বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষকে অপসারণ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ জোর করে নিয়োগ নেন। এবার তাদের অপসারণ চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে কলেজের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন তারা।
বেলা পৌনে ৩টায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নেয়ামুল হক, উপাধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিবিএ’র সহযোগী শাহিনুর সোবহান নঈমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা। এরপর বেলা ৩টার সময় শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ধানমন্ডির বাসার দিকে রওনা দেন।
কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম নেহা আন্দোলনকারীদের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নেয়ামুল হক ও উপাধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিবিএ’র সহযোগী অধ্যাপক শাহিনুর সোবহান নঈমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
এদিকে এই চার শিক্ষককে অপসারণ ও অবাঞ্ছিত ঘোষণার পর কোনও শিক্ষককে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করে শাহরিয়ার মাহিরসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থী নিশাত বলেন, যেসব শিক্ষক আমাদের সঙ্গে অত্যাচার ও অনিয়ম করেছেন, তাদের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে উপস্থিত হয়েছি। আমরা সবাই জানি গত ৫ আগস্টের পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে বসে অধ্যাপক নেয়ামুল স্যার কী করেছেন। আমরা রানিং স্টুডেন্ট অ্যালামনাইসহ সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এসব নিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে বসবেন, কিন্তু তারা না বসে আমাদের হয়রানি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এসবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন অধ্যক্ষ নেয়ামুল হক ও উপাধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান এবং তাদের পক্ষে প্রোপাগান্ডাকারী শিক্ষকরা। আমরা তাদের পদত্যাগ চেয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নোটিশ জারি করেছেন। আমরা এই নোটিশকে অবৈধ ঘোষণা করছি। একই সঙ্গে তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।
শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, জাহাঙ্গীর স্যার শিক্ষার্থী শাহরিয়ারকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষও হুমকি দিয়েছেন। তিনি আমাকেও বাদ দেননি। আমাকে ও ইয়াসমিনকে ডেকে অধ্যক্ষ নানা ধরনের গালাগালি করেছেন, খারাপ মন্তব্য করেছেন। অধ্যক্ষ অন্য শিক্ষকদের দিয়েও আমার প্রতি জুলুম করেছেন—সেটা পরীক্ষায় হোক, অ্যাটেনডেন্সে হোক। আমি যখন তাদের সামনে বসি, তখন আমার সঙ্গে আই কন্টাক্ট করতে চান অধ্যক্ষ।
এদিকে আন্দোলনের পরে গতকাল মঙ্গলবারের পরিচালনা পর্ষদ জরুরি সভা ডাকে। সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা হলো—
১. শিক্ষার্থীদের গালাগালি করার কারণে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ২. কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সুমনের বহিষ্কারের কারণ তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে অতি দ্রুত তাকে কর্মে যোগদান করানো হবে। ৩. এর আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রিটেইক বাবদ যেসব ফি নেওয়া হয়েছে, তা ফেরত দেওয়া হবে। ৪. স্পেশাল ক্লাস বা কোচিংয়ের জন্য কোনও ফি নেওয়া হবে না। ৫. আন্দোলনকারী কোনও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। ৬. পিকনিকের ব্যাপারে ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৭. কোনও শিক্ষার্থীর অভিভাবককে হয়রানি বা অপমান করা হবে না।
নোটিশে আশা প্রকাশ করে বলা হয়, যেহেতু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে, তাই তারা চলমান আন্দোলন বন্ধ করে কলেজের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে।
তবে গভর্নিং বডির এসব সিদ্ধান্ত মানেনি শিক্ষার্থীরা। আবারও বিক্ষোভ শুরু করেছেন তারা। আজ কলেজ খোলার কথা থাকলেও আন্দোলনের কারণে কোনও ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কলেজে গিয়ে শিক্ষকদেরও তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি।