২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় হাইকোর্টের রায় প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে সেই নৃশংসতম ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের খালাস প্রদান করে নিকৃষ্টতম নজির স্থাপন করা হয়েছে। এ হামলা মামলায় সকল আসামিকে খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে একজন ভুক্তভোগী হিসেবে তিনি এ বিবৃতি দিয়েছেন। আজ রোববার (১ ডিসেম্বর) আওয়ামী লগের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়।
এর আগে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বিচারিক আদালতের দেয়া রায়কে অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। সেই সাথে মামলার সব আসামিদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। ডেথ রেফারেন্স নাকচ এবং আসামিদের আপিল মন্জুর করে হাইকোর্ট এই রায় ঘোষণা করে। সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে করা বিচারিক আদালতের বিচারকে বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। ফলে লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া তারেক রহমানসহ এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিদের খালাস পেয়েছেন। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ আজ রোববার এ রায় ঘোষণা করেন।
বিবৃতিতে আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, গণতান্ত্রিক সভ্যতার ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি কালো দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। যা মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি জঘন্যতম ঘটনা। আর আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে সেই নৃশংসতম ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের খালাস প্রদান করে নিকৃষ্টতম নজির স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে এই নারকীয় হামলা চালানো হয়েছিল। বর্বরোচিত সেই হামলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন, একটি কানের শ্রবণশক্তি চিরতরে হারিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু নারকীয় এই হামলায় ঝরে পড়েছিল নারীনেত্রী আইভি রহমান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কুদ্দুস পাটোয়ারিসহ সতেজ ২৪টি প্রাণ এবং আহত হয়েছিল সহস্রাধিক নেতাকর্মী। যারা এখনো গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে বহন করে প্রতিনয়ত মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করছে। সেদিনের ঘটনায় আমিও নির্মম ও নিষ্ঠুর আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হই। স্প্লিন্টারের দুঃসহ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি। সেই নারকীয় ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্য ও আহতদের জন্য আজ আরেকটি দুঃস্বপ্নের দিন। নিরুপায় হওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার সর্বশেষ জায়গা হলো আদালত। কিন্তু সেই আদালতকে আজ ব্যবহার করে আমাদের বিচার প্রাপ্তির পথকে রুদ্ধ করা হয়েছে। আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে আদালতের অন্তর্দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক এ সমস্ত চিহ্নিত আত্মস্বীকারোক্তি প্রদানকারী খুনিদের খালাস দেওয়া হলো। যেটা সম্পূর্ণভাবে আইনের শাসনের ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। তবে এটা এখানেই শেষ নয়। আমরা মনে করি, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ যখনই সুযোগ পাবে তখনই পুনরায় উচ্চ আদালতে যাবে। আর পাশাপাশি আমরা এই নারকীয় ঘটনায় দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার সংগ্রামে নিরন্তরভাবে লিপ্ত থাকব।