চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক শিক্ষার্থী মারা যান। ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগ তুলে মারধেরের ঘটনা ঘটে। ঢামেকের সভাকক্ষে পরিচালকের সাথে ছাত্ররা আলোচনায় বসে দোষী চিকিৎসকদের বিচারের দাবি করেন। অন্যদিকে, চিকিৎসককে মারধর করায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেন তারা।
শনিবার (৩১ আগস্ট) ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগে ডা. ইমরান নামে নিউরোসার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসককে মারধর করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বিকেল থেকে রাত পযর্ন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা যায়।
হাসপাতালটির সভাকক্ষে পরিচালকের সাথে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় বসে, দোষী চিকিৎসকদের বিচার দাবি করেন। অন্যদিকে, চিকিৎসককে মারধর করায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।
চিকিৎসকরা জানান, শিক্ষার্থী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) ঢুকে চিকিৎসকদের মারধর করেন। এতে হামলার শিকার তিন চিকিৎসক আহত হন। এ ঘটনার পর রাতে হাসপাতালে বিক্ষোভ মিছিল করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দায়ীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন চিকিৎসকরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া না হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। আহত চিকিৎসকরা হলেন-নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ইমরান, মাশরাফি ও জুবায়ের।
হামলার শিকার চিকিৎসক ইমরান বলেন, বিইউবিটির এক শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমাদের এখানে মারা যান। পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো কথা না বলেই ওটি থেকে বের করে আমাদের তিন চিকিৎসককে মারধর করেছেন। এমনকি আমাদের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড থেকে মারতে মারতে পরিচালকের রুম পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের কর্মপরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে এবং যারা আমাদের গায়ে হাত তুলেছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের গ্রেপতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আমরা কর্মবিরতিতে যাব।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক, সেনাবাহিনী এবং বিইউবিটির ভিসি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সভাকক্ষে আলোচনা করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হবে এবং যারা চিকিৎসকদের গায়ে হাত দিয়েছে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে গ্রেফতার করার জন্য বলা হয়েছে। এরপর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দিলে চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্ম বিরতিতে যাবেন।
নিউরোসার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, একজন শিক্ষার্থী মারা গেছে, আমরা মর্মাহত কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমাদের চিকিৎসকদের তারা মারধর করতে পারেন। আমার চিকিৎসকদের যদি কোনো অবহেলা থাকে বা কোন ধরনের গাফিলতি থাকে, তাহলে তারা হাসপাতালের পরিচালকের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারতেন। কিন্তু তারা সেটি না করে, চিকিৎসকদের মারধর করেছেন যা খুবই দুঃখজনক এবং মানা যায় না।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, আজকে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করছি, তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমি নিলাম। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন হবে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে বিইউবিটির শিক্ষার্থী আহসানুল হক দীপ্তর মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে ওই শিক্ষার্থী পরিচয় পাওয়া যায়নি পরে পরিচয় পাওয়া যায়। এরপর ওই শিক্ষার্থীর পরিবার এবং বিইউবিটির শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেলে এসে জানতে পারেন চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে তাদের বন্ধু মারা গেছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা নিউরোসার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধর করেন।