সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা লাভ করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার জনমুখী নেতৃত্ব, মেধা, মননশীলতা ও প্রজন্মকেন্দিক চিন্তাদর্শন রাজনীতির বলয়ে এক অফুরন্ত সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। প্রান্তিক মানুষকে সবল, ক্ষমতাবান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার সহজাত প্রচেষ্টা তার নেতৃত্ব বলয়ের কেন্দ্রে সবসময় দৃঢ়ভাবে প্রোথিত থাকে। উন্নয়ন-অগ্রগতির চলমান চাকায় বহমান থাকে প্রান্তিক মানুষের মুখচ্ছবি, তাদের হাসি-কান্না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের অনঢ় ও অহর্নিশ দিককে আরো কোমল করে, মানবিক করে।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। চলছে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র। তবুও দেশ আমাদের, দেশকে রক্ষায় আমাদের সোচ্চার হতে হবে। অপশক্তি মোকাবিলায় নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। আর এ সংগ্রামের অনন্য বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনিই এদেশের প্রান্তজনের প্রাণ, তিনিই ভাবেন গরিব-দরিদ্র-দুস্থদের কথা।
জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই সরকার দেশের এবং দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। যা আমরা বর্তমান সরকারের মধ্যে দেখতে পাই। ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ- যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগাপ্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
১৩ লাখ গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে ভাগ্য বদলে দিয়েছে ৫০ লাখ অসহায় মানুষের। বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযুদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ৯০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২০ হাজার টকায় উন্নীত করায় উপকৃত হয়েছে প্রায় ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। ভবিষ্যতে স্মার্ট প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে শতভাগ শিশুকে উপবৃত্তির আওতায় এনেছে সরকার। যার প্রত্যক্ষ সুবিধা ভোগ করতে পারছে ১ কোটি ৩০ লাখের অধিক শিশু। বর্তমান সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। এখানে নারী, শিশু ও সেবাপ্রার্থীদের জন্য দেওয়া হচ্ছে ২৭ রকমের ওষুধ ও সেবা। নদীভাঙন ও নবসৃষ্ট এলাকাসহ মোট ৩৬৯টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ , ২৭৭৬টি হাট-বাজার উন্নয়ন, ১২৪৬টি সামাজিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল মাসিক ১৪৬২ টকা। বর্তমান সরকারের সময়ে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দাঁড়িয়েছে ৮৩০০টাকায়।
ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবক’টি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়।
নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের উপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে।
কৃষিখাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। সারাবিশ্বে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৭টি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং হয়েছে, তার মধ্যে ড. মাকসুদ করেছেন ৩টা। তাঁর এই অনন্য অর্জন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গর্বিত।
বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লক্ষেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বল্পসুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে এর শাখা স্থাপন করা হয়েছে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত ২০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অভিবাসন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিদেশ গমনেচ্ছুক জনগণকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকেও এ সেবা গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে হয়রানি ছাড়াই স্বল্পব্যয়ে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে শ্রমিকগণ যেতে পেরেছে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর এ যাবৎকালে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বাগ্রে।
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ৫৫টি জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশনের কাজ সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট ২১টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপয্ক্তু প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবেলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ।
বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন, যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সাথে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৩৪৮ কিলোওয়াট ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ৩৫ লক্ষ গ্রাহককে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ৬৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ঔষুধ, ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্যশিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ঔষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়েছে। হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ মহিলা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে এ কার্যক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।
প্রান্তিক মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আট লাখ ২৩ হাজার ঘরবাড়ি বানানো হয়েছে এবং প্রায় ৪১ লাখেরও বেশি হতদরিদ্র মানুষ পুনর্বাসিত হয়েছে। আশ্রয়ণের পাশাপাশি প্রায় একই ধরনের প্রকল্প হচ্ছে বীর নিবাস, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, গুচ্ছগ্রাম, দুর্যোগ সহনীয় ঘর ও গৃহায়ণ তহবিলের ঘর। এসব প্রকল্প মিলিয়ে এযাবৎ জমির মালিকানাসহ ঘরের মালিক হয়েছে ৪১ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ। তবুও কোথায় যেন আমাদের কথা বলতে হয়। কারণ প্রান্তজনের প্রাণ জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। গণমানুষের জীবনমান উন্নত হবে, প্রান্তজনের প্রাণ জননেত্রী শেখ হাসিনা আবারো দুঃখী জনগণের মুখে ফোটাবে সহজাত প্রাণবন্ত হাসি, শুভ্রতায় ছোঁয়া লাগবে প্রতিটি প্রাণে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক