বিচার চাওয়া তো অপরাধ নয়

: স্বপ্নীল ফিরোজ
প্রকাশ: ১ মাস আগে

অপপ্রচারের জালে হারানো গণতন্ত্র কীভাবে ছাত্র আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনার সরকারকে সরিয়ে দিল। তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একটি গভীর ঐতিহ্যের দল, বহু সংগ্রামের ইতিহাস যার সাথে জড়িয়ে আছে। এই দল ক্ষমতাসীন থাকাকালীন সময়ে একাধিক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকলেও, রাজপথে বিরোধী দলের ভূমিকায় আওয়ামী লীগ যে কতটা সুসংহত হতে পারে যা আজকের নতুন প্রজন্মের অনেক সমন্বয়কই তা জানেন না। ফলস্বরূপ, আওয়ামী লীগকে নিয়ে তাদের মধ্যে কটাক্ষের চর্চা বেড়েছে। কিন্তু, যারা আওয়ামী লীগের বিরোধী দিনগুলোর সাক্ষী ছিলেন, তাদের ঠিকই জানা আছে দলের বিস্তৃত ক্ষমতা কতদূর প্রসারিত। এখন দেশের জনগণ দেখতে শুরু করেছে কীভাবে একটি অসৎ ও দুর্বল সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছে ড. ইউনূসের মতো একটি দখলদার গোষ্ঠী, নানা পরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। তাদের জন্য আওয়ামী লীগ যেন সত্যিকার অর্থে যমদূত হয়ে উঠেছে, যা ইতিমধ্যেই অনেক উপদেষ্টা অনুভব করতে শুরু করেছেন।

ষড়যন্ত্রের আড়ালে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, তা আর অজানা নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের প্রেক্ষাপট গভীর ষড়যন্ত্রে ঘেরা। কোটা সংস্কারের নামে শুরু হওয়া আন্দোলন ছিল জনতার স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের একটি মোড়ক, যেখানে বেশ কিছু মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। এতে জনগণের স্বাভাবিক ক্ষোভ জন্ম নেয়। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তখন সামনে আসেনি। জাতিসংঘের সম্মেলনে ড. ইউনূস যখন প্রকাশ করলেন, তখন বোঝা গেল এই আন্দোলন কতটা ছকে বাঁধা ছিল। তার কথায় স্পষ্ট হয়েছিল, ‘একজন মাস্টারমাইন্ড অত্যন্ত কৌশলে এই পরিকল্পনা কষেছিলেন।’

এরপর আন্দোলনের এক সমন্বয়ক সংবাদ সম্মেলনে আরও পরিষ্কার করে বলেন, ‘জ্বালাও-পোড়াও না করলে, মেট্রোরেল পুড়িয়ে না দিলে, এত ছাত্রের লাশ না পড়লে এই আন্দোলন সফল হতো না।’ পরিকল্পিত সহিংসতা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারের পতনের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। আরও চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসে উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্যে। তিনি জানান, ছাত্রদের হত্যায় ব্যবহৃত ছিল ৭.৬২ ক্যালিবারের গুলি, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নয়। এই তথ্যই প্রমাণ করে যে ছাত্র হত্যার ঘটনাগুলি ছিল গভীর ষড়যন্ত্রের ফলাফল। হত্যা আর বিভ্রান্তির রাজনীতি ছড়ানো হয় এভাবেই।

আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে পুঁজি করে আন্দোলন আরও বিস্তৃত করা হয়। পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে মাত্র দুটি রাবার বুলেট ছুড়েছিল, যা মারাত্মক ক্ষতির জন্য যথেষ্ট নয়। পরে মেডিক্যাল রিপোর্টে উঠে আসে যে, আবু সাঈদের মৃত্যু ইটের আঘাতে হয়েছিল। পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ডের দায় পুলিশ ও সরকারকে দিয়ে আন্দোলনকে আরও তীব্র করা হয়।

এই সব ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা মিথ্যা প্রচারণা ও প্রপাগান্ডা তখন জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিল। কিন্তু আজ মানুষ বুঝতে শুরু করেছে, কীভাবে একটি সুপরিকল্পিত দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আজ কেমন আছে বাংলাদেশ? প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ গুলোই বা কি!

বর্তমান সময়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা জমে উঠেছে। ‘আগেই ভালো ছিলাম’ কথাটি ক্রমেই মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। তারা উপলব্ধি করতে পারছেন, একটি সাজানো সুন্দর দেশ কীভাবে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাতে ভেঙে গেল। সেই অপশক্তি যা কিনা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জনগণের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে।

বিরোধী আওয়ামী লীগ তাদের সংগঠিত শক্তি দিয়ে আবারও মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অচিরেই এই অবৈধ ইউনূস সরকার বুঝতে পারবে কতটুকু শক্তিশালী ও সংগঠিত একটি দল আওয়ামী লীগ। মাস্টারমাইন্ডদের স্বার্থে যেসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, তার যথাযথ বিচার এখন মানুষের চাওয়া। এমন একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তির পুনরুত্থান কেবল সময়ের ব্যাপার। একই সাথে ৫ আগস্ট পরবর্তী সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারও প্রজন্মের দাবি।

লেখক : যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী

  • অপপ্রচার
  • গণতন্ত্র
  • ছাত্র আন্দোলন
  • শেখ হাসিনার
  • ষড়যন্ত্র
  • #