ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবসা : বাংলাদেশ হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকা!

: ফিরোজ আহমেদ
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

বাংলাদেশ ইতমধ্যেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন ‘বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি’ (বিএসসিপিএলসি)-এর মাধ্যমে বর্তমানে SMW4 এবং SMW5 [SMW নামে হচ্ছে- South East Asia-Middle East-West Europe (SEA-ME-WE অথবা SMW)] নামে যাথাক্রমে ২০০৬ এবং ২০১৭ সালে দুটি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করেছে। SMW4 এর ব্যান্ডউইডথ সক্ষমতা হচ্ছে ৪,৬৫০ জিবিপিএস এবং SMW5 এর ব্যান্ডউইডথ সক্ষমতা হচ্ছে ২,২০০ জিবিপিএস। দুইটি সবমেরিন কেবল এর মোট ব্যান্ডউইডথ সক্ষমতা হচ্ছে ৬,৮৫০ জিবিপিএস। ইল্লেখ্য, বর্তমানে বিএসসিপিএলসির আওতায় SMW6 প্রকল্প চলমান রয়েছে যা সম্পন্ন হলে আগামী ২০২৫ এর শেষ নাগাদ নতুন করে আরো ১৩,২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তখন তিনটি সবমেরিন কেবন একত্রে ২০,০৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সক্ষমতা আর্জন করবে।

বর্তমানে দেশের সর্বমোট ব্যান্ডউইডথ চাহিদা প্রায় ৫,৫০০ জিবিপিএস যার প্রায় ৪৫ শতাংশ দুইটি (SMW4 এবং SMW5) সাবমেরিন কেবল কর্তৃক সরবরাহ করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ৫৫ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ITC (International Terrestrial Cable) কেবল ব্যবহার করে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। যে কারণে প্রতিবছর আমাদের ব্যয় হচ্ছে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টকায় ৬০০ কোটি টকার বেশি।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করা হয় তা দুই প্রকার, একটি হচ্ছে পিওর ইন্টারনেট যার সিংহভাগই সিঙ্গাপুর হতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বৈদেশিক যোগাযোগ, টেলিমেডিসিন, ভিডিও কনফারেন্সিং, লোকাল ক্যাশ ফিল ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করার জন্য আমদানি করা হয়। আর অন্যটি হচ্ছে ক্যাশ ব্যান্ডউইডথ যা Google, Facebook, Akamai ইত্যাদি কোম্পানির ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস প্রদানের জন্য ভারতের ডাটা সেন্টার হতে ITC’র মাধ্যমে আমদানি করা হয়।

Google, Facebook, Akamai ইত্যাদি কোম্পানির ইতোমধ্যেই ভারতে ডাটাসেন্টার রয়েছে এবং বাংলাদেশ নিকটবর্তী দেশ হওয়াতে এবং বাংলাদেশ যেহেতু ITC কেবল এর মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আমদানি করার আনুমদন দিচ্ছে তাই তারা বাংলাদেশে ডাটা সেন্টার স্থাপন না করে ভারত হতে ক্যাশ ব্যান্ডউইডথ আমদানি করছে। যার পরিমাণ হচ্ছে ২,৮০০ জিবিপিএস।

বাংলাদেশ সরকার যদি ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি করার অনুমোদন না দেয়, তাহলে ওই কোম্পানিগুলো তাদের সার্ভিস গুলো চলমান রাখার জন্য বাংলাদেশে ডাটা স্থাপন করতে বাধ্য হবে। তখন আমাদের উপর থেকে এই বিশাল রপ্তানি ব্যয়ের বোঝা কমবে যেটা সরাসরি রিজার্ভ উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া যখন উল্লেখিত কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার স্থাপন করবে তখন বাংলাদেশে তাদের বড় বিনিয়োগ করতে হবে; যে কারণে বাংলাদেশে অনেক তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে যেটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খুবই সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও বাংলাদেশে সরকার বাড়টি রাজস্ব অর্জন সক্ষম হবে।

তাছাড়া বাংলাদেশের ডাটা সেন্টার স্থাপন করলে ২,৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথের বিপরীতে মাত্র ২৮০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আমদানি করে বর্তমান সার্ভিসের তুলনায় কয়েক গুণ ভাল সার্ভিস প্রদান করা সম্ভব। কাড়ন বর্তমানে ITC ব্যান্ডউইডথ এ latency 10 মিলি সেকেন্ড এর বেশি কিন্তু লোকাল সার্ভার স্থাপন করলে তার ল্যাটেন্সি কমে আসবে মাত্র ২ মিলি সেকেন্ড এ যে কারণে ভিডিও দেখার কোয়ালিটি কমপক্ষে ৪-৫ গুণ বেড়ে যাবে।

তাছাড়া Google, Facebook, Akamai-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ক্যাশ সার্ভার স্থাপন করলে মায়ানমার এ আমাদের ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করার সুযোগ উন্মোচিত হবে, যেভাবে বর্তমানে ভারত বাংলাদেশে রপ্তানি করার সুযোগ পাচ্ছে।

 লেখক :  উদ্যোক্তা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ

  • ‘বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি’
  • ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ
  • #