ভেঙে দেওয়া হল একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ, উঠল নানান অভিযোগ

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ২ মাস আগে

হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে আইনজীবীর সঙ্গে এক বিচারপতির কথোপকথন নিয়ে আদালতকক্ষে হইচই, হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। এর এক পর্যায়ে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারপতিরা। বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার দিনের প্রথমার্ধে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ২৬ আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি দ্বৈত বেঞ্চটি পুনর্গঠন করে দিয়েছেন।

সকালে আদালতে উপস্থিত একাধিক আইনজীবী জানান, আগাম জামিন আবেদন মেনশনের সময় সকাল ১১টার দিকে আইনজীবী আশরাফ রহমান কার্যতালিকায় অনিয়মের বিষয় আদালতের নজরে আনেন। বেঞ্চ কর্মকর্তারা অনিয়ম ও অর্থ লেনদনের মাধ্যমে তালিকা করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। একপর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘চেন আমাকে, এক থাপ্পড় দেব।’ তখন ওই আইনজীবীসহ উপস্থিত বেশ কয়েকজন আইনজীবী আপত্তি জানান। এ নিয়ে হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। প্রায় আধা ঘণ্টার মতো চলে। পরে বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করেন।

এ ঘটনায় প্রধান বিচারপতি বরাবর ২৬ আইনজীবীর দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের ৭ নম্বর বেঞ্চে (মূল ভবন) অবকাশকালীন এখতিয়ারাধীন শুরু থেকেই মামলার কার্যতালিকা তৈরি ও শুনানিতে ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। এ বিষয়গুলো নিরসনের জন্য আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতকে অবহিত করার পরও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আজ মঙ্গলবার সকালে মেনশনের সময় আইনজীবীদের পক্ষে ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আপনার আদালতের বেঞ্চ অফিসারেরা অনিয়ম করে সব জমা করা মামলা ঠিকমতো দৈনিক কার্যতালিকায় দেননি। এতে অসংখ্য আইনজীবী বঞ্চিত হয়েছেন।’

জবাবে বিচারপতি আতাউর রহমান খান ক্ষিপ্ত হয়ে হাত উঁচিয়ে ওই আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমি বারের (আইনজীবী সমিতি) নেতা ছিলাম। তোমাকে কে সাহস দিয়েছে আমার আদালতের বিরুদ্ধে কথা বলতে? এজলাস থেকে বের হও, বেয়াদব, তোকে থাপ্পড় দিয়ে পুলিশে দেব।’ এ সময় আদালতে অবস্থানরত আইনজীবীরা বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ করলে তিনি এজলাস ত্যাগ করেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি বলেন, আইনজীবী ও আদালতের আচরণ অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। জ্যেষ্ঠ বিচারপতির আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উপস্থিত অধিকাংশ আইনজীবী সমস্বরে প্রতিবাদ জানান। এ সময় আদালতকক্ষে হইচই ও হট্টগোল হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক পর্যায়ে বিচারপতিরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এজলাস ত্যাগ করেন। এরপর আর আদালত বসেননি।

জানতে চাইলে আইনজীবী আশরাফ রহমান বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) আগাম জামিন আবেদন মেনশন করে জমা দেন আইনজীবীরা। জমা দেওয়া কিছু সুনির্দিষ্ট মামলা আজকে কার্যতালিকায় এসেছে, সবগুলো আসেনি। এতে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অভিযোগ আছে, যারা টাকা দিয়েছে, তাদের মামলাগুলো কার্যতালিকায় এসেছে। যখন বেঞ্চ কর্মকর্তাদের এই অনিয়মের কথা প্রকাশ্যে আদালতে বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, তখন বিচারপতি ব্যক্তিগতভাবে বাজে ব্যবহার, অসৌজন্যমূলক ও অপ্রীতিকর আচরণ করেন। তিনি শারীরিকভাবে আমাকে আঘাত করার হুমিক দেন।’

এ ঘটনা নিয়ে আইনজীবীদের আবেদনের পর হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ পুনর্গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বেঞ্চ গঠন-সংক্রান্ত গত ২৪ সেপ্টেম্বরের এক আদেশ অনুসারে ১ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিচারকাজ পরিচালনার জন্য বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ গঠন করা হয়। গঠনবিধির আংশিক সংশোধন করে বেঞ্চ গঠন-সংক্রান্ত আদেশ আজ ওয়েবসাইটে দেখা যায়। এ অনুসারে ১৬ ও ১৭ অক্টোবর (আগামীকাল ও পরশু) বিচারকাজ পরিচালনার জন্য বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।

সূত্র : প্রথম আলো

  • হাইকোর্ট
  • #