জাতির উদ্দেশে ভাষণে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ১ মাস আগে

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০দিন পূর্ণ হয়েছে গতকাল ১৬ নভেম্বর। এই উপলক্ষ্যে আজ রবিবার (১৭ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টার পুরো ভাষণটি এখানে তুলে ধরা হল :

“প্রিয় দেশবাসী, শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, পুরুষ, মহিলা সবাইকে সালাম জানাচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম।

শুরুতেই স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের লাখো লাখো শহীদ এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র শ্রমিক জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সকল শহীদকে। সবাইকে জানাচ্ছি আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও গভীর শ্রদ্ধা। আরও স্মরণ করছি তাদের, ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যারা আহত হয়েছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছে, চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে। যারা নয় দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা এক দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা দেশকে এক হিংস্র স্বৈরাচারের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি আপনাদের, আপনাদের ভাই-বোনদের, আপনাদের সন্তানদের, যারা এই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছে।

আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ১০০ দিন অতিক্রম করলাম। আপনারা জানেন কী কঠিন এক পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধান পালিয়ে গেলে দেশ সরকারশূন্য হয় সাময়িকভাবে। পুলিশ প্রশাসন ও এ সময় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে উদ্বেগজনক এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এই দেশকে আমাদের সবাইকে মিলে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর আমরা এমন একটি দেশ হাতে পেয়েছি, যার সর্বত্র ছিল বিশৃঙ্খলা। স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহীদি মৃত্যু হয়। আমাদের সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যত্নের সাথে জোগাড় করছে। এই বিপ্লবে আহত হয়েছে ১৯,৯৩১ জন। আহতদের জন্য ঢাকার ১৩টি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিনই তালিকায় আরও নতুন নতুন শহীদের তথ্য যোগ হচ্ছে, যারা স্বৈরাচারের আক্রোশের শিকার হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবোই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইবো।

কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, আমরা গত ১৫ বছরের সব অপকর্মের বিচার করবো। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে। আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। কমিশন প্রধান আমাকে জানিয়েছেন, অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা এই সংখ্যা ৩,৫০০ ছাড়িয়ে যাবে। অনেকেই কমিশনের কাছে গুমের অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা তারা আবার আক্রান্ত হতে পারেন, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা দ্বিধাহীনচিত্তে কমিশনকে আপনাদের অভিযোগ জানান। কারও সাধ্য নেই আপনাদের গায়ে আবার হাত দেয়।

গুম কমিশনের সদস্যদের কাছে ভুক্তভোগীদের যে বিবরণ আমরা পেয়েছি তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর ছাত্র-ছাত্রীরা শহর বন্দরের দেয়ালে-দেয়ালে তাদের মনের কথা লিখেছে। তাদেরও আগে যারা গুমের শিকার হয়েছে, প্রতিটি গোপন আস্তানার দেয়ালে দেয়ালে তারা লিখে রেখে গেছেন তাদের কষ্টের মর্মস্পর্শী বিবরণ। তাদের এসব কষ্টের কথা শুনে আমাদের হৃদয় কেঁপে উঠেছে। এসবের সঙ্গে জড়িতদের আমরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবোই। অভিযুক্ত যতই শক্তিশালী হোক, যে বাহিনীরই হোক, তাকে ছাড় দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কেবল দেশে নয়, গুম, খুন ও জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সাথে জড়িতদের আমরা আন্তর্জাতিক আদালতেও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের সঙ্গে আমার এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কোনও সদস্য কিংবা অন্য কেউ যাতে হত্যা, গুমসহ এ ধরনের কোনও অপরাধে জড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য আমরা গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছি। আপনারা দেখেছেন, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। জাতিসংঘ জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তারা আমাদেরকে তাদের রিপোর্ট হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অতীতের গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত কাজেও আমরা নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। মানবাধিকার রক্ষায় সহযোগিতা করতে ঢাকায় তারা তাদের জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।

প্রিয় দেশবাসী

আমি আগেও জানিয়েছি, আবারও জানাচ্ছি, গণ-অভ্যুত্থানে সকল শহীদদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। একজনও বাদ যাবে না। সকল আহত শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি শহীদ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। যারা বুলেটের আঘাতে তাদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য নেপাল থেকে কর্নিয়া আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং যাদের প্রয়োজন তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের কোন শহীদ এবং আহত ছাত্র শ্রমিক চিকিৎসাসেবা এবং পুনর্বাসন পরিকল্পনা থেকে বাদ যাবে না। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অঙ্গীকার।

এই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে গঠিত “জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন” বেশ পাকাপোক্তভাবে তাদের কাজ শুরু করেছে। এই ফাউন্ডেশনে সরকার ১০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। এছাড়াও জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বরাদ্দ প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

পতিত স্বৈরাচার পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে। বাধ্য হয়ে তাদের অনেকেই গণহত্যায় অংশ নিয়েছেন। খুবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা জনরোষের শিকার হয়েছেন। এতে তাদের মনোবল অনেক কমে যায়। আমরা পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে এনে তাদের আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে অনেক দৃশ্যমান উন্নতিও হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও কিছু নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতিতে সহায়তা করেছে।

আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, কঠিন এই সময়ে আপনারা সবাই অপরিসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। ধন্যবাদ জানাই দেশের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে। তারা তাদের কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিশোধ স্পৃহায় লিপ্ত হয়ে কেউ যাতে হানাহানিতে জড়িয়ে না পড়ে সেই আহ্বান জানিয়েছেন। আপনাদের সবাই এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। ফ্যাসিবাদী শক্তি ভয় দেখিয়েছিল তারা ক্ষমতা ছাড়লে দেশে লাখ লাখ লোক মারা পড়বে। টানা সাত দিন পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকার পরও ব্যাপক আকারে সহিংসতা এড়ানো গেছে।

আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, বাংলাদেশ তখন সম্পূর্ণ অরক্ষিত একটা দেশ। এসময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তারা সহিংসতারও শিকার হয়েছেন। কিন্তু এটা নিয়ে যেসব প্রচার-প্রচারণা হয়েছে তা ছিল সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত। অল্প যে সমস্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু এসব ঘটনাকে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা হয়েছে। আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমরা দৃঢ়ভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।

আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের দু’মাসের মাথায় দেশে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার পূজা মণ্ডপে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্বাহী আদেশে একদিন অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়, যা উৎসবের আমেজকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। দুর্গাপূজাকে ঘিরে আমরা ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিই। যার ফলে, দেশের হিন্দু সম্প্রদায় নির্বিঘ্নে তাদের উৎসব পালন করেছে। আমরা দায়িত্বে আসার পর যে অল্প কিছু ক্ষেত্রে তারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন, আমরা তার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করছি। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ই নয়, দেশের কোনও মানুষই যাতে কোনও রকম সহিংসতার শিকার না হয়, সেজন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এবং সব সময় সে চেষ্টা করে যেতে থাকবো।

আপনারা জানেন চলতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছয়টি বন্যা হয়েছে। আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমরা এই বন্যা মোকাবিলা করেছি। বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী বন্যা মোকাবিলায় জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। বন্যা মোকাবিলা ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান এবং স্থানীয় অনুদানের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।

বন্যার ফলে অনেক জায়গায় ফসলহানি হয়েছে, ব্যাহত হয়েছে পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খল। বন্যা পরবর্তী সময়ে বাজারে শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে আপনাদের কষ্ট হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য আমরা সাড়ে নয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এজন্য প্রয়োজনীয় শুল্ক ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ডিমের উৎপাদনকরা যাতে সরাসরি বাজারে ডিম সরবরাহ করতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মানুষ যাতে স্বল্প মূল্যে কৃষিপণ্য কিনতে পারে সেজন্য রাজধানীসহ বিভিন্ন স্পটে সরকারি কিছু পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি নিম্ন আয়ের ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে ৫৭ লাখকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বন্যার ফলে চালের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও দাম যাতে স্বাভাবিক থাকে এজন্য সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমাদের কোনও লুকোছাপা নেই। মূল্যস্ফীতির পূর্ণ তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি রোধে উচ্চ সুদের হার নির্ধারণসহ একাধিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শস্য আমদানিতে এলসি-সীমা অপসারণ এবং সরবরাহ চেইন সংক্ষিপ্ত করা।

সামান্য হলেও জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হয়েছে। শিল্প-কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যাহত না হয় এবং রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। গণ-শুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম না বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আশা করি বাজারে পণ্যমূল্য কমিয়ে আনতে এটা ভূমিকা রাখবে। নেপাল থেকে পানিবিদ্যুৎ বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।

দৈনন্দিন রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি আমাদের ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথাও ভাবতে হচ্ছে। আপনারা সবাই জানেন, আমাদের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মতামত নিয়ে যাচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এসব মতামত অনেকাংশে প্রতিফলিত হচ্ছে। চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাদের প্রতিটি মতামত সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ে, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করতে পারবে। তাদের সুপারিশ নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ক্রমাগতভাবে আলোচনায় বসবো। সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই আমরা সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করবো।

নির্বাচন কবে হবে এই প্রশ্ন আপনাদের সবার মনেই আছে। আমাদের মনেও সারাক্ষণ আছে। আপনারা লক্ষ করেছেন নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। তারপর থেকে নির্বাচন আয়োজন করার সমস্ত দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে।

নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ আরও কিছু কাজ শুরু করে দিতে পারবে, যা একটি অবাধ নির্বাচনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে লক্ষ্যেও সরকার কাজ করছে।

তবে আমরা মনে করি না যে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংস্কার আমাদের এই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। আপনারাই আমাদেরকে এই ম্যান্ডেট দিয়েছেন। যে ছয়টি সংস্কার কমিশন আমরা শুরুতে গঠন করেছিলাম, তারা ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আপনারা তাদের কার্যক্রমের আপডেটও দেখছেন। কয়েকটি সংস্কার কমিশন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে। আমার অনুরোধ, আপনারা এই প্ল্যাটফর্মে উৎসাহ সহকারে আপনাদের মতামত জানাতে থাকুন।

প্রথম ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে একটি হলো নির্বাচন সংস্কার কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই কমিশনের সুপারিশমালা অত্যন্ত জরুরি। তাদের প্ল্যাটফর্মে যান। আপনার মতামত খোলাখুলিভাবে তুলে ধরুন। আপনি দেশের মালিক। আপনি বলে দিন আপনি কী চান। কীভাবে চান।

নির্বাচন নিয়ে আপনাদের সকল বক্তব্য বিনা দ্বিধায় বলতে থাকুন। সবার মনের কথা তুলে ধরুন। আমার অনুরোধ, সংস্কারের কথাটাও একই সঙ্গে বলুন। সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে যাবেন না। নির্বাচনের কথা বলার সঙ্গে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কারের কথাটিও বলুন। সংস্কার হলো জাতির দীর্ঘমেয়াদি জীবনীশক্তি। সংস্কার জাতিকে বিশেষ করে আমাদের তরুণ-তরুণীদের নতুন পৃথিবী সৃষ্টির সুযোগ দেবে। জাতিকে বঞ্চিত করবেন না।

নির্বাচন আয়োজনে যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দলসমূহ এবং দেশের সকল মানুষের মতামত অপরিহার্য সে কমিশন হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই সুপারিশমালার কোন অংশ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তার ভিত্তিতে নির্বাচনি আইন সংশোধন করতে হবে। সমান্তরালভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।

আমি নিশ্চিত নই, সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের সুযোগ আমরা কতটুকু পাবো। তবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা সুযোগ দিলে প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার কাজ শেষ করেই আমরা আপনাদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন আয়োজন করবো। ততদিন পর্যন্ত আমি আপনাদের ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করবো। আমরা চাইবো, আমরা যেন এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারি যা যুগ যুগ ধরে অনুসরণ করা হবে। এর ফলে সাংবাৎসরিক রাজনৈতিক সংকট থেকে আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু আমি আপনাদের কাছে চেয়ে নিচ্ছি। নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত আপনারা নির্বাচনের রোডম্যাপও পেয়ে যাবেন।

অন্তর্বর্তী সরকার সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতিকে নীতির কাঠামোয় আনার জন্য এবং রাজনীতির জন্য নতুন পরিবেশ সৃষ্টির নিবিড় আকাঙ্ক্ষা থেকে। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা থেকে জাতিকে বঞ্চিত করবেন না।

নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐকমত্যের মাধ্যমে।

ইতোমধ্যে অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা নিয়ে আলাপ চলতে থাকবে। নির্বাচন ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করার ব্যাপারে ঐকমত্য গঠনের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হতে পারে। দেশবাসীর কাছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমরা ক্রমাগতভাবে প্রশ্ন তুলতে থাকতে থাকবো কী কী সংস্কার নির্বাচনের আগে আপনারা করে নিতে চান। নির্বাচনের আয়োজন চলাকালীন কিছু সংস্কার হতে পারে। সংস্কারের জন্য নির্বাচনকে কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে।

আমরা দু’দিন পরে চলে যাবো। কিন্তু আমাদের মাধ্যমে জাতির জন্য যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হলো সে সুযোগটা যেন কোনও রকমেই হাতছাড়া করে না দিই এটার ব্যাপারে দৃঢ় থাকার জন্য আমি দলমত, নারী-পুরুষ, ধর্ম, তরুণ-বৃদ্ধ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কৃষক নির্বিশেষে সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি আপনারা আমার এই আবেদন গ্রহণ করবেন।

দেশে সংঘটিত অন্যান্য অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় সহস্রাধিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৩ জন নতুন বিচারক। বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য সম্ভব সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছে।

বিচারপতিদের নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করা হয়েছে। শুধু বিচার বিভাগই নয়, সর্বগ্রাসী দুর্নীতির হাত থেকে দেশের সব খাতকেই রক্ষা করতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দুর্নীতি ও অর্থপাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেড়শ’ ব্যক্তির তালিকা তৈরি এবং ৭৯ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ, অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করা হয়েছে।

সরকারি কার্যক্রমকে গতিশীল করতে বিভিন্ন পর্যায়ের ১৯,০৮৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি, ১৩,৪২৯ জনকে বদলি এবং ১২,৬৩৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছে। কুখ্যাত সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই আইনের অধীনে হওয়া সেসব মামলা মানুষের মত প্রকাশের অধিকারের সাথে সম্পর্কিত সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও ১৩৩টি আইন, বিধিবিধান তৈরি ও সংশোধন করা হয়েছে এবং ৩৫৩টি গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে ইতোমধ্যে সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩২-এ উন্নীত করা হয়েছে। আমরা জানি আমাদের কাছে আপনাদের আরও অনেক দাবি-দাওয়া আছে। দীর্ঘদিনের অপশাসন, অত্যাচার, অনাচারের ফলে আপনাদের মনে অনেক ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে। দেশে বাকস্বাধীনতা না থাকায় আমরা কেউ আমাদের মতামত, দাবি-দাওয়া প্রকাশ করতে পারিনি। আমরা আপনাদের প্রতিটি দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। আমরা ধৈর্যসহকারে আপনাদের কথা শুনতে চাই। কিন্তু সেজন্য আপনারা সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে আমাদের সকলেরই অসুবিধা হয়। আমাদের একান্ত অনুরোধ, আপনারা নির্দিষ্ট চ্যানেল মেইনটেইন করে আপনাদের দাবি দাওয়া পেশ করবেন।

আমাদের বৃহৎ রফতানি পণ্য গার্মেন্টস শিল্পে গত কিছু দিন ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী বেশ কিছু গার্মেন্টস মালিক পালিয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্য অনেক কারখানায়ও শ্রমিকরা ন্যায্য বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। শ্রমিকরা তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিবাদ জানাতে এবং অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পেতে রাস্তায় নেমে আসে। আমরা তাদের কথা শুনেছি, তাদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পেরেছি। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে ১৮ দফার একটি ব্যাপকভিত্তিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বড় ধরনের কোনও সহিংসতা ছাড়াই আমরা শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন করতে পেরেছি। তারা আবার উৎপাদনে ফিরেছে। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশের রফতানিমুখী এই শিল্পও। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অক্টোবর মাসে আমাদের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।

আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। আশার কথা, এই রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে। গত তিন মাসে রিজার্ভে কোনও রকম হাত না দিয়েই আমরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পেরেছি। জ্বালানি তেল আমদানিতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার হতে কমিয়ে ১৬০ মিলিয়ন ডলারে আনতে পেরেছি। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ইতোমধ্যে ঋণ ও অনুদান হিসেবে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হবে।

পতিত সরকার আমাদের জন্য যে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি রেখে গিয়েছে তাতে রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এর মধ্যেও জুলাইয়ের নেতিবাচক অবস্থা থেকে অক্টোবর নাগাদ রাজস্ব আদায়ে পৌনে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিপুল রাজস্ব ঘাটতি ছিল। যে কারণে এবার শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে স্বৈরাচার পতনের পরবর্তী তিন মাসে পৌনে ৯ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরও লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৩ শতাংশের বেশি ঘাটতি থেকে যায়। রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে আমি এখন অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত করছি।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএনডিপি ইত্যাদির প্রধানদের সঙ্গেও আমার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তারাও বাংলাদেশকে নতুনভাবে এবং সর্বাত্মকভাবে সাহায্যের জন্য তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

১০০ দিন আগে আর্থিক দিক থেকে আমরা যে লন্ডভন্ড অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম- সেটা এখন অতীত ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই একশ’ দিনে অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে। এটা সম্পূর্ণ নিজস্ব নীতিমালা দিয়ে হয়েছে। বলা বাহুল্য, এখনও আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে যে সাহায্যের আয়োজন হয়েছে তা আসা শুরু করেনি। বন্ধু রাষ্ট্রগুলো শুধু যে আমাদের বড় বড় অঙ্কে সাহায্য নিয়ে আসছে তাই নয়, তারা এই সাহায্য দ্রুততম সময়ে আসা শুরু করবে, এই প্রতিশ্রুতিও আমাকে দিয়েছে। এই সাহায্য আসা শুরু করলে আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত মজবুত এবং আকর্ষণীয় অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নানা রকম বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসবে।

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এখন থেকে আমরা আলোচনা শুরু করে দিয়েছি। বিশ্বের রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত এবং প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এর কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। তারা নানা চেহারা নিয়ে আপনাদের প্রিয়পাত্র হবার চেষ্টা করছে। পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন। এ ব্যাপারে অনড় থাকুন। এমন কিছু করবেন না, যা তাদেরকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদেরকে সকল দিক থেকে নিরাশ করুন। সেটা নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের আর কোনও বিষয়ে সংশয় করার প্রয়োজন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আপনাদেরকে একটা মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাবো, ভবিষ্যতে চলার পথকে সহজগম্য করে যাবো, নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাবো। বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনা করুক- সব কিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এবার যে মুক্তি আমরা অর্জন করেছি তা আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন ছিনিয়ে নিতে না-পারে তার জন্য সর্ব মুহূর্তে প্রস্তুত থাকুন।

আপনারা জেনেছেন, পতিত সরকার ও তার দোসররা প্রতিবছর দেশ থেকে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ সম্প্রতি এই তথ্য দিয়েছে। পাচার হয়ে যাওয়া এই অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভব সকল ধরনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এ কাজে সফল হতে পারলে আমাদের অর্থনীতি আরও গতি পাবে। এ কাজে আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সাহায্য নিচ্ছি।

আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই বিশ্বনেতৃবৃন্দকেও। বাংলাদেশের এই সংকটময় সময়ে তারা প্রায় সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি যখন সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেই, সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, ইতালি, হল্যান্ড, জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ্বের অনেক দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার বৈঠক করার সুযোগ হয়। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গেও আমার বৈঠক হয়েছে, যেখানে আমি সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলেছি।

দেশে ফিরে আসার পর এসব দেশের রাষ্ট্রদূতগণ যারা ঢাকায় স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে আমার সঙ্গে দেখা করে তাদের সরকার প্রধানদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে গেছেন। তারা সম্পূর্ণ নতুনভাবে আমাদের জন্য সহায়তার নতুন ছক তৈরির কাজ শুরু করেছেন। যেসব রাষ্ট্রদূত দিল্লিতে অফিস করেন তারা দিল্লি থেকে এসে দেখা করে গেছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২০ দেশের ২০ জন রাষ্ট্রদূত দিল্লিতে থাকেন। সাত দেশের সাত রাষ্ট্রদূত ঢাকায় আছেন। দিল্লি থেকে একসঙ্গে ২০ জন রাষ্ট্রদূতসহ মোট ২৭ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সমবেতভাবে আমার সঙ্গে বৈঠক করার জন্য আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকায় আসছেন। আগে কখনও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৭ জন রাষ্ট্রদূত একত্রিত হয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। দিল্লি থেকে এ বিশাল সংখ্যক রাষ্ট্রদূত একসঙ্গে বৈঠক করার জন্য আসেনি। এবার এ কাজটি করার পেছনে আছে ইইউর সমর্থন প্রকাশ করা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রাজিল, তুরস্ক, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, লিবিয়াসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত। দ্বিপাক্ষিক নানা সহযোগিতাসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশ্বাস তারা দিয়েছেন।

আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তরুণদের কর্মসংস্থানের মূলে রয়েছে বেসরকারি খাত। আমাদের বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুই শতাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মতবিনিময়ের অভাব, সরকারি অফিসের জটিল প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি দুর্নীতি, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যায় ফেলেছে। বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ নিরসনে আমরা অনেকগুলো কাজ করেছি। ইতোমধ্যে সত্যিকারের ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হয়েছে, বিনিয়োগ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ সমাধানে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন হয়েছে। বেসরকারি খাতের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সরকারি অফিসে না-এসে প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা আমাদের অগ্রগতির বিষয়ে সবাইকে মাসিক ভিত্তিতে আপডেট করে যাচ্ছে।

আমরা প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করছি। আমার অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাত সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জনসহ অন্যান্য বাংলাদেশিকে মুক্তি দিয়েছে। এসব বাংলাদেশি কারাবাসের ঝুঁকি নিয়ে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে প্রতিবাদ করেছি। বাংলাদেশিরা এরকম প্রতিবাদ আরও অনেক দেশেই করেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

কয়েক দিন আগে বাকুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট জনাব শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে । তাঁকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের জন্য যেকোনও সাহায্য লাগলে আমি যেন তাকে জানাই। প্রবাসীদের কল্যাণে আমাদের সরকার সম্ভব সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছি। আপনারা জানেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। ১৮ হাজার বাংলাদেশি, যারা সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলার পরও স্বৈরাচারী সরকারের অব্যবস্থাপনার জন্য মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি, তিনি তাদের জন্য মালয়েশিয়ার দ্বার আবার উন্মুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আমরা কাজও শুরু করেছি।

আপনারা জেনে থাকবেন মালয়েশিয়া আগামী বছর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে আসিয়ানের সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাদের আবেদন সক্রিয়ভাবে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। একই ধরনের আশ্বাস আমরা পেয়েছি ইন্দোনেশিয়া থেকেও। ইন্দোনেশিয়ার পক্ষ থেকে সেদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে যাবার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছে। সৌদি আরবসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। প্রথমবারের মতো ওআইসি সদর দফতরে আমরা স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিচ্ছি। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সাথে আগে আমার টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। এবার COP29 সম্মেলনে গিয়ে তিনি ও তাঁর স্ত্রী’র সঙ্গে অত্যন্ত অন্তরঙ্গ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি তার বিশেষ সমর্থনের কথা তিনি বারবার প্রকাশ করেছেন। তুরস্কের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সফর করেছে। তুরস্ক এ দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য টার্কিশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির (TICA) একটি অফিস ঢাকায় স্থাপনের জন্য ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে তুরস্কের বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই উদ্দেশ্যে চলতি মাসেই একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দল তুরস্ক থেকে বাংলাদেশে আসছেন।

প্রিয় দেশবাসী

নতুন হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে হজের ব্যয় এক লাখ টাকারও বেশি কমিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, এ বছর সরকারি খরচে কাউকে হজে পাঠানো হবে না।

আমরা নতুন বাংলাদেশকে একটি পরিবেশবান্ধব এবং জীববৈচিত্র্যময় দেশ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। এটি তরুণদের আকাঙ্ক্ষা। আমাদের সবারই আকাঙ্ক্ষা। সেই লক্ষ্যে আমি প্রথমেই একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নিয়েছি। সমগ্র সচিবালয়ে প্লাস্টিকের পানির বোতল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি। ইতোমধ্যে সুপার শপগুলোতে পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক দশকে যে পরিমাণ নদীদূষণ হয়েছে, আমরা তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি।

আপনারা সবাই অবগত আছেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জীবনযাত্রার জন্য কীরকম হুমকি হয়ে আসছে। গত এক বছরে বাংলাদেশ প্রায় ১৫টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে। মানুষের সৃষ্ট নানাবিধ দুর্যোগের পাশাপাশি এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপক্ষেও আমাদের লড়তে হচ্ছে। আজারবাইজানে জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতৃবৃন্দকে আমি আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব, ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকার অনেক সরকার প্রধানের সঙ্গেই আমার দেখা হয়েছে। যতটুকু আলাপ আলোচনা সম্ভব হয়েছে, আমি সবার কাছেই জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব মোকাবিলাসহ গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সহযোগিতা চেয়েছি। তারা সহযোগিতার অঙ্গীকার সবাই করেছেন।

গত ১০০ দিনে আমরা আরও অনেক কল্যাণমূলক কাজ করেছি, যা এখানে স্বল্প পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আমাদের সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী। আমি তাই সরকারের সকল মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি তাদের নিজ নিজ কাজের বিস্তারিত বিবরণ নিজেদের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য। আমি আমার দফতরকেও বলেছি সরকারের সব কাজের বিবরণ যাতে জনগণ জানতে পারে, এজন্য যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এ সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য, অকার্যকর করার জন্য বিশাল অর্থে বিশ্বব্যাপী এবং দেশের প্রতিটি স্থানে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এক মহাপরিকল্পনা প্রতি মুহূর্তে কার্যকর রয়েছে। তাদের একটি বড় প্রচেষ্টা হচ্ছে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। পতিত সরকারের নেতৃবৃন্দ যারা এদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে নিয়ে গেছে সে অর্থে বলীয়ান হয়ে তারা দেশে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদেরকে কিছুতেই সফল হতে দেবেন না। তারা সফল হওয়া মানে জাতির মৃত্যু। জাতি হিসেবে আমাদের অবসান। সাবধান থাকুন। তাদের সকল হীন প্রচেষ্টাকে আমাদের ঐক্যের মাধ্যমে নস্যাৎ করে দিন। যেভাবে নস্যাৎ করেছিলেন তাদের বন্দুকের গুলিকে। তাদের আয়নাঘরকে। প্রতি পায়ে তাদের অনাচারের শিকলকে। এ ব্যাপারে সবাই একমত থাকুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোক। খোদা হাফেজ।”

  • প্রধান উপদেষ্টা
  • ভাষণ
  • #