দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে মজুরিকাঠামো ও নীতি সংস্কার, শ্রম আইন সংস্কার ও আইনি সুরক্ষা শক্তিশালী করাসহ পাঁচটি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছে আইএলও। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) আইএলওর ঢাকা কার্যালয় এক বিবৃতিতে এসব পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এতে বলা হয়, তৈরি পোশাক ও অন্য খাতের শ্রমিকদের বিভিন্ন অভিযোগ থেকে উদ্ভূত অসন্তোষের ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আইএলও। এই অসন্তোষের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগত সমস্যা উঠে এসেছে, যা যথাযথ মনোযোগ ও সমাধান করা প্রয়োজন। এজন্য মজুরিকাঠামো ও নীতি সংস্কার, শ্রম আইন সংস্কার ও আইনি সুরক্ষা শক্তিশালী করা, শক্তিশালী শিল্প–সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুরক্ষা এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
শ্রম অসন্তোষ নিরসনে কারখানার মালিক, শ্রমিক ও সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা করা পরামর্শ দিয়ে সংস্থাটি জানায়, সামাজিক সংলাপ বিভিন্ন অংশীজনকে নিয়ে সমাধান ও বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করে, এটি সুশাসনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি শুধু টেকসই ব্যবসা অনুশীলন ও উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা নয়; বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।
মজুরিকাঠামো ও নীতি সংস্কারের বিষয়ে আইএলও জানিয়েছে, ন্যায্য মজুরি নির্ধারণের জন্য একটি প্রমাণভিত্তিক ও লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয় মজুরি নীতি প্রণয়ন করা দরকার। ন্যূনতম মজুরি ব্যবস্থার সংস্কার এবং শ্রমিক ও মালিকদের পরামর্শ অন্তর্ভুক্তকরণের মাধ্যমে মজুরি–সম্পর্কিত অভিযোগ সমাধানের পাশাপাশি জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় মজুরি নির্ধারণে সাহায্য করবে।
শ্রম আইন ও আইনি সুরক্ষা শক্তিশালী করার বিষয়ে সংস্থাটি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে। একই সঙ্গে আইনটি আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলসহ (ইপিজেড) সব শ্রমিকের জন্য বাধ্যতামূলক করা।
এ ছাড়া শক্তিশালী জাতীয় শিল্প–সম্পর্ক ব্যবস্থা নিশ্চিতে আইএলও একটি স্বাধীন বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রতিষ্ঠান প্রবর্তনের পাশাপাশি মামলা পরিচালনা উন্নয়নে শ্রম আদালত ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। সামাজিক সুরক্ষায় সংস্থাটির পরামর্শ আইএলও কনভেনশনের সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যা বাংলাদেশের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ বাড়বে।
পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য (ওএসএইচ) নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারকে ওএসএইচ কনভেনশন ১৫৫ ও ১৮৭ অনুসমর্থন করে একটি সমন্বিত জাতীয় ওএসএইচ পদ্ধতি উন্নয়নেও পরামর্শ দিয়েছে আইএলও।
প্রসঙ্গত, মজুরি বৃদ্ধি এবং বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে ‘ইনক্রিমেন্ট’ দেয়াসহ ১৮টি দাবি নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে আন্দোলন করছেন তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা। তাদের আন্দোলনের জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে অনেক পোশাক কারখানা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের সেই ১৮ দফা দাবি মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার ও মালিকপক্ষ। তবে দাবি মেনে নেয়া পরও অনেক পোশাক কারখানায় এখনও শ্রমিক অসন্তোষ চলছে।