দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই : আনু মুহাম্মদ

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৪ সপ্তাহ আগে

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, দ্রব্যমূল্য আসলে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই৷ তেল, ডিম, পেঁয়াজের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটা কোম্পানি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে৷ অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এই জায়গাটায় সরকারের যথাযথ ভূমিকা দেখা যায়নি। 

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আজ বৃহস্পতিবার ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো- এই শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি- এই সংবাদ সম্মেলনে সেগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন এর অন্যতম সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক লুট, অর্থপাচার বা শেয়ার কারসাজির বিষয়ে বিগত সরকারের সময়ে হওয়া দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। সেখানে অপরাধী হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে যাদের সনাক্ত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেল, সে বিষয়ে বর্তমান গভর্নরের পরিষ্কার বক্তব্য দাবি করছি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির বিষয়ে সরকারের ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি আগের সরকারের মতোই। তাদের ওপর নির্ভরশীল অর্থনৈতিক কাঠামো অব্যাহত থাকলে শেখ হাসিনার সময়ের অর্থনৈতিক মডেলের কোনো পরিবর্তন হবে না৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয় যে, এবারের দুর্গাপূজা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। তবে দলগত সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার কাজটা হয়নি।এটা না হওয়ার কারণে ভারতের মোদি সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার করছে।

শ্রমিক প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির অন্যতম সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, ন্যূনতম জাতীয় মজুরি এখনো ঘোষণা করা হয়নি, যা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধে সরকারের আরও সক্রিয় উদ্যোগ দরকার।

রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল চুক্তি নিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন,  অন্তর্বর্তী সরকার বাপেক্সের মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যবস্থা করবে। অবিলম্বে জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তিতে প্রাকৃতিক গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংমিশ্রণে আমাদের জ্বালানি মহাপরিকল্পনা করতে হবে।

গত ১৫ বছরে আমাদের শিক্ষাখাত সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের অনেক কাজ দীর্ঘমেয়াদে করতে হবে। কিন্তু এই সরকার এগুলো শুরু করতে পারে৷ এটা হতে পারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে সারা দেশে ব্যাপকসংখ্যক পাঠাগার স্থাপন৷ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে।

স্বাস্থ্যখাত প্রসঙ্গে এই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় যে, স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসাকে একটা সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এই সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা আশা করি, সংবিধানে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা একটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে থাকবে এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হবে। এই সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল পাবলিক বা সর্বজনের হাসপাতালের মান বৃদ্ধির জন্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ব্যক্তি, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যসহ সরকারি কর্মতাদের সবার পাবলিক হাসপাতালে চিকিৎসা বাধ্যতামূলক করা। এই ঘোষণাটা দিয়ে এই সরকার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনু মুহাম্মদ বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কাঠামো তৈরি করা এই সরকারের দায়িত্ব। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরকাক উদ্যোগ নিতে পারবে বলে আমরা মনে করি।

সংবাদ সম্মেলন শেষে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ব্যানারে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ শিরোনামে আগামী শনিবার বিকেল তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশের সব শ্রেণিগত, ধর্মীয়, লিঙ্গীয়, জাতিগত, পেশাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি এই কর্মসূচিতে সকল শ্রেণি, পেশা, লিঙ্গ, জাতি ও ধর্মের মানুষকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ও আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন ও সদস্য অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা রিতু। বক্তব্য দেন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সীমা দত্ত, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান, মাইকেল চাকমা, মাহতাব উদ্দীন, বাকী বিল্লাহ, রাফিকুজ্জামান ফরিদ, আফজাল হোসেন, অমল ত্রিপুরাসহ অনেকে। সংবাদ সম্মেলনে একে একে ১৩ দফা প্রস্তাব পড়ে শোনান গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহা মির্জা৷ অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ সেগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।

  • কার্যকর
  • দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ
  • পদক্ষেপ
  • সরকার
  • #