বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেছেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের তিন মাস হয়ে গেছে। দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি নেই। বরং প্রতিটি জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘরে এখনো লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজি ও চাকরিচ্যুতি চলছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই অবস্থা অপরিবর্তিতভাবে চলছে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকালে আট দফা দাবিতে রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। সমাবেশ থেকে আট দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট যে অভ্যুত্থান হয়েছে, সেই অভ্যুত্থানে এই রংপুরে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন আবু সাঈদ। তিনি আত্মত্যাগ করেছিলেন বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সহাবস্থান ও মর্যাদাপূর্ণ একটি জাতির জন্য। শহীদ রুদ্র আত্মাহুতি দিয়েছিলেন এ আন্দোলনে। একজন মুসলমান ও একজন হিন্দু পরস্পর পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়ে অভ্যুত্থান করেছেন। কিন্তু অতিশয় দুর্ভাগ্যের বিষয়, কী পরিবর্তন দেখছি। আগের মতো অবস্থা। এই অবস্থা শহীদ আবু সাঈদ, রুদ্র, মুগ্ধসহ গণ-অভ্যুত্থানে আত্মাহুতিদানকারীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।
দেশের সনাতনী হিন্দুদের বিভিন্নভাবে দলীয় ট্যাগ নিয়ে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, হয় আওয়ামী লীগ, না হয় বিএনপি, না হয় জাতীয় পার্টি বিভিন্ন তকমায় বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। আজকে সেই দালালদের আমরা সাবধান করে দিতে চাই, ঐক্যের সুবাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে। এখানে কেউ বিভক্ত করতে চাইলে সে যেই হোক, তাকে আমরা ছুড়ে ফেলবো। বিভক্তকারীকে আর স্থান দেবো না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেখানে আমাদের সংখ্যালঘু প্রতিনিধি দেওয়া না হয়, সংবিধানে হিন্দুদের ধর্মীয় ও পারিবারিক আইন এবং দেশের সহাবস্থানে যদি সুনিশ্চিত না হয়, কোনও পরিবর্তন আমরা মেনে নেবো না। আমরা বলতে চাই, আমাদের যুক্ত করুন, আমরা আপনাদের সহযোদ্ধা হবো। আমরা রাষ্ট্র বিনির্মাণে সহযোগী হতে চাই।’
সরকারের পরিবর্তনের পর সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও মঠ-মন্দিরে হামলার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চ’। ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট মিলে ‘সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ আত্মপ্রকাশ করে। এ জোটের ব্যানারে আজ রংপুরে এই বিভাগীয় সমাবেশ করা হয়।
তবে সমাবেশ করার জন্য পূর্বনির্ধারিত ভেন্যু রংপুর জিলা স্কুল মাঠের অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন। এর পরিবর্তে শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে মাহীগঞ্জ কলেজ মাঠে বিভাগীয় সমাবেশ করা হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরু হয়।