জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেন, যারা এখনো পানিতেই নামেনি, তারা এখন আমাদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলছে। তাদের ধারণা, জাতীয় পার্টির ধ্বংস হলে তাদের ভোটগুলো আমরা পাব। পলিটিক্সে তাদের ম্যাচুরিটি আসেনি, যারা এ কথা বলে। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালে জাতীয় পার্টিকে হাসিনা সরকার জোর করে নির্বাচনে এনেছিল।
গতকাল বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুসংযোগের প্রতিবাদে শুক্রবার (১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
জিএম কাদের বলেন, একটি গোষ্ঠী অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমরা আওয়ামী লীগের দোসর, এসবের অপবাদের সত্যতা নেই। এর পেছনে ষড়যন্ত্র চলছে, এসবের সঙ্গে কিছু বুদ্ধিজীবীও জড়িত।
জিএম কাদের আরও বলেন, সমাবেশ ও সংগঠন করা অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। জাপা একটি নিবন্ধিত দল, আমরা সংগঠন করার অধিকার প্রাপ্ত, কিছু শর্ত রয়েছে,আমরা সমাবেশের অনুমতি চাইলে ডিএমপি কমিশনার অনুমতি দিয়েছে। জাপা কখনও সন্ত্রাস করে না, আমরা সবসময় শান্তির পক্ষে, আমরা কখনও টেন্ডারবাজি দখলবাজি করিনি।
তিনি বলেন, আমাদেরকে বলা হয় আওয়ামী লীগের দোসর? কীভাবে ২০০৮ সালে নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। সেই শেখ হাসিনার সরকারে আমি মন্ত্রী ছিলাম। তাই বলে আমরা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও অন্যায়ের ভাগিদার হবো কেন?
বৃহস্পতিবার রাতে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার পরপর সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় জাপা অফিসে হামলার ঘটনায় দলটির নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি সানাউল্লাহ শানু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম আহত হন।
জাতীয় পাার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে জিএম কাদের বলেন, সরকার যেমন নির্বাচনে যেতে চাপ দিত, তেমনি অন্যদিক থেকেও জোর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সবাই আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছিল। ২০১৪ ও ’২৪-এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে জোর করে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছিল।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই কেন অপরাধ হবে? সাংবিধানিক অধিকার এটা। শেষ ৩টি নির্বাচন নিয়ে তথ্য ও ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। বিএনপি-আওয়ামী লীগের হামলা, মামলা ও দলীয় বিভক্তির রাজনীতির শিকার জাতীয় পার্টি হয়েছে বলেও দাবি করেন জি এম কাদের।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টিকে ‘জাতীয় বেইমান’ অ্যাখ্যা দিয়ে দলটি নিশ্চিহ্ন করা ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। এ নিয়ে তিনি কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন। একই ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমও। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র শ্রমিক জনতার ব্যানারে’। ওই কর্মসূচি ঘিরে দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কিছুক্ষণ পর জাপা অফিসে আগুন দেওয়া হয়।