত্তাকর্ষক অভিযাত্রা। যা শেষ পর্যন্ত প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে জ্ঞানের নতুন মাত্রা দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা তাদের অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ চালিয়ে যাচ্ছেন, কারণ এ রহস্যটি সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রহেলিকায় আবদ্ধ রয়ে গেছে।
সূত্র : বিদেশি ইরেজি পত্রিকা, অনুবাদ : ইমামুল ইসলাম