পাকিস্তান থেকে আসা সেই জাহাজে যা এল

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রথমবারের মতো আসা সরাসরি জাহাজে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। শিপিং ও কাস্টমসের বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে এই তথ্য জানা গেছে। আগে এসব পণ্য তৃতীয় কোনো দেশ হয়ে আমদানি হত। এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আলাদা কোনো চুক্তি বা সুবিধায় নয়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এসব পণ্য বন্দরে নামানো হয়েছে।

‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ জাহাজে করে পাকিস্তান থেকে কনটেইনারে কী পণ্য আনা হয়েছে, তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা বিতর্ক।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাওয়ার আগে জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার নামানো হয় বন্দরে। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ একক কনটেইনার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে ৭৩ একক কনটেইনার।

পাকিস্তান থেকে যা এসেছে

শিপিং ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া কনটেইনারে রয়েছে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের ওজন ছয় হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করেছে। ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য ঠিক আছে কিনা, তা যাচাই করে ছাড়পত্র দেয় কাস্টমস। এরপরই আমদানিকারকেরা খালাস করে নেন।
তালিকা অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে জাহাজটিতে করে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ। টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এটি। মোট ১১৫ কনটেইনারে রয়েছে সোডা অ্যাশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য হলো খনিজ পদার্থ ডলোমাইট। ডলোমাইট রয়েছে ৪৬ কনটেইনারে। মোট ৩৫ একক কনটেইনারে আনা হয়েছে চুনাপাথর। ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আনা হয়েছে ছয় কনটেইনারে।
এ ছাড়া কাচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ কনটেইনারে। শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং ইত্যাদি রয়েছে ২৮ কনটেইনারে। একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এসব পণ্য আমদানি করেছে আকিজ গ্লাস কারখানা, নাসির ফ্লোট গ্লাস, প্যাসিফিক জিনস, এক্স সিরামিকস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
শিল্পের কাঁচামাল ছাড়াও পেঁয়াজ আনা হয়েছে ৪২ একক কনটেইনারে। এসব কনটেইনারে পেঁয়াজ রয়েছে ৬১১ টন। এর বাইরে ১৪ একক কনটেইনারে আলু আমদানি হয়েছে ২০৩ টন। এই দুটো পণ্য আনা হয়েছে হিমায়িত কনটেইনারে। ঢাকার হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ও চট্টগ্রামের আল্লাহর রহমত স্টোর পেঁয়াজ-আলু এনেছে।
পণ্য আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ বলেন, এই সেবা চালুর আগে পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রথমে জাহাজে করে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের বন্দরে আনা হতো চট্টগ্রামমুখী কনটেইনার। পরে এসব বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখী ফিডার জাহাজে তা তুলে দেওয়া হতো। সরাসরি সেবা চালুর পর এখন করাচি থেকে জাহাজে বোঝাই করার পর কোনো বন্দরে ওই কনটেইনার নামানোর দরকার হবে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, দুবাই ও করাচি বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই করে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় ১১ নভেম্বর। পরদিন জাহাজটি বন্দরে ৩২৮টি কন্টেইনার নামিয়ে ইন্দোনেশিয়া চলে যায়। ইতোমধ্যে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বন্দর থেকে সরাসরি আসা এই জাহাজে কী পণ্য ছিল সেটি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

কাস্টম ও শিপিং এজেন্ট সূত্র বলছে, ৩২৮টির মধ্যে ৬৪টি কন্টেইনার এসেছে দুবাইয়ের জেবেল আলী বন্দর থেকে। করাচি বন্দর থেকে আনা বাকি ২৬৪টি কন্টেইনারে রয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট, ডলোমাইট, চুনাপাথর, ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেটের মতো বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল। এর বাইরে আছে পেঁয়াজ, আলু ও শুকনো খেজুর। এসব পণ্যের ওজন ৬ হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য রপ্তানি করেছে।

একই জাহাজে পাকিস্তান থেকে দুই কন্টেইনার ৫২ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করেছেন খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। সরাসরি জাহাজ চলাচলকে আমদানিকারকদের জন্য ইতিবাচকই মনে করছেন তিনি।

আমদানিকারক ফারুক আহমেদ বলেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। পাকিস্তান থেকে অনেক পণ্য আমাদের দেশে আসে। আফগানিস্তান থেকে আমদানি করা অনেক পণ্য পাকিস্তান হয়ে আসে। এখানে বুঝতে হবে একটা রিউমার, আরেকটা হচ্ছে ফ্যাক্ট। এই বিষয়গুলো আমাদের জানতে হবে। যেহেতু কন্টেইনার বেশি তাই সরাসরি আসছে। আর এতদিন পাকিস্তানের পণ্য শতভাগ কায়িক পরীক্ষা হতো, এখন সেটি বন্ধ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ কারণেও হয়তো আলোচনা বেড়েছে।

পাকিস্তান থেকে অনেক জাহাজ শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের বন্দরে আনা হতো চট্টগ্রামমুখী কনটেইনার। পরে এসব বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখী ফিডার জাহাজে তা তুলে দেওয়া হত। সম্প্রতি দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’ কয়েকটি দেশের বন্দরকে যুক্ত করে এই সেবা চালু করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, করাচির সাথে ডাইরেক্ট শিপিংয়ের কোনো চুক্তি হয়নি। বিশেষ কোনো অনুমতির বিষয়ও এখানে নেই। দুবাই থেকে আসার সময় ওরা কিছু কন্টেইনার নিয়ে আসছে। আগেও করাচি থেকে কন্টেইনার শ্রীলঙ্কা বা সিঙ্গাপুর হয়ে আসত।

এদিকে যে জাহাজে করে এসব পণ্য এসেছে জাহাজটির দেশীয় প্রতিনিধি এইচ আর শিপিংয়ের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আনিস উদ দৌলা বলেন, সব প্রয়োজনীয় নথি জমা দিয়েই এই জাহাজ আনা হয়েছে। বাংলাদেশের আমদানি পণ্য মূলত কোরিয়া, চীন থেকে আসে। এর বাইরে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া থেকে আসে। পাকিস্তান থেকেও আসে। পাকিস্তান থেকে আগেও এসেছে। পাকিস্তান ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা কনটেইনারে রয়েছে খেজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরা, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিন, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় ইত্যাদি।

  • আমদানি
  • কাঁচামাল
  • জাহাজ
  • পাকিস্তান
  • বাণিজ্যিক যোগাযোগ
  • বাংলাদেশ
  • সমুদ্রপথ
  • #