প্রতিবছর ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালিত হয়, যা বৈশ্বিক সমাজের দারিদ্র্য দূরীকরণে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ২০২৪ সালের জন্য এই দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের অবসান, ন্যায়ভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য একসঙ্গে কাজ করা’। এই প্রতিপাদ্যটি দারিদ্র্য বজায় রাখা অসাম্যের মূল কারণগুলির প্রতি মনোযোগ দেয় এবং কীভাবে একযোগে কাজ করে ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব, তা তুলে ধরে।
দারিদ্র্য বর্তমান বিশ্বের অন্যতম গুরুতর এবং ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে থাকা সমস্যা। যদিও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবুও কোটি কোটি মানুষ এখনও চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করছে। বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, চরম দারিদ্র্য বলতে প্রতিদিন ২০১৭ সালের ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে একজন ব্যক্তির ২.১৫ টাকার কম আয়ে বেঁচে থাকার কথা বোঝায়। এই অবস্থাকে শুধুমাত্র নিম্ন-আয়ের সমস্যা হিসেবে দেখা যায় না, বরং এটি জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোরÑ যেমন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, আশ্রয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা- অভাব নির্দেশ করে।
২০২২ সালের শেষ নাগাদ, বিশ্ব জনসংখ্যার ৮.৪ শতাংশ, বা প্রায় ৬৭০ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে বলে অনুমান করা হয়। এই পরিসংখ্যান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যেও বিদ্যমান অসাম্য ও অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে তুলে ধরে। অনেক অঞ্চলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটলেও, এর সুফল প্রায়ই সুষমভাবে বিতরণ হয় না, যার ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত থাকে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকালে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। অনুমান করা হচ্ছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ বিশ্ব জনসংখ্যা, বা প্রায় ৫৭৫ মিলিয়ন মানুষ এখনও চরম দারিদ্র্যের মধ্যে আটকা পড়তে পারে। এই পূর্বাভাসটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোর গভীর সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি, এবং সংঘাতের মতো বাইরের আঘাতের কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে।
দারিদ্র্য বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হল জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি, সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাত, এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে আরও খারাপ হয়েছে। এই সংকটের প্রতিক্রিয়ায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০৫টি দেশ ও অঞ্চল প্রায় ৩৫০টি সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে নগদ সহায়তা, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি, এবং প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার জন্য ভর্তুকি অন্তর্ভুক্তি ছিল। তবে, এই ব্যবস্থাগুলোর
কার্যকারিতা দেশভেদে ভিন্ন হওয়ায়, অনেক মানুষ এখনও পর্যাপ্ত সহায়তা পাচ্ছে না।
দারিদ্র্য বিমোচনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর (এসডিজি) সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত, বিশেষ করে- এসডিজি ১. দারিদ্র্য দূরীকরণ। এই লক্ষ্যটি ২০৩০ সালের মধ্যে সকল প্রকার চরম দারিদ্র্য দূর করার জন্য কাজ করছে। তবে বর্তমান পথচিত্র দেখাচ্ছে যে বৈশ্বিক সহযোগিতা, আর্থিক বিনিয়োগ, এবং নতুন সমাধান ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়।
দারিদ্র্য মোকাবিলা শুধু একটি অর্থনৈতিক সমস্যা নয়; এটি মানব মর্যাদা ও সমতার প্রশ্নও। দারিদ্র্য জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে এবং এটি প্রধানত নারী, শিশু এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এছাড়া, এটি অন্যান্য বৈশ্বিক সংকট, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, সংঘাত, এবং সামাজিক অসাম্যের সাথে গভীরভাবে যুক্ত।
তাই দারিদ্র্যের মূল কারণগুলো- যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অর্থনৈতিক সুযোগে অসম প্রবেশাধিকার-সমাধানে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্বজুড়ে সংগঠিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল চরম দারিদ্র্য হ্রাস এবং শেষ করা সম্ভব, এবং একটি আরও ন্যায়সঙ্গত ও সমতাপূর্ণ ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করা যাবে।
দারিদ্র্য শুধু আর্থিক সংকট নয়, এটি একটি বহুমাত্রিক সমস্যা যা অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাবের সাথে জড়িত। এটি প্রায়শই গভীরভাবে প্রোথিত বৈষম্য এবং সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগকৃত বৈষম্যের ফলাফল।
সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়ন, যেমন লিঙ্গ, বর্ণ, জাতিগত পরিচয় বা সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য, প্রয়োজনীয় সেবায় প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং সুযোগ পাওয়ার পথে প্রাতিষ্ঠানিক বাধাগুলি দারিদ্র্যকে আরও গভীর করে তোলে। এবারের প্রতিপাদ্যটি দারিদ্র্যকে একটি পৃথক সমস্যা হিসেবে দেখা থেকে সরে এসে বৃহত্তর সামাজিক কাঠামোগুলির দিকে মনোযোগ দেয়, যেগুলি দারিদ্র্যের বুনিয়াদ তৈরি করে।
বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যের চিত্র এখনও অনেক কঠিন। যদিও গত কয়েক দশকে চরম দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবে এখনও বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষ, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৫ শতাংশ, দৈনিক ২.১৫ ডলারের নিচে বেঁচে আছে।
কোভিড-১৯ মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ও সশস্ত্র সংঘর্ষের মতো বিশ্বব্যাপী সংকট লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এই সংকটগুলি বিশেষভাবে নারীদের, শিশুদের, আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের মানুষের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে সমতার ভিত্তিতে উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য একটি বহুমাত্রিক এবং দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। যদিও গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, তবুও এখনো বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। দারিদ্র্যের প্রকৃতি এখানে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়; বরং এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা এবং অন্যান্য মৌলিক সেবাগুলোর অভাবে বহুবিধ সমস্যার জন্ম দেয়।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমছে, তবে এখনও প্রায় ২০ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যের মাত্রা বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষদের আয়ের উৎস কম, যা তাদের জীবিকা নির্বাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে গ্রামের মানুষের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া, মৌসুমি বেকারত্ব এবং প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের প্রভাব সমাজের সর্বস্তরে অনুভূত হয়। বিশেষ করে নারী, শিশু, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এই সমস্যার শিকার হয় বেশি। দারিদ্র্য শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি, স্বাস্থ্যহীনতা এবং শিক্ষার ঘাটতির মূল কারণ হিসেবে দেখা যায়। অর্থের অভাবে অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারে না, ফলে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যায়। স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারও দারিদ্র্যের কারণে সীমিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য মোকাবিলায় সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, যেমন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালু রয়েছে, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। এছাড়া, এনজিওগুলোও ক্ষুদ্রঋণ এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
বিশেষত, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ভূমিকা রেখেছে। ক্ষুদ্রঋণ গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে, যা তারা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ব্যবহার করতে পারে। এর ফলে অনেক মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে এবং তাদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জও দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ দারিদ্র্যের চক্রকে আরও গভীরতর করছে। বাংলাদেশ একটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেখানে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, এবং নদীভাঙনের মতো দুর্যোগ প্রায়শই দেখা যায়। এসব দুর্যোগ মানুষের সম্পদহানি ঘটায় এবং তাদেরকে নতুন করে দরিদ্রতার ফাঁদে ফেলে।
এছাড়া, কোভিড-১৯ মহামারি দেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, যার কারণে অনেক মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছে এবং দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছে। মহামারি পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং দারিদ্র্য বিমোচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া, যা আরও সময়সাপেক্ষ এবং পরিকল্পিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকার, এনজিও, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একযোগে কাজ করা জরুরি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণ একটি প্রধান লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিতে হবে।
দারিদ্র্য বিমোচনে শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি, যেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়ে আবারও দারিদ্র্যের মধ্যে না পড়ে।
সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও, এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সামাজিক বৈষম্য হ্রাস, অর্থনৈতিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করা, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে স্থায়ী পরিবর্তন আনাই হবে ভবিষ্যতের দারিদ্র্য বিমোচনের চাবিকাঠি।
২০২৪ সালের এই প্রতিপাদ্যটি সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়ন বন্ধ করার ওপর জোর দেয়, যার মধ্যে রয়েছে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য সমস্ত ধরনের বৈষম্য ও নিপীড়ন। সমাজের মধ্যে বৈষম্য, বিশেষ করে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য, এখনও দারিদ্র্য বিমোচনের একটি প্রধান বাধা।
নারীরা, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত বৈষম্যের কারণে দারিদ্র্যের শিকার হয়। নারীরা যে অনানুষ্ঠানিক যত্ন কাজের বোঝা বহন করে, তা তাদের আয়-উৎপাদনশীল কাজে অংশগ্রহণকে সীমিত করে। একটি ন্যায়বিচারমূলক সমাজ গড়তে হলে এই লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে হবে এবং নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। একইভাবে, জাতিগত এবং বর্ণগত সংখ্যালঘুদের প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়নও দারিদ্র্যের চক্রকে আরও দৃঢ় করে তোলে। বহু দেশে, আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তারা জমি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অভাবে ভুগছে।
এই বঞ্চনা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং তাদের জীবিকা উন্নত করার সুযোগও কমিয়ে দেয়। সুতরাং দারিদ্র্য বিমোচন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কর্মসূচি নয়, পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন যা সমস্ত মানুষের জন্য সমতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে, তা তাদের বর্ণ বা জাতিগত পরিচয় যাই হোক না কেন।
প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়ন, যেমন দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা এবং বর্জনমূলক নীতিমালা, দারিদ্র্যকে আরও গভীর করে তোলে। দুর্নীতি প্রয়োজনীয় পরিষেবা যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সুরক্ষা থেকে সম্পদ সরিয়ে নেয়, যা দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুর্বল বা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি প্রায়শই দরিদ্রদের সাহায্য করতে ব্যর্থ হয়, ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দরিদ্র অবস্থায় আটকে থাকে। এর বিপরীতে, শক্তিশালী, স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো নিশ্চিত করতে পারে যে সমস্ত নাগরিকের জন্য সমানভাবে সম্পদ বিতরণ করা হয় এবং তারা প্রয়োজনীয় সুযোগ ও সেবার সঠিক প্রাপ্তি নিশ্চিত করে।
এই বছরের প্রতিপাদ্যটি একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বকে তুলে ধরে। ন্যায়বিচারপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়তে বিভিন্ন সামাজিক খাত, যেমন সরকার, সিভিল সোসাইটি, বেসরকারি খাত এবং ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারগুলির দায়িত্ব হলো নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যা সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, বৈষম্য হ্রাস এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
লেখক : গবেষক ও উন্নয়নকর্মী