চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিনকে ঘিরে সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহত আইনজীবীর নাম সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক মো. শাকিল বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় আনার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে যিনি নিয়ে এসেছেন তিনি জানিয়েছেন, দুপক্ষের সংঘর্ষে তিনি মারা যান। তার মরদেহ মেডিকেলের লাশ ঘরে রাখা আছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় চিন্ময় কৃষ্ণকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে রাখেন তার ভক্তরা। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা। এসময় হামলায় নিহত হন সহকারী পিপি সাইফুল ইসলাম।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাজ্জাক জানিয়েছেন, আলিফের মৃত্যুর প্রতিবাদে বুধবার আদালতে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন আইনজীবীরা।
আশরাফুল ইসলাম রাজ্জাক বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর তার অনুসারীরা আদালত থেকে বের হওয়ার সময় এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এর এক পর্যায়ে সাইফুল নিহত হয়। এ সময় আইনজীবীদের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সড়কেও বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
সহিংসতার পর পুরো চট্টগ্রাম মহানগরীতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
নিহত সাইফুল চট্টগ্রামের সহকারী পিপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার পিতার নাম জালাল উদ্দীন। গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারে লোহাগড়ার চনুতিতে।
সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে আটক করেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে চট্টগ্রামের আদালতে তোলার পর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ সময় চিন্ময়ের সমর্থকরা চট্টগ্রামের আদালত পাড়ায় বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। একই সঙ্গে রাজধানীর শাহবাগ, মৎস্য ভবন ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এলাকাতেও ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করার কথা জানায় সংস্থাটি।
সোমবার চিন্ময়কে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পরই ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। চট্টগ্রামের জামালখানের চেরাগী মোড় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শত শত সনাতনীরা। এসময় তারা নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন। এরপরের চেরাগ মোড় চত্বরে মূল সড়কে বসে পড়েন। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে সব ধরনের যান চলাচল।
অন্যদিকে একই দাবি শাহবাগেও বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে এতে হামলার অভিযোগ করেন সনাতনীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য সতর্ক অবস্থায় নেয়। বিক্ষোভকারীরা চিন্ময় কৃষ্ণের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
এদিকে, মঙ্গলবার রংপুরের পীরগাছায় এক অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দাবি করেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কোনো সম্প্রদায়ের নেতা হিসাবে নয়, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী যত বড় নেতাই হোক না কেন, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।