সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিদ্যমান কোটা বাতিলসংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রায়ের সিদ্ধান্ত, নির্দেশনা ও আদেশ (অপারেটিভ অংশ) সংবলিত অংশ প্রকাশ করা হয়।
আইনজীবীরা বলছেন, আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। আগামী ৭ আগস্ট শুনানির দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে আপাতত হাইকোর্টের রায় কার্যকর হবে না।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা নিয়ে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সাতজন সন্তান। চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৫ জুন নির্দেশনাসহ রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে রায়ে আদালত বলেছেন, ২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ; ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের তা বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি–নাতনির কোটা) আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি–নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হল। একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি–ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ (যদি অন্যান্য থাকে) সব কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, প্রয়োজনে উল্লেখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এ রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটাপূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্যপদ পূরণ করায় বিবাদীদের স্বাধীনতা রয়েছে।
হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। ১১ জুলাই তিনি গণমাধ্যমকে জানান, রায়ে সব কোটা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। তবে প্রয়োজনে সরকার তা কমাতে বা বাড়াতে পারবে। আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। ফলে এ রায় এখনই বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
হাইকোর্টের এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ওঠে। সেদিন সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ শুনানি মুলতবি করেন। এর মধ্যে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী গত মঙ্গলবার আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ১০ জুলাই আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন।
আপিল বিভাগের আদেশের পর ১০ জুলাই অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আপিল বিভাগ বিষয়স্তুর (সাবজেক্ট ম্যাটার) ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। এ সময়ে হাইকোর্টের রায় কার্যকর থাকবে না। ফলে যেমন ছিল, তেমনই থাকবে।