সারাদেশে গত অক্টোবর মাসে সড়ক, রেল ও নৌ পথে ৫৩৪টি দুর্ঘটনায় ৫৭৫ জন মারা গেছেন; আর ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন বলে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। শনিবার বিজ্ঞপ্তিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, এসব দুর্ঘটনার অর্ধেকই গাড়ি চাপা দেওয়া, এক চতুর্থাংশ সংঘর্ষ ও ১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারানোজনিত কারণে হয়েছে। দুর্ঘটনার ৩৮ শতাংশের বেশি হয়েছে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে।
আগের মাস অর্থাৎ গত সেপ্টেম্বরে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৫৪৭টি দুর্ঘটনায় ৫৫৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩৮ জন আহত হয়েছিলেন। আগের মাসের চেয়ে দুঘর্টনার হার ও আহতের সংখ্যা কমে এলেও অক্টোবরে বেড়েছে মৃতের সংখ্যা।
নিহতের ৩৪ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার, সংখ্যায় তা ১৬৩ জন। এছাড়া রেলপথে ৬৩ দুর্ঘটনায় ৭৬ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। নৌ পথে ১৯টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ৩৬ জন আহত এবং এখনো ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এসব দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত ৬৩১টি যানবাহনের মধ্যে ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ বাস, ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ স্থানীয় পরিবহণ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৬ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাসের পরিচয় পাওয়া গেছে।
দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি দেখতে পেয়েছে, মোট দুর্ঘটনার ৪৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বিভিন্ন কারনে ও শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ট্রেনের ধাক্কায় হয়েছে।
এছাড়াও গাড়ির চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে নিহত হন শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। দুর্ঘটনার স্থান বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে ৩৮ দশমিক ২৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩০ দশমিক ৩৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ফিডার রোডে হয়েছে।
সংস্থার মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, সরকার বদলের পড়ে সব পথের ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজনের চেয়ে কম উপস্থিত থাকার সুযোগে আইন লংঘন করে যানবাহন চলেছে বেশি করে। মূল সড়কেও অবৈধ যানবাহনের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যুর হার বেড়েছে। অবৈধ গাড়িগুলো ছোট হলেও একেকটিতে ৭ থেকে ৯ জন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে। দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃতের হার কামিয়ে আনতে অতি দ্রুত মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মোজাম্মেল হক বলেন, সারা দেশে ৫০ লাখের বেশি মোটরসাইকেল রয়েছে। এত সংখ্যক মোটরসাইকেল চলাচলের সড়ক নেই আমাদের। অন্যান্য দেশের আয়তনের তুলনায়ও তা অনেক বেশি। আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শুধু গ্রামে চলাচলের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
সংস্থাটির মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকা। অতি বৃষ্টিতে সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকরা এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। উল্টোপথে চলাচল, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং অতিরিক্ত সময় ধরে চালকের আসনে একজন থাকায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমছে না। ধীর ও দ্রুতগতির বাহনের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।