পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিনকে ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। ১০৭ বোতল ফেনসিডিল চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে উদ্ধারের পর তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির ভুতিপুকুর বিওপির সদস্য, তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ সদস্য ও তাদের গাড়িগুলো স্থানীয় হাজারো মানুষ অবরুদ্ধ করে রাখেন। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে ভজনপুর ইউনিয়নের ভুতিপুকুর সীমান্তের ভাঙ্গীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিনের বাড়িতে মাদক আছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি ও পুলিশ বাড়ি ঘেরাও করে। পরে বিজিবি বাড়িতে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের শোবার ঘর থেকে একটি বস্তায় ১০৭ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে এবং চেয়ারম্যানকে আটক করে গাড়িতে তোলে ভুতিপুকুর বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যেতে শুরু করে। এরই মধ্যে চেয়ারম্যানকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু করে। বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাজারো মানুষ চেয়ারম্যানকে বিজিবির গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেয়। সেইসঙ্গে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পাশাপাশি পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে তারা।
খবর পেয়ে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক, তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী, তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার সরকার, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদৎ হোসেন রঞ্জু, সদস্যসচিব রেজাউল করিমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সেখানে যান। স্থানীয়দের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর তদন্তপূর্বক এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ফেনসিডিল নিয়ে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সাইফুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান নামে চেয়ারম্যানের দুই প্রতিবেশী বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানকে মাদকের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের চেয়ারম্যান মাদক তো দূরের কথা ধূমপানও করেন না। ইউপি চেয়ারম্যানের মানহানিকর এমন ঘটনায় আমরা মর্মাহত। আমরা দোষীদের বিচার চাই।
চেয়ারম্যান মসলিমউদ্দিন বলেন, তিনদিন আগে আমার পরিষদের কয়েকজন সদস্য তিনটি ভারতীয় গরু আটক করেন। ভুতিপুকুর বিজিবির সদস্যরা গরু তিনটিকে চাইলে আমরা সেগুলো খোয়াড়ে দিই। যেহেতু সেগুলো জনপ্রতিনিধিরা আটক করেছেন, তাই গরুগুলোর মালিক বের হয় কিনা জানার জন্য কয়েকদিন খোয়াড়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ নিয়ে ১৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক জামাল উদ্দিনের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। শুক্রবার বেলা ১১টার পর হঠাৎ বিজিবি আমার বাড়ি ঘেরাও করে। ঘরে প্রবেশ করে আমাকে বলে আপনার ঘরে ফেনসিডিল আছে। একটি বস্তা দেখিয়ে বলে এই বস্তায় ফেনসিডিল আছে। পরে আমাকে বিজিবির গাড়িতে উঠতে বলে তারা। গাড়িতে উঠতে শুরু করলে শত শত গ্রামবাসী আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করছি। যাতে আর কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা না হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, অস্ত্র ও ফেনসিডিল আছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে ১৮ বিজিবির টুআইসি মেজর রিয়াদ মোর্শেদসহ বিজিবির সদস্যরা চেয়ারম্যানের বাড়িতে অভিযানে যান। আমার সঙ্গে চেয়ারম্যানের কোনও বিরোধ নেই। গরু নিয়ে বিজিবির সঙ্গে কোনও ঘটনা ঘটেনি। চেয়ারম্যানের বাড়িতে ১০৭ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। তাকে আটক করলে স্থানীয়রা ব্যারিকেড দেয়। যেহেতু গ্রামবাসী তার পক্ষে তাই আমরা মামলা করছি না। জব্দকৃত ফেনসিডিল থানায় জমা দেওয়া হবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী বলেন, পঞ্চগড়-তেতুঁলিয়া মহাসড়ক অবরোধের বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যাই। পরে জানতে পারি বিজিবি ইউপি চেয়ারম্যান মোসলিম উদ্দিনের বাসায় অভিযান পরিচালনা করতে যান। উত্তেজিত স্থানীয়রা বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। ঘটানাস্থলে গিয়ে আমি ও বিজিবির অধিনায়ক তদন্ত করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে স্থানীয়রা যানবাহনসহ বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের ছেড়ে দেন। সড়ক অবরোধ তুলে নেন।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক বলেন, একটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।