খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর হামলার দায় অন্তর্বর্তী সরকার এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে পাহাড়ের সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের সহ-সভাপতি নতুন কুমার চাকমা পাহাড়ে খুন ও বিহার-ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ মন্তব্য করেন।
একইসঙ্গে সংগঠনটি ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষিত তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ৭২ ঘণ্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছে।
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি হামলাকে বর্বরোচিত ও ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে নতুন কুমার চাকমা বলেন, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সদরে বাস স্টেশনের বটতলা লারমা স্কোয়ারে মিছিলসহকারে এসে সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং দোকান-ঘরবাড়িসহ একটি বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করে। এ সময় সেনা-সেটলারদের হামলায় গুরুতর আহত ধন রঞ্জন চাকমা (৫০) খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন আহত হন।
অন্যদিকে দীঘিনালার উক্ত হামলা-অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে রাতে খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙহিয়া, উপালিপাড়া ও স্বনির্ভর এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এতে জুনান চাকমা (২২) ও রুবেল ত্রিপুরা (২৪) নামে দুজন নিহত হন এবং ১২ জনের অধিক গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর জখম ৭ জনকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৯ জন ছাত্র ও সাধারণ লোককে আটক করে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আহত অবস্থায় থানায় হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে এদিন রাঙামাটিতে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের’ উদ্যোগে দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হলে সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়। সেটলারদের এই পরিকল্পিত হামলায় হতাহতের খবর পাওয়া গেছে, তবে তার সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি।
বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পাহাড়িদের ওপর এ ধরনের বর্বর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তার সরকার এ হামলার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার কোনো বিচার আজও হয়নি। হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এমন হামলা পাহাড়িদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।
তিনি অবিলম্বে পাহাড়িদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেনা-সেটলারদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আহত-নিহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।