যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল ৫ নভেম্বর। য নির্বাচন ঘিরে ডেমোক্র্যাট শিবিরের প্রচার যতটা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছিল, ততটা হয়নি। এবারের নির্বাচনে স্পষ্টতই ডেমোক্র্যাটরা প্রতিকূলতার মুখে পড়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন মাত্র ৪০ শতাংশ মার্কিন। আরও কম মাত্র ২৮ শতাংশ মনে করেন, দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। আর ইতিহাস বলছে, জনগণের অসন্তোষের মুখে এখন পর্যন্ত কোনো দলই হোয়াইট হাউসে টিকে থাকতে পারেনি।
উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীন দলগুলোও রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মুখে পড়ছে। ডেমোক্র্যাটরা যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন, তা এই বৃহত্তর প্রবণতারই অংশ। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া এবং সর্বশেষ জাপানে ক্ষমতাসীনদের পরাজয় হয়েছে বা তাঁরা বড় ধাক্কা খেয়েছেন। এই তালিকায় হয়তো ফ্রান্স ও কানাডাও নাম লেখাতে যাচ্ছে।
এবার যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটা দেখা যাক। মহামারির সময় পরিস্থিতি শক্ত হাতে সামলেছিল ডেমোক্রেটিক পার্টি। এছাড়া কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক, সীমান্ত নীতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় ভালো কাজ করেছে তারা। তবে এগুলোর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা সমস্যার দিকে তেমন নজর দিতে পারেনি। ফলে নাগরিকদের মধ্যে যে হতাশা দেখা দিয়েছে, তা ডেমোক্র্যাটদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
২০০৮ সাল থেকে মার্কিন রাজনীতিতে ডেমোক্র্যাট ও উদারনীতির আধিপত্য রয়েছে। পরপর চারটি নির্বাচনে জনগণের ভোটে জয় পেয়েছে দলটি (জনগণের ভোট বেশি পেলেও ২০১৬ সালে ইলেকটোরাল কলেজের জটিল হিসাবে তাদের পরাজয় হয়েছে)। মার্কিন সমাজের জন্য তারা নানা ইতিবাচক আইন পাস করেছে। নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ে বরং অনেকেই শঙ্কার মধ্যে পড়েছিলেন। তাঁদের কাছে ট্রাম্প বর্ণবাদী এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
বাইডেন ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর থেকেই ডেমোক্র্যাটদের এই আধিপত্য উধাও হতে শুরু করে। করোনার সময় নানা বিধিনিষেধের ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছিল, তা সামনে আসতে থাকে। উচ্চ দ্রব্যমূল্য, কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের হতাশা প্রকাশ শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের তরুণেরা।
বাইডেনের আমলে দ্রব্যমূল্য ও সুদহার বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে সরকারের অত্যধিক ব্যয়। জ্বালানি তেল উত্তোলনের অনুমতি প্রত্যাহার ও কিস্টোন পাইপলাইন প্রকল্প বন্ধের কারণে তেলের দাম বেড়েছে। দুর্বল সীমান্ত নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অভিবাসী ঢুকেছেন। এ ছাড়া গৃহহীন মানুষ ও অপরাধের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। একের পর এক এমন সমস্যার মুখে ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা উদারনীতি ছেড়ে ডানপন্থার দিকে ঝুঁকেছেন। ডেমোক্র্যাটদের প্রতি মানুষের সমর্থন কমে যাওয়া বা রিপাবলিকান পার্টির সমর্থন বৃদ্ধি এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয়ের হওয়ার বড় সুযোগ রয়েছে।
সবক্ষেত্রেই দেখা গেছে, জরিপে ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন। আর পিউ রিসার্চ, এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, টাইমস/সিয়েনা কলেজের মতো বড় বড় জরিপে দেখা গেছে, ২০০৪ সালের পর থেকে এই প্রথম দলগতভাবে ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে রিপাবলিকানরা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে রিপাবলিকান পার্টির নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যাও বাড়ছে।
২০০৮ সালে যখন ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন তাঁরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ৪০ বছরব্যাপী নানা নীতি হাতে নিয়েছিলেন। গত ১৬ বছরে এ সমস্যা সমাধান তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তৎপরতা দেখিয়েছেন। তারপরও দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট নন অনেক ভোটার।
ডেমোক্র্যাটদের প্রতি মানুষের সমর্থন কমে যাওয়া বা রিপাবলিকান পার্টির সমর্থন বৃদ্ধি এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয়ের হওয়ার বড় সুযোগ রয়েছে। মহামারির সময় ও পরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে মানুষের মোহভঙ্গ করেছে। তাঁরা আর দলটিকে নতুন করে সুযোগ দিতে চান না।