ময়মনসিংহে যুবদলের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে মারধর করে ভল্টের চাবি ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গৌরীপুর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ছয় থেকে সাত সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ দল ওই এলাকায় কৃষি ব্যাংকের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের পথ আটকে তাঁকে মারধর করে ব্যাংকের ভল্টের চাবি ছিনতাই করে পালিয়েছে।
এ ঘটনায় গতকাল রাতেই ব্যাংক কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিনজনকে আসামি করে গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারভুক্ত দুজন দুই লাখ টাকা করে ঋণ চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ব্যাংকের ভল্টের চাবি ছিনতাই হওয়ায় বুধবার রাতভর ব্যাংকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এ কাজে নেতৃত্ব দেওয়া দুজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে তাঁদের পদ-পদবি নেই। ব্যাংকের ভল্টের চাবি ছিনিয়ে নেওয়ার পর স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের চাপ প্রয়োগ করা হলে তাঁরা লোক মারফত রাতেই লুট করা ব্যাগটি থানায় পৌঁছে দেন। তবে মূল অপরাধীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। ওই চাবি পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ময়মনসিংহ উত্তর জেলা শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. কামরুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ব্যাংকের ভল্টের চাবি ছিনতাই হওয়ায় জেলা কার্যালয়ের সংরক্ষিত চাবি এনে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
কৃষি ব্যাংক সোহাগী বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিনের মতো বুধবার সন্ধ্যায় ব্যাংকের কাজ শেষ করে মোটরসাইকেলে করে গৌরীপুর উপজেলার নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গৌরীপুর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে এসে তাঁর পথ আটকে ধরে। মোটরসাইকেলটিতে আরোহী ছিলেন তিনজন। সঙ্গে আগে থেকে আরও কয়েকজন ওত পেতে ছিলেন। ছয় থেকে সাত সদস্যের ওই সংঘবদ্ধ দল তাঁকে মারধর শুরু করে। এ সময় সঙ্গে থাকা ব্যাংকের ভল্টের চাবিসহ সবকিছু নিয়ে যায়।
মারধরে নেতৃত্ব দেওয়া দুই তরুণকে মাহাবুবুর রহমান চিনতে পেরেছেন বলে দাবি করেন। তাঁরা হলেন ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী ইউনিয়নের দড়িবড়ভাগ গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে নাহিদ হাসান রাসেল (২৪) ও দরিবৃ গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আজিজুল হক (২২)।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ওই দুই তরুণ এক সপ্তাহ আগে তাঁদের ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই ঋণের আবেদন যাচাই–বাছাই করে ঋণ আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। কারণ, তাঁদের বাবার নামে খেলাপি ঋণ ছিল। পরে ওই দুই তরুণ তাঁকে চাপ প্রয়োগ করেন ঋণ দিতে। কিন্তু ঋণ দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল ও হুমকি দিয়ে ব্যাংক ত্যাগ করেন। পরে বুধবার সন্ধ্যায় বাসায় যাওয়ার সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁর ওপর হামলা ও ভল্টের চাবি ছিনতাই করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নাহিদ হাসান ও আজিজুল হক স্থানীয় বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে তাঁদের কোনো পদ নেই। এ দুজন স্থানীয় উপজেলা বিএনপির একাংশের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নুরুল কবীর শাহীন গ্রুপের রাজনীতি করেন। উপজেলাটিতে বিএনপির রাজনীতি দুটি গ্রুপে বিভক্ত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘অভিযুক্ত দুজন বিএনপির সাবেক এমপি শাহ নুরুল কবীরের গ্রুপে রাজনীতি করায় তাঁর (সাবেক এমপি) সঙ্গে কথা বলি ব্যাগ উদ্ধারের জন্য। তিনি মিলন ও সোহেল নামের দুজনকে দায়িত্ব দেন। তাঁরা থানায় এসে রাত চারটার দিকে ব্যাগটি দিয়ে যান। তাঁদের আমরা কাগজে সাক্ষী হিসেবে রেখেছি।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নুরুল কবীর প্রথম আলো বলেন, ‘যাঁরা ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের আমি চিনি না। তাঁরা (অভিযুক্তরা) কার সঙ্গে রাজনীতি করেন, পরিচয় কী, তা আমার জানা নেই। থানার ওসি অনুরোধ করায় ব্যাগটি উদ্ধারে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ওসি সাহেবকে বলেছি, আমার কোনো আপত্তি নেই, আপনার (ওসি) যা খুশি অ্যাকশন নেন। আমার গ্রুপ, আর কারও গ্রুপ বাছবিচার নাই, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যদি কিছু করে থাকে, কঠিন ব্যবস্থান নেন।’
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মাযহারুল আনোয়ার বলেন, ব্যাংক ঋণ না দেওয়ায় ব্যবস্থাপকের পথ আটকে ব্যাংকের ভল্টের চাবিসহ ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবকেরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
সূত্র : প্রথম আলো