শহিদ নূর হোসেন দিবসের তাৎপর্যকে ধারণ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। আজ রোববার এ হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে হামলার কিছু স্থিরচিত্র দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ এবার ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ সবাইকে সমবেত হওয়ার ডাক দিয়েছে। রবিবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে নেতাকর্মীদের সমবেত হতে বলা হয়।
বিবিতিতে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে- রাষ্ট্রীয় মদদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে নির্বিচারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। এভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দর্শকে রূপান্তরিত করে বা তাদেরকে নখ-দন্তহীন বানিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতান্ত্রিক দাবি জানানো কোনো মানুষের উপর সন্ত্রাস লেলিয়ে দেওয়া ফ্যাসিবাদের অভিনব রূপ। অবৈধ ও অসাংবিধানিক এই সরকার একদিকে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের কথা বলছে অন্য দিকে দানবীয় কায়দায় অন্যের কন্ঠরোধ করার অপচেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দলের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিরস্ত্রভাবে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে গেলে তাদের উপর বাছ-বিচারহীনভাবে নারকীয় হামলা করা হয়। এই আক্রমণের হাত থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারীসহ সাধারণ মানুষও রেহাই পায়নি। সরকারের মদদে একটি গোষ্ঠী মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে। আর তাদের এই রাজত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় দর্শক বানিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে মব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করায় সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ দিনকে দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে তারা ঈঙ্গিতে জনগণকে ভয় দেখানোর অপচেষ্টা করছে। তবে আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে কোনো অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে প্রস্তুত। নির্যাতন করে, ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রোধ করা যাবে না। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য যে কোনো কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমরা আজকের কর্মসূচিতে ন্যাক্কারজনক ও নজিরবিহীন আক্রমণ এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একইসাথে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি এবং তন্মধ্যে আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। আর এর বিচারের দায়ভার বাংলাদেশের জনগণের উপর ছেড়ে দিতে চাই। আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস রাখি, সরকারের হস্তগত আদালতে এই হীন কর্মকাণ্ডের বিচার না হলেও জনগণের বিবেকের আদালতে ন্যায়বিচার হবে।
বিবৃতি আরও বলা হয়- দেশবাসী জানে, অবৈধ ও অসংবিধানিক ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য জাতিসংঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছিলেন। অগণতান্ত্রিক ইউনূস সরকার সেই তদন্তের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ সরকারের একজন উপদেষ্টা আহতদের দেখতে গিয়ে বলেছিলেন যে, তাদের শরীরে যে বুলেটের চিহ্ন তা আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করেন না। আর এই তদন্ত হলেই আসল খুনিদের চিহ্নিত করা যেত। খুনি ইউনূসের প্রত্যক্ষ মদদে হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা,ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ বাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের উপর আক্রমণ ও হত্যা এবং নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ধরনের হীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার শামিল। ফ্যাসিস্ট ইউনূসের সহযোগীদের শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে শহিদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজকের কর্মসূচিতে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের প্রতি আমরা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং পরবর্তীতে ঘোষিতব্য কর্মসূচি পালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অবৈধ দখলদার ও অসাংবিধানিক সরকারকে উৎখাত না করা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লড়াই চালিয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ।