আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো নিষিদ্ধ করা এবং তাদের রাজনীতি সীমিত করার বিষয়ে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো মতামত দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ওনারদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অবস্থান তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করা হবে, সেটা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা দেখতে পারবেন। এটার আইনি ও প্রশাসনিক দিক আছে, তা অচিরেই দেখতে পারবেন। নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হলে বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে হেয়ার রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সাংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় সংলাপে অংশ নেয় কয়েকটি রাজনৈতিক দল, সে বিষয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
মাহফুজ আলম বলেন, আগে কিছু দলের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। বাকি দলগুলোর সঙ্গে আজ আলোচনা হলো। নির্বাচন এবং সংস্কার নিয়ে কথা বলেছে দলগুলো। আওয়ামী লীগের রাজনীতি, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমস, গণহত্যা এবং এর বিচার কার্যক্রম নিয়ে তারা কথা বলেছে।
তিনি বলেন, সংলাপে আবারও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি এসেছে। ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে নিষিদ্ধের কথা এসেছে। তাদের রাজনীতি কীভাবে সীমিত করা যায়, সে বিষয়টিও এসেছে। ১৪ দলের শরিক দল, যারা গণভবনে বসে জুলাইয়ের শেষে এবং আগস্টের শুরুতে আওয়ামী লীগের হাত শক্তিশালী করেছে, আওয়ামী লীগকে গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে মাঠে এবং সরকারের নীতিনির্ধারণে, তাদের কীভাবে ফেলা হবে সে বিষয়ে সংলাপে কথা বলেছে এবং সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। ওনারদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অবস্থান তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করা হবে। সেটা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা দেখতে পারবেন। এটার আইনি ও প্রশাসনিক দিক আছে, তা অচিরেই দেখতে পারবেন। নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হলে বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা ১৪ দল নিষিদ্ধ অথবা শরিক অনেকগুলো দল আছে। আমরা জাতীয় পার্টিকে আপাতত রাখছি না। তারা কিন্তু নীরব সমর্থন দিয়ে গেছেন এবং অবৈধ নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকার অবস্থান পর্যালোচনা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা-পর্যালোচনার ভিত্তিতে এটা হবে। এটা সরকার একা সিদ্ধান্ত নেবে না। যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল এবং গণহত্যার পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছে এবং জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে- সরকার তাদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪) কীভাবে অবৈধ ঘোষণা যায়, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে অভিমত দিয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
৫ আগস্টের পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশ ছাড়ার বিষয়ে কাদের সহযোগিতা ছিল বলে সরকার মনে করে- এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার। কেন, কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে সরকার তদন্ত করছে। একটা বিষয় স্পষ্ট তা হলো, ৫-৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে কোনও সরকার ছিল না, প্রায় এক সপ্তাহের মতো পুলিশ ধর্মঘটে ছিল, ফলে অনেক ক্ষেত্রে শুনছেন যে, লোকটা পালাচ্ছেন, কিন্তু পুলিশ দিয়ে ধরতে হবে, সেই জায়গায় ওই সময় একটা গ্যাপ ছিল। কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল তাদের গ্রেফতার করা, এখনও চেষ্টা করছি- যারা বাংলাদেশের আছেন, তাদের গ্রেফতার করতে। তারা কীভাবে পালালো তা নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।
৫ আগস্ট পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে পালানোর বিষয়ে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের বিষয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে, এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ওই সময়তো আমাদের সরকার ছিল না। তবে আমরা সামগ্রিকভাবে সব বিষয় নিয়ে তদন্ত করছি।
একাধিক রাজনৈতিক দল উপদেষ্টা পরিষদের কলেবর বৃদ্ধি ও বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সরকার কী ভাবছে, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে এ ধরনের প্রস্তাব এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি এ বিষয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সবাইকে অবহিত করবেন।
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর।