৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের সাথে সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতা শুরু হয়েছে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিতর্কিত অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিনের নেতৃত্বে। ইতোমধ্যে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৩ আগস্ট ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব শেষ হয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল অদুদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক এরপরে চেয়ারম্যান হওয়ার কথা সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামালের। উপাচার্য না থাকায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নূরনবীসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করেন তিনি। এমনকি সাদাদলের একটি দল কোষাধ্যক্ষের সাথে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করেন। কোষাধ্যক্ষ বিভিন্ন চাপের মুখে ১৫ আগস্ট রাতে অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিনকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের পরবর্তী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। বিতর্কিত ব্যক্তিকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ায় বিভাগীয় শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থীরা ও কর্মচারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে, যার জন্য তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে পারেননি।
পরবর্তীতে ২০ আগস্ট কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মাধ্যমে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নিয়ে ২১ আগস্ট দোয়া-মাহফিলের নামে সাবেক শিক্ষার্থীদের ডেকে বিভাগীয় কয়েকজন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করান। তার প্রকাশ্যে ইন্দনে বিভাগীয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল অদুদ, অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল ও ড. মোবারক হোসেনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। এমনকি ২৫ আগস্ট কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভা ডেকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল অদুদ, অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, ড. মোবারক হোসেন ও সাদিদ জাহান সৈকতের সকল কোর্স বাতিল করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। ২৮ আগস্ট পুনরায় বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভা ডেকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল অদুদ, অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল ও ড. মোবারক হোসেনের নামে যেসকল পরীক্ষা কমিটি রয়েছে তা অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, অধ্যাপক ড. নূরুল্লাহ ও ড. সালেহ উদ্দিনের মধ্যে বণ্টন করে নেন। বর্তমান ছাত্র-উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে অধ্যাপক ড. নূরুল্লাহ ও অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হককে ছাত্র-উপদেষ্টা করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। পরীক্ষা কমিটির দায়িত্ব নিয়ে তড়িঘড়ি করে ২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরু করে যেখানে মাস্টার্সের অন্তত ০৮জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের নিরাপত্তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশে একজন শিক্ষক বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বর্তমান শিক্ষকদের হয়রানি করছেন। শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছেন। কতিপয় শিক্ষকদের অবৈধ সুবিধা প্রদানের মধ্যে দিয়ে নিজের বলয় বৃদ্ধি করছেন। কতিপয় শিক্ষার্থীকে রুমে নিয়ে শিক্ষক বানানোর প্রলোভন দিচ্ছেন। আবার আঞ্চলিক বলয়ে কতিপয় শিক্ষার্থীদের সুবিধাদি দেওয়ার আশ্বাসে তার এসকল অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন একই বিভাগের চেয়ারম্যান থাকাকালে বিভিন্ন অনিয়মনের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও প্রক্টর না থাকায় তড়িঘড়ি করে এতজন শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে পরীক্ষা শুরু করায় প্রশ্ন উঠেছে তার ভুমিকা নিয়ে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিনের মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।