কাঁচা চামড়ায় পাওয়া যায়নি সরকার নির্ধারিত দাম

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৬ মাস আগে
কাঁচা চামড়ায় পাওয়া যায়নি সরকার নির্ধারিত দাম

চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। আমাদের দেশে সাধারণত কোরবানিকে কেন্দ্র করে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু সরকার কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও এ দামে রাজধানীর কোথাও কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়নি। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনেছেন ৭০০-৮০০ টাকার মধ্যে। তবে সাইজ বড় হলে সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে চামড়ার দাম। কোরবানিদাতারা চামড়ার দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৫০-৫৫ টাকা। অর্থাৎ গতবছরের তুলনায় বর্গফুটপ্রতি চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে পাঁচ টাকা।

রাজধানীর পোস্তায় কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনাবেচা শুরু হয়েছে। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা গতবছরের চেয়ে এবার সামান্য বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনতে শুরু করেছেন। তবে তা সরকার নির্ধারিত দামে নয়। আড়তদাররা ও বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, গতবারের চেয়ে তারা দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেশি দিয়ে প্রতিটি কাঁচা চামড়া কিনছেন। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা বলছেন, এবারও গতবারের মতোই চামড়ার দাম কম। খুব একটা বাড়েনি। এমনকি কোরবানিদাতারাও আগের চেয়ে বেশি দামে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি।

ঈদের দিন সোমবার (১৭ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘু‌রে দেখা গে‌ছে, যারা কোরবা‌নি দিয়ে‌ছেন তারা আগের বছরের মতোই চামড়ার নামমাত্র দাম পে‌য়ে‌ছেন। আবার অনেকেই মাদরাসা ও এতিমখানার লোকজনকে বিনাপয়সায় দি‌য়ে দিয়েছেন।

সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘু‌রে দেখা গে‌ছে, যারা কোরবা‌নি দিয়ে‌ছেন তারা কাঁচা চামড়া বি‌ক্রির লোক খুঁজে পাচ্ছেন না। যারা বি‌ক্রি কর‌তে পে‌রে‌ছেন তারাও নামমাত্র দাম পে‌য়ে‌ছেন। আবার অনেকে কাঙ্ক্ষিত দাম ও ক্রেতা না পে‌য়ে মাদরাসা ও এতিমখানার লোকজনকে বিনাপয়সায় দি‌য়ে দি‌চ্ছেন।

১ লাখ ৩০ হাজার টাকার গরু‌ কোরবানি দিয়েছেন এক ব্যক্তি। তিনি জানান, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করেছে যদি এই দামে চামড়া বিক্রি করা যেত, তাহলে আমার কোরবানির গরুর চামড়ার দাম কম হলেও ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকা হত। কিন্তু দাম ব‌লে‌ছে মাত্র ৪০০-৪৫০ টাকা। তাই‌ ‌বি‌ক্রি না ক‌রে এলাকার এতিমখানায় দিয়ে দিয়েছি।

মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি বছর ট্যানারি মালিকদের চামড়ার চাহিদা একটু কম। কারণ ট্যানারিতে পুরাতন চামড়ার মজুত থাকায় গত কয়েক বছর ধরে কাঁচা চামড়ার চাহিদা ছিল খুবই কম। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন, ইসরাইল যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। ফলে, বিশ্বজুড়ে চামড়াজাত পণ্য ও চামড়াজাত জুতার মতো বিলাসবহুল পণ্যের দাম ও চাহিদা দুটোই কমেছে। চাহিদা ও দাম কমার এ প্রবণতা বাংলাদেশের কাঁচা চামড়ার বাজারে প্রভাব ফেলেছে। ফলে দেশের বাজারে চামড়ার দাম কমেছে।

আড়তদাররা বলছেন, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সরকার চামড়ার দাম বেঁধে দিলেও এ দামে চামড়া কেনেন না তারা। এক লাখ টাকার গরুর কাঁচা চামড়া এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ৬০০-৭০০ টাকা বিক্রি হয়।

কয়েক আড়তদার বলছেন, এক যুগ আগে যে চামড়ার দাম ২০০০ বা ২২০০ টাকা ছিল সেটি এখন ৭০০ টাকা। এর মূল কারণ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে চামড়ার বাজারের নিয়ন্ত্রণ। ফলে তারা যে দামে ঠিক করে দিচ্ছে এর বাইরে চামড়া কেনার সুযোগ নেই কারও।

চামড়া নিয়ে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ঢাকা সিটি কপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা। সারাদিন সরকারের বেঁধে দেওয়ার দামের চেয়ে কম দামে চামড়া বেচা-বিক্রি হলেও এসব সংস্থার কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতার উদ্দিন বলেন, লবণ ও মৌসুমি শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার কারণে এবার সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা সম্ভব হয়নি। এছাড়া চামড়ার দাম সরকার নির্ধারণ করলেও বাজারের বাস্তবতা আসলে অন্য। সরকার লবণসহ চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা কাঁচা চামড়া কিনেছেন। ওই দামের সঙ্গে মেলালে হবে না। কারণ একটা কাঁচা চামড়ায় আরও ২০০ থেকে ২৫০ টাকার লবণ মেশাতে হয়। ‌

  • কোরবানি
  • চামড়া
  • #