সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ঠিকভাবে ঈদুল আজহা উদযাপনও করতে পারেনি। অবিরাম বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা উজানি ঢলে সিলেটের তিনটি নদীর ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া আরও কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
এদিকে সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং মুষলধারে বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে। ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদী। পাউবোর তথ্য মতে মঙ্গলবার (১৮ জুন) নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারী বৃষ্টিতে নদী ও ছড়া উপচে পানি সিলেট নগরীতে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সিলেট নগরীর ভেতরে অনেক বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। নগরীর শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত।
এদিকে, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৯টা সুরমা নদীর কানাই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ও একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও সারি গোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ও আজ সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতে বৃষ্টিপাত কমে এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও জানান তিনি।
সিলেট জেলা প্রশাসন জনায়, মোট ৫৩৮টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৪৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
সার্বিক বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বন্যাসহ যেকোনো দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনায় সিলেট জেলা ও উপজেলার কর্মকর্তাগণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।