বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় এক নারীকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনা নিয়ে র্যাব ও পুলিশের কাছ থেকে দুরকম বক্তব্য আসার পর র্যাব বলছে- তাদের তদন্তে যদি কারো গাফিলতি থাকে বা তথ্যগত, প্রক্রিয়াগত ভুল থাকে, এর সঙ্গে র্যাবের কেউ যদি দায়ী হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস আজ (শনিবার) এ কথা বলেন।
দুপচাঁচিয়ায় উম্মে সালমা নামে ওই নারীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব বলেছিল তার ছেলেই মাকে হত্যার পর লাশ ফ্রিজে রাখে। এ ঘটনায় ছেলেকে গ্রেপ্তারও করে র্যাব। তবে পুলিশের তদন্তে নতুন মোড় নেয় ঘটনা। পুলিশ জানায়, ছেলে নয়, বাড়ির ভাড়াটিয়া এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ ঘটনায় তারা তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুনীম ফেরদৌস বলেন, ছেলের দেওয়া জবানবন্দি আমরা রেকর্ড করেছি। তাকে যখন ক্যাম্পে আনা হয় তখন তার আত্মীয়-স্বজনরা ছিলেন। ছেলের দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতেই র্যাব কাজ করেছে।
ছেলে নিরীহ হলে বিচারের আগেই মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হলেন। সাংবাদিকরা এ বিষয়টি র্যাব কর্মকর্তার নজরে আনলে তিনি বলেন, তদন্তে ভিন্নতা হতেই পারে। ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও তদন্ত করছে। পুলিশ তদন্তে যদি র্যাবের সহযোগিতা নেওয়ার প্রয়োজন করে আমরা করবো।
তিনি বলেন, আমাদের র্যাবের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ আসে বা তদন্তে গাফিলতির তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
রোববার (১০ নভেম্বর) দুপচাঁচিয়ায় বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন নিজ বাড়িতে খুন হন উম্মে সালমা নামে এক নারী। বাসার ডিপ ফ্রিজ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘরের জিনিসপত্র অগোছালো ছিল ও স্টিলের আলমারিতে কুড়ালের কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন ছিল। এলাকাবাসীর ধারণা ছিল দিনের বেলা ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে ডাকাতরা তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মৃতদেহ ফ্রিজে রেখে যায়।
তবে ঘটনার দুদিন পর র্যাব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানায়। উম্মে সালমা খাতুনের ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব জানায় সাদ নিজেই তার মাকে হত্যা করে লাশ ফ্রিজে রাখে ও ডাকাতির নাটক সাজান।
এর তিনদিনের মাথায় এসে পুলিশ দাবি করে ছেলে নয়, উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যার পর মরদেহ ফ্রিজে রাখেন বাড়ির ভাড়াটিয়া। শুক্রবার দুপুরে দুপচাঁচিয়া থানার পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া মোবাইল ও ওয়াইফাই রাউটারের সূত্র ধরে সেই বাসার ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মাবিয়া স্বীকার করেন, চার মাস আগে উম্মে সালমার বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক ও অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বিষয়টি টের পেলে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেন উম্মে সালমা। ভাড়ার পাওনা টাকাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ক্ষুব্ধ হন মাবিয়া। এর জেরে দুই সহযোগী মুসলিম ও সুমন চন্দ্র সরকারকে নিয়ে হত্যার পর মরদেহ ফ্রিজে রেখে বেরিয়ে যান তারা।