কুমিল্লায় মো. সজিব (২০) নামে এক যুবককে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসীরা। বুধবার ৪ঠা ডিসেম্বর সকালে নগরীর অশোকতলা রেলগেইট সংলগ্ন লন্ডন হাউজের পাশের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লা নগরীতে ভাড়া বাসায় থাকতেন সজিব (২০)। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের মফিজ মিয়ার ছেলে। দেবিদ্বারের স্থানীয় একটি মাদ্রাসার এইচএসসি শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি নগরীর স্বপ্ন শপিংমলে চাকরি করতেন।
পরিবার ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে বাসা থেকে ঢেকে নিয়ে যায় কয়েকটি যুবক। পরে রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে যায় তারা। গুরুতর আহত অবস্থায় রাতেই নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বুধবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে নিহত সজিবের মামাতো ভাই রাকিব বলেন, মঙ্গলবার রাতে এক যুবক সজিবকে বাসা থেকে ঢেকে নিয়ে যায়। পরে পরিকল্পিতভাবে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে মৃত ভেবে অশোকতলা রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে যায়।
খবর পেয়ে রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নগরীর মুন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে মৃত্যু হয় তার, জানান রাকিব।
প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সন্ত্রাসী নয়ন বন্ড ও তার ভাই চয়নের গ্যাং এলাকার চিন্তিত মাদক কারবারি। একাধিক মামলাও রয়েছে তাদের নামে। এলাকায় মাস্তানি, চাঁদাবাজি, মারামারি, ছিনতাই মাদকব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তারা। সজিব আওয়ামী লীগের রাজনীতি করত বলে এলাকায় নিরাপদে থাকতে হলে তার পরিবারকে চাঁদা দিতে বলা হয়েছিল। না দিলে সজিবসহ পরিবারের সব সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানান সজিব। ফলে তাকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেয় নয়ন-চয়ন গ্যাংয়ের সদস্যরা। এখন এই হত্যার ঘটনায় মামলা করলে সজিবের ছোট ভাইদেরও সর্বনাশ করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। দুপুরে হাসপাতাল থেকে সজিবের লাশ নিয়ে দ্রুত অশোকতলা থেকে গ্রামে চলে যেতে বলা হয়। এলাকায় যেন তাদের দেখা না যায়, সেই হুমকি দিয়েছে সন্ত্রাসীরা বাসায় গিয়ে।
স্থানীয়রা জানান, নয়ন-চয়নের গ্যাং স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। ৫ আগস্টের পর থেকে তারা এলাকার দোকানপাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছে।
তবে এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করেও সজিবের পরিবারের কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। সজিবের বড় বোন সনিয়া আক্তার বলেন, আমরা কিছু বলতে পারব না।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, নিহত সজিবের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করব, বলে জানান ওসি।