চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন প্রশ্নফাঁসে জড়িতরা

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৯ মাস আগে

বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির প্রশ্নফাঁসে জড়িত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ সাত আসামি ৭ আসামি আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। সেই জবানিতে তারা দিয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে কোন বছর কারা বিএসএস ক্যাডার হয়েছেন; কারা নেপথ্যে প্রশ্নফাঁসের মদদ দিয়েছেন, পিএসসির কোন কোন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানতেন; তাদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এসেছে প্রশ্নফাঁসের মূলহোতাদের নামও।

প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের হোতা আবেদ আলীর সঙ্গে ধরা পড়া তার কয়েক দোসরের মধ্যে অন্যতম ঠাকুরগাঁওয়ের প্রিয়নাথ রায়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আবেদ আলী বলেছেন, প্রিয়নাথ রায় চাকরিপ্রার্থীদেরকে তার কাছে পৌঁছে দিতেন। চুক্তি হতো ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকায়, অগ্রিম নেওয়া হতো ২ থেকে ৫ লাখ টাকা। হতো সেই বিপুল অর্থের ভাগবাটোয়ারা। আর এসব করতেন প্রিয়নাথ রায়। প্রায় ৪৫০ জনকে প্রশ্নপত্র দিয়ে চাকরি পাইয়ে দিতে তিনি সহযোগিতা করেছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে এলাকায় তেমন সম্পদ না থাকলেও দিনাজপুর ও ঢাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রিয়নাথের আছে বাড়ি-গাড়িসহ অঢেল সম্পত্তি।

এদিকে, লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানার চরআলগী গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে নোমান সিদ্দিক। এক সময় একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে চাকরি করতেন। ২০০৪ সালে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন চাকরির তদবির করতেন তিনি। তখন এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় অর্থ বিভাগের অডিটর প্রিয়নাথ রায়ের সঙ্গে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বিক্রি করে নোমান ঢাকার পাশেই রীতিমতো একটি তৈরি পোশাক কারখানার মালিক হয়েছেন। থাকেন মিরপুর ১০ নম্বরের সেনপাড়া পর্বতার ৪৫৮/৪ নম্বর ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটের মালিকও তিনি।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মো. সাখাওয়াত হোসেন তার জবানবন্দিতে বলেছেন, ৮ম শ্রেণি পাস করা সাখাওয়াত পানির ফিল্টারের ব্যবসায়ী। পল্টনের কালভার্ট রোডের একটি বাসার দ্বিতীয় তলায় তার পানির ফিল্টারের গুদাম। ব্যবসায় সহযোগিতা করেন তারই আপন ভাই সিদ্ধেশ্বরী কলেজের ছাত্র সায়েম হোসেন। পিএসসির অফিস সহায়ক মো. সাজেদুল ইসলাম তার বন্ধু। এই সূত্রে দামি গাড়ি নিয়ে সাজেদুল প্রায়ই তার সঙ্গে দেখা করে চাকরি প্রত্যাশী কেউ থাকলে জানাতে বলেন। আফতাবনগরে সাজেদুলের একটি ফ্ল্যাট। সবশেষ গেল ৫ জুলাই হওয়া রেলের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার ৪৬ জন প্রার্থীকে তার পল্টনের গুদামে রাখা হয়। সেখানে রাতভর ফাঁস হওয়া প্রশ্ন মুখস্থ করে পরদিন পরীক্ষা দিতে যান চাকরি প্রার্থীরা।

সাখাওয়াতের ভাই সায়েম সিআইডিকে জানিয়েছেন, সাজেদুল তাকে ফোন করে পল্টন থেকে চাকরি প্রার্থীদের গুদামে নিয়ে রাখতে বলেন। একটি মাইক্রো থেকে আটজন চাকরিপ্রত্যাশীকে গুদামে নিয়ে যান। এভাবে ধাপে ধাপে মোট ৪৬ জনকে ওই গুদামে নেওয়া হয়।

এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে আলোচিত পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী জানিয়েছে, ঢাকায় তিনি একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ির মালিক। গ্রামে আছে তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। সিআইডির কর্মকর্তাদের ধারণা আবেদ আলীর সম্পদ এর চেয়ে বেশি রয়েছে।

আরেক অভিযুক্ত উপপরিচালক মো. আবু জাফর। গ্রামের বাড়ি, পটুয়াখালির গলাচিপার কলাগাছিয়া ইউনিয়নে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন ৪-৫ বছর আগে ৬০ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এই আবু জাফর বেশ কয়েক বছর ধরে তার স্ত্রী জ্যোতির নামে মালিবাগের চৌধুরী পাড়ায় একটি কোচিং সেন্টার করেছেন। যেখানে সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীরা কোচিং করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, কোচিং সেন্টারের আড়ালে প্রশ্নপত্র কেনা বেচার কাজ করতেন জাফর।

  • দুর্নীতি
  • প্রশ্নফাঁস
  • #