চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলিতে ফেসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা-এসিড নিক্ষেপে ৯ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলায় ইসকন সমর্থকরা জড়িত বলে জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন। বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। এদিকে, এ হামলার ঘটনায় নগরের কোতোয়ালী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে আটক ৮২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫০০ জনকে আসামি করেছে।
পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানান, হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এরা হলেন নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান এবং পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলাম, বিপ্লব বেপারি, আবু সায়েম সেজান, সাইদ হাসান, ফয়েজ, নাইম, আশিকুর ও শাহজাহান হোসেন শাওন। এরমধ্যে ফয়েজ এসিডদগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
উপ পুলিশ কমিশনার রইছ উদ্দিন হামলার ঘটনায় পুলিশের ৯ জন আহত হওয়ার তথ্য দিয়ে বলেন, ‘ইসকনকে নিয়ে দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ওসমান আলী নামে এক ব্যক্তিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে- এমন তথ্য ৯৯৯-এ পেয়ে আমাদের কোতোয়ালী থানা পুলিশ রেসপন্স করে। তারা সেখানে গেলে অবরুদ্ধ ওসমান নামে ওই ব্যক্তিকে উচ্ছৃঙ্খলাবাহিনীর থেকে জনতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতির অবনতি হলে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ এবং সেনাসদস্যসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন। ছিনিয়ে নেওয়ায় বাধা দেওয়ায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ইটপাটকেল ও এসিড নিক্ষেপ করলে আমাদের ৯ জন সদস্য আহত হন। যার মধ্যে একজন এসিড দগ্ধ হয়েছেন।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটকের সংখ্যা জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিকে আটক করা হলেও যাচাই বাছাই করে আমরা ৮২ জনকে আটক দেখিয়েছি। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ইসকন সমর্থক। কয়েকজন মুসলিম থাকতে পারে। এটিও যাচাই-বাছাই চলছে।
হাজারী লেইনে ওষুধের পাইকারি দোকান সিলগালা করায় রোগীরা ভোগান্তিতে পড়বে কি না জানতে চাইলে রইছ উদ্দিন বলেন, বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা আমাদের নেই। নিরাপত্তার স্বার্থে, যেন সেখানে কোনো নাশকতা বা লুটতরাজ না হয় এজন্য কয়েকটি দোকান জেলা প্রশাসন সিলগালা করে সাময়িক বন্ধ করেছে। কিন্তু সব দোকান বন্ধ করা হয়নি।
হামলাকারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, কোনো রাজনৈতিক মদদ রয়েছে কি না সেটা তদন্ত করা হচ্ছে। আটক করা হয়েছে যাদের, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শান্ত নগরীকে যারা বিশৃঙ্খল করতে চায়, তাদের বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান। কোনো ছোট-খাটো ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা তৎপর আছি। এ ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া যুবককে আটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওসমান আলী বর্তমানে কাস্টডিতে আছে। যদি এখানে কেউ ধর্মীয়ভাবে সংক্ষুব্ধ হয়েছে, এমন অভিযোগ ওসমান আলীর বিরুদ্ধে নিয়ে আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
এদিকে, গতকাল রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় নগরের কোতোয়ালী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলায় ঘটনাস্থল থেকে আটক ৮২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ দুপুরে কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান বাদী হয়ে পুলিশের কাজে বাধাদান এবং হামলার অভিযোগ এনে এসিড দমন আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ।