গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ও শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী শওকত আলী দিদার নিহত হয়েছেন। এ সময় সাংবাদিকসহ আরও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি কমপক্ষে ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ঘোনাপাড়া মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শওকত আলী ঢাকায় ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন বলে জানা গেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন।
আহতদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় এসএম জিলানী, তার স্ত্রী রওশন আরা রত্না এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বাদশার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন চিকিৎসক।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে তারা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রাম মোড়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির একটি পথসভা শেষে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২শ থেকে ৩শ নেতাকর্মী মাইকিং করে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এতে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কমপক্ষে ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিন বলেন, ‘আমরা গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রামের মোড়ে শান্তিপূর্ণ পথসভা শেষ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর বাবা-মায়ের কবর জিয়াতের উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলাম। ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছালে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল ফকির, স্থানীয় আওয়ামী নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্ব গাড়িবহরে হামলা করা হয়।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া এলাকার আওয়ামী নেতা আলিমুজ্জামান বলেন, বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা গাড়িবহর নিয়ে যাওয়ার সময় ঘোনাপাড়া এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ও শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। তাদের বাধা দিলে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমি নিজেও আহত হয়েছি।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, আজ বিকাল সাড়ে ৫টায় আহত হয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও তার স্ত্রী রওশন আরা রত্নাসহ ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের অধিকাংশের মাথাসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে দেশি অস্ত্রের কোপ রয়েছে। তাদের সাবইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তাদের মধ্যে তিন জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন। কেন এ ঘটনা ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে কেউ কেউ বলছেন সেখানে ব্যানার টানাটানি নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আমাদের জানামতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার নামে একজন নিহত হয়েছেন এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।