বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে- এমন দাবিতে ব্রিটেনের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্টকে চিঠি লিখেছিল ভারতের একটি সংস্থা। তাদের চিঠির জবাবে ক্যাথরিন জানিয়েছেন, তাঁর দেশ চায়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করুক জাতিসংঘ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ মন্ত্রী দিল্লিভিত্তিক অধিকার সংগঠন রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালাইসিস গ্রুপকে (আরআরএজি) আশ্বস্ত করেছেন যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের তদন্তে যুক্তরাজ্য সমর্থন দেবে।
ক্যাথরিন ওয়েস্ট বাংলাদেশ সফর করেন গত ১৬-১৭ নভেম্বর। তার আগেই তাঁর কাছে চিঠি লিখেছিল আরআরএজি। সে সময় লেখা চিঠিতে সংস্থাটি তাঁর কাছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানায়। সংগঠনটি বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি, আদিবাসী জনগণ ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়গুলো তুলে ধরে এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের একটি কার্যালয় স্থাপনের দাবি সমর্থনের আহ্বান জানায়।
ক্যাথরিন ওয়েস্ট আরআরএজির সেই চিঠির জবাব দেন গত ৪ ডিসেম্বর। তিনি জানান, বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে শান্তিপূর্ণ অগ্রগতি, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ এই মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা চিহ্নিত করতে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তথ্য-উদ্ধার মিশন পরিচালনার উদ্যোগকে সমর্থন করে।
আরআরএজি জানিয়েছে, চলতি বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২ লাখ ৭১ হাজার ৫৮৭ জনের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া, ৭৪ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এই সময়ে আদিবাসীদের ওপর হামলা হয়েছে, যাতে অন্তত চারজন আদিবাসী নিহত ও অন্তত ৭৫ জন জুম্মা আদিবাসী আহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে ১ অক্টোবর থেকে ১৪২টি বাড়ি, দোকান এবং বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর ২ হাজারের বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই।
আরআরএজি মিসেস ওয়েস্টকে অনুরোধ করেছে, তিনি যেন বাংলাদেশ সরকারকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারকে স্থানীয় কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিতে এবং ২০ আগস্ট পরবর্তী ঘটনাগুলোকেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের আওতায় আনতে আহ্বান জানান।